মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৭ জানুয়ারি

বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন

বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং দফতরের পুনর্গঠন কাজ পরীক্ষা করে দেখার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি প্রশাসন ব্যবস্থাকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার অনুকূল পরামর্শ ও রিপোর্ট প্রদান করবেন। প্রসঙ্গক্রমে হুবহু ও ভিন্ন প্রকৃতির না হলেও বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তির বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। শনিবার আওয়ামী লীগ অফিসে আয়োজিত এক কর্মী সমাবেশে বঙ্গবন্ধু দলীয় সদস্যদের প্রতি মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিন্তে কাজ করতে দেয়ার এবং তদ্বির হতে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পূর্বেই বলা হয়েছে আপাতত দৃষ্টিতে দুটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন। কিন্তু তবু ও এই দুইয়ের মধ্যে কোথায় যেন একটা যোগসূত্র রয়েছে। অতীতে তদ্বিরের প্রভাবে অনেক সময় প্রশাসন ব্যবস্তায় শেষ পর্যন্ত ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গঠন কাঠামো কি হবে এবং কোথায় কাকে বসালে প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও স্বাধীন দেশের উপযোগী তা একান্তভাবেই প্রশাসনিক প্রশ্ন। কোনো পন্থা অনুসরণ করলে প্রশাসন মাথা ভারী না হয়ে সুষ্ঠু হয়, তা নির্ধারণ করতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং সে সঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে। তবে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ইতিপূর্বে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থাকবে না’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সার্থক বাস্তবায়ন সবারই কাম্য। অতীতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অনেক অঘটন ঘটিয়েছে। আমলাদের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিজেদের জনগণের সেবক মনে করা তো দূরের কথা, ভেবেছেন দেশের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে। ক্রমে ক্রমে প্রশাসন যন্ত্রে মরিচা ধরে প্রায় বিকল হয়ে পরার উপক্রম হয়েছে। ‘দক্ষিণা’ ছাড়া কোনো কার্যোদ্ধার হয়েছে প্রায় অসম্ভব। প্রশাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠনকালে অতীতের সেসব তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয় যেমন মনে রাখা আবশ্যক, তেমনি প্রয়োজন টাউটের দৌরাত্ম্য যাতে কোনো ক্রমে মাথাচারা দিয়ে উঠতে সক্ষম না হয়, তা নিশ্চিত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের আজ জাতীয় অর্থনীতিসহ সবকিছুর পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের পথ ততটাই সহজ ও দ্রুততর হবে, যতটা সুষ্ঠু হবে প্রশাসনিক পুনর্গঠন। “ছাগল দিয়ে ক্ষেত মই দেওয়া চলে না”- এই গ্রাম্য প্রবাদ বাক্যটি যেমন সত্য, তেমনি আন্তরিকতাহীন ব্যক্তির দ্বারা কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে না, তাও কম সত্য নয়। তাই এই প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো :

বিগত দিনের আমলাদের পুনরাবির্ভাব যাতে না ঘটে এবং যাতে লাল-ফিতা ও টাউটদের দৌরাত্ম্য সৃষ্টি হতে না পারে সেই দিকে দৃষ্টি রেখে কমিটিকে তার গুরুভার দায়িত্ব সম্পাদন করতে হবে। এ কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, অনেক করুণ অভিজ্ঞতায় মানুষ আজ একটি নতুন আশায় নতুন সমাজ গঠনে উন্মুখ। তার সে উন্মুখ বাসনা যেন কোনো কারণে বিফলে না যায়।

