দেশের প্রথম সিসি ক্যামেরায় নজরবন্দি তিলকপুর গ্রাম

চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিংসহ নানান অনৈতিক কাজ থেকে গ্রামকে মুক্ত রাখতে মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে যুবসমাজ। পাবনার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামটিই দেশের সর্ব প্রথম সিসি ক্যামেরার আওতার গ্রাম বলে এলাকাবসীর দাবি। গ্রামের যুব সমাজের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন।

প্রতিটি গ্রামকে আধুনিকিকরণের পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের আর এই কাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে পাবনার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের মানুষ। গ্রামকে আধুনিকরণ ও নিরাপত্তা স্বার্থে তিলোকপুর গ্রামে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে এলাকার যুবসমাজ। পাবনা সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত ঈশ^রদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম তিলকপুর। পাবনা শহর থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরের এই গ্রামটি সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা। ৭ কিলোমিটারের তিলোকপুর গ্রামে ২৫০০ পরিবারের বসতি। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৪০০। রয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুটি মাদরাসা। গ্রামের শান্তি প্রিয় মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক বিক্রতাসহ বখাটেদের উপদ্রবে অতিষ্টি। প্রতিরাতেই ছোট বড় চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিকার পাবার সুযোগ কম। আবার রাতে রাস্তায় ছিনতাইকারী ও মাদক বিক্রেতাদের উপদ্রপ।

স্কুল কলেজ পড়–য়া মেয়েদের বখাটে যুবকদের হাতে হয়রানির শিকার। দিন দিন শান্ত গ্রামটিকে অশান্ত করে তুলে ছিল কিছু বখাটে। এরই এক পর্যায় ধর্মীয় অনুশাসন, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে জেগে উঠে এলাকার মানুষ। নিজেদের নিরাপত্তা ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে উদ্যোগী হন তিলোকপুর কেন্দ্রীয় হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রিক এলাকার যুব সমাজ। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অর্থায়নেই স্থাপন করেন সিসি ক্যামেরা। গ্রামের ৭ কি.মি. এলাকায় চতুর পাশে তিনটি ভাগে ভাগ করে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসানো হয়েছে তিলোকপুর কেন্দ্রীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরো গ্রামে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কাজের আর্থিক সহায়তা করেন গ্রামের প্রবাসী যুবকেরা। দেশের বাহিরে থেকে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন তারা। শুধু তাদের অর্থই নয় গ্রামের সকলে মিলে এই ভাল কাজের সহায়তা করেন বলে জানা গেছে।

সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মূল উদ্যোগতা এ্যাড. শাহীন রানা মাসুম নামের এক যুবক। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে গ্রামে এসে দেখি গ্রামের সাধারণ মানুষ কতিপয় দুষ্কৃতিকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। এলাকার শান্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন গ্রামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কেনা বেচা সহ নানা অনৈতিক কাজের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রামের প্রায় ২০০ যুবকদের নিয়ে বৈঠক করে এলাকায় একটি আধুনিক হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে পুরো গ্রামটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করি কিছুদিনের মধ্যে আর্থিক বাজেট করে আমরা ক্যামেরা স্থাপন করেছি। গ্রামের প্রত্যেকটা পরিবার আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে গ্রামের প্রবাসী যুবকদের আর্থিক সহযোগিতা আমাদের কাজকে সহজ করেছে। এলাকার মানুষ মনে করে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্যদিয়ে আর কেউ অন্যায় কাজ করতে সাহস পাবেনা। গ্রামের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা থাকায় অন্যায়কারীদের চিন্তা করতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে তাদের অন্যায়ের সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরতে পারব।

সাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিনহাজ ফকির বলেন, তিলকপুর গ্রাম বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই এলাকায় চতুরপাশদিয়ে প্রবেশ করা যায়। মাদকসহ চুরির ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি সামাজিক ভাবে এ্র প্রতিকার করার। অনেক সময় প্রমানের অভাবে মূল হুতারা অন্যায় কাজ করেও বেঁচে যায়। তবে এই গ্রামের বেশ শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। তারা একত্রিত হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব। ভাল কাজের সাথে আমরা আছি। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রমের একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। উল্লেখ্য গ্রামটি পাবনা এবং ঈশ্বরদী উপজেলার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত।

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

দেশের প্রথম সিসি ক্যামেরায় নজরবন্দি তিলকপুর গ্রাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

image

পাবনা : পাবনার তিলকপুর গ্রামের মোড়ে মোড়ে এভাবেই স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা -সংবাদ

চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিংসহ নানান অনৈতিক কাজ থেকে গ্রামকে মুক্ত রাখতে মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে যুবসমাজ। পাবনার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামটিই দেশের সর্ব প্রথম সিসি ক্যামেরার আওতার গ্রাম বলে এলাকাবসীর দাবি। গ্রামের যুব সমাজের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন।

প্রতিটি গ্রামকে আধুনিকিকরণের পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের আর এই কাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে পাবনার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের মানুষ। গ্রামকে আধুনিকরণ ও নিরাপত্তা স্বার্থে তিলোকপুর গ্রামে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে এলাকার যুবসমাজ। পাবনা সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত ঈশ^রদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম তিলকপুর। পাবনা শহর থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরের এই গ্রামটি সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা। ৭ কিলোমিটারের তিলোকপুর গ্রামে ২৫০০ পরিবারের বসতি। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৪০০। রয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুটি মাদরাসা। গ্রামের শান্তি প্রিয় মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক বিক্রতাসহ বখাটেদের উপদ্রবে অতিষ্টি। প্রতিরাতেই ছোট বড় চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিকার পাবার সুযোগ কম। আবার রাতে রাস্তায় ছিনতাইকারী ও মাদক বিক্রেতাদের উপদ্রপ।

স্কুল কলেজ পড়–য়া মেয়েদের বখাটে যুবকদের হাতে হয়রানির শিকার। দিন দিন শান্ত গ্রামটিকে অশান্ত করে তুলে ছিল কিছু বখাটে। এরই এক পর্যায় ধর্মীয় অনুশাসন, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে জেগে উঠে এলাকার মানুষ। নিজেদের নিরাপত্তা ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে উদ্যোগী হন তিলোকপুর কেন্দ্রীয় হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রিক এলাকার যুব সমাজ। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অর্থায়নেই স্থাপন করেন সিসি ক্যামেরা। গ্রামের ৭ কি.মি. এলাকায় চতুর পাশে তিনটি ভাগে ভাগ করে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসানো হয়েছে তিলোকপুর কেন্দ্রীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরো গ্রামে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কাজের আর্থিক সহায়তা করেন গ্রামের প্রবাসী যুবকেরা। দেশের বাহিরে থেকে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন তারা। শুধু তাদের অর্থই নয় গ্রামের সকলে মিলে এই ভাল কাজের সহায়তা করেন বলে জানা গেছে।

সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মূল উদ্যোগতা এ্যাড. শাহীন রানা মাসুম নামের এক যুবক। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে গ্রামে এসে দেখি গ্রামের সাধারণ মানুষ কতিপয় দুষ্কৃতিকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। এলাকার শান্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন গ্রামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কেনা বেচা সহ নানা অনৈতিক কাজের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রামের প্রায় ২০০ যুবকদের নিয়ে বৈঠক করে এলাকায় একটি আধুনিক হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে পুরো গ্রামটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করি কিছুদিনের মধ্যে আর্থিক বাজেট করে আমরা ক্যামেরা স্থাপন করেছি। গ্রামের প্রত্যেকটা পরিবার আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে গ