২৫ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে শরণার্থী এবং অন্যান্য ছিন্নমূল অধিবাসীদের আশু রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩০ কোটি টাকার একটি কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। জাতীয় পতাকার নকশাও অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন এবং এই কমিটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল রূপে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান হবেন। কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্য হবেন : অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং যোগাযোগমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরও একজন বা দুজন সদস্য গ্রহণ করতে পারবেন। মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ হতে পাট রপ্তানির ওপর শুল্ক ধার্যেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল : ‘এনা’ পরিবেশিত খবরে বলা হয় : জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের পূর্বে সকল নীতি ও পরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য দায়ী থাকবে। কাউন্সিলের কয়েকটি প্রধান কাজ হবে নিম্নরূপ : পাঁচসালা পরিকল্পনা অনুমোদন, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং দুই কোটি টাকার অধিক ব্যয় সাপেক্ষ সকল কর্মসূচি অনুমোদন, পরিকল্পনায় পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থা করা এবং পরিকল্পনা কমিশনের ভিত্তিতে আর্থিকনীতি অনুমোদন। মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করাও কাউন্সিলের অন্যতম কাজ হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভূমি রাজস্বের সঙ্গে দেয়া সকল প্রকার ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ভূমির রাজস্ব মওকুফের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার পরিপূরক রূপে এবং মুক্তিযুদ্ধে কৃষক সমাজের বীরত্বপূর্ণ অবদানের বিষয় বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বঙ্গবন্ধুর বাণী

ভারতের ২৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তির আদর্শবাদের দিকে ভারতের অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, পারস্পরিক কল্যাণের জন্য উভয় দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে বলেন : “ভারতের ২৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসে আপনি এবং তৎসঙ্গে ভারতের জনসাধারণের সঙ্গে আমি আমাদের আন্তরিক ও ভ্রাতৃত্বমূলক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার নেতৃত্বে ভারতীয় জনগণের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি। ভারতের প্রজাতন্ত্র। দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকার জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমার বিশিষ্ট কেবিনেট সহযোগী জনাব তাজউদ্দীন আহমদকে প্রেরণ করছি। শেখ সাহেব তার বাণীতে আরও বলেন : আমি আপনার সুখ ও স্বাস্থ্য এবং ভারতীয় জনগণের অব্যাহত সমৃদ্ধি কামনা করছি। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ব্রিটেনের রানী এবং প্রধানমন্ত্রী হীথও শুভেচ্ছা বাণী জ্ঞাপন করেন। ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেসও একটি বাণী প্রেরণ করে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০ , ১২ মাঘ ১৪২৬, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৭ জানুয়ারি

বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন

বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং দফতরের পুনর্গঠন কাজ পরীক্ষা করে দেখার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি প্রশাসন ব্যবস্থাকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার অনুকূল পরামর্শ ও রিপোর্ট প্রদান করবেন। প্রসঙ্গক্রমে হুবহু ও ভিন্ন প্রকৃতির না হলেও বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তির বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। শনিবার আওয়ামী লীগ অফিসে আয়োজিত এক কর্মী সমাবেশে বঙ্গবন্ধু দলীয় সদস্যদের প্রতি মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিন্তে কাজ করতে দেয়ার এবং তদ্বির হতে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পূর্বেই বলা হয়েছে আপাতত দৃষ্টিতে দুটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন। কিন্তু তবু ও এই দুইয়ের মধ্যে কোথায় যেন একটা যোগসূত্র রয়েছে। অতীতে তদ্বিরের প্রভাবে অনেক সময় প্রশাসন ব্যবস্তায় শেষ পর্যন্ত ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গঠন কাঠামো কি হবে এবং কোথায় কাকে বসালে প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও স্বাধীন দেশের উপযোগী তা একান্তভাবেই প্রশাসনিক প্রশ্ন। কোনো পন্থা অনুসরণ করলে প্রশাসন মাথা ভারী না হয়ে সুষ্ঠু হয়, তা নির্ধারণ করতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং সে সঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে। তবে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ইতিপূর্বে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থাকবে না’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সার্থক বাস্তবায়ন সবারই কাম্য। অতীতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অনেক অঘটন ঘটিয়েছে। আমলাদের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিজেদের জনগণের সেবক মনে করা তো দূরের কথা, ভেবেছেন দেশের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে। ক্রমে ক্রমে প্রশাসন যন্ত্রে মরিচা ধরে প্রায় বিকল হয়ে পরার উপক্রম হয়েছে। ‘দক্ষিণা’ ছাড়া কোনো কার্যোদ্ধার হয়েছে প্রায় অসম্ভব। প্রশাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠনকালে অতীতের সেসব তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয় যেমন মনে রাখা আবশ্যক, তেমনি প্রয়োজন টাউটের দৌরাত্ম্য যাতে কোনো ক্রমে মাথাচারা দিয়ে উঠতে সক্ষম না হয়, তা নিশ্চিত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের আজ জাতীয় অর্থনীতিসহ সবকিছুর পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের পথ ততটাই সহজ ও দ্রুততর হবে, যতটা সুষ্ঠু হবে প্রশাসনিক পুনর্গঠন। “ছাগল দিয়ে ক্ষেত মই দেওয়া চলে না”- এই গ্রাম্য প্রবাদ বাক্যটি যেমন সত্য, তেমনি আন্তরিকতাহীন ব্যক্তির দ্বারা কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে না, তাও কম সত্য নয়। তাই এই প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো :

বিগত দিনের আমলাদের পুনরাবির্ভাব যাতে না ঘটে এবং যাতে লাল-ফিতা ও টাউটদের দৌরাত্ম্য সৃষ্টি হতে না পারে সেই দিকে দৃষ্টি রেখে কমিটিকে তার গুরুভার দায়িত্ব সম্পাদন করতে হবে। এ কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, অনেক করুণ অভিজ্ঞতায় মানুষ আজ একটি নতুন আশায় নতুন সমাজ গঠনে উন্মুখ। তার সে উন্মুখ বাসনা যেন কোনো কারণে বিফলে না যায়।

২৫ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে শরণার্থী এবং অন্যান্য ছিন্নমূল অধিবাসীদের আশু রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩০ কোটি টাকার একটি কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। জাতীয় পতাকার নকশাও অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন এবং এই কমিটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল রূপে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান হবেন। কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্য হবেন : অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং যোগাযোগমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরও একজন বা দুজন সদস্য গ্রহণ করতে পারবেন। মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ হতে পাট রপ্তানির ওপর শুল্ক ধার্যেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল : ‘এনা’ পরিবেশিত খবরে বলা হয় : জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের পূর্বে সকল নীতি ও পরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য দায়ী থাকবে। কাউন্সিলের কয়েকটি প্রধান কাজ হবে নিম্নরূপ : পাঁচসালা পরিকল্পনা অনুমোদন, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং দুই কোটি টাকার অধিক ব্যয় সাপেক্ষ সকল কর্মসূচি অনুমোদন, পরিকল্পনায় পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থা করা এবং পরিকল্পনা কমিশনের ভিত্তিতে আর্থিকনীতি অনুমোদন। মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করাও কাউন্সিলের অন্যতম কাজ হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভূমি রাজস্বের সঙ্গে দেয়া সকল প্রকার ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ভূমির রাজস্ব মওকুফের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার পরিপূরক রূপে এবং মুক্তিযুদ্ধে কৃষক সমাজের বীরত্বপূর্ণ অবদানের বিষয় বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বঙ্গবন্ধুর বাণী

ভারতের ২৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তির আদর্শবাদের দিকে ভারতের অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, পারস্পরিক কল্যাণের জন্য উভয় দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে বলেন : “ভারতের ২৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসে আপনি এবং তৎসঙ্গে ভারতের জনসাধারণের সঙ্গে আমি আমাদের আন্তরিক ও ভ্রাতৃত্বমূলক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার নেতৃত্বে ভারতীয় জনগণের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি। ভারতের প্রজাতন্ত্র। দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকার জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমার বিশিষ্ট কেবিনেট সহযোগী জনাব তাজউদ্দীন আহমদকে প্রেরণ করছি। শেখ সাহেব তার বাণীতে আরও বলেন : আমি আপনার সুখ ও স্বাস্থ্য এবং ভারতীয় জনগণের অব্যাহত সমৃদ্ধি কামনা করছি। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ব্রিটেনের রানী এবং প্রধানমন্ত্রী হীথও শুভেচ্ছা বাণী জ্ঞাপন করেন। ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেসও একটি বাণী প্রেরণ করে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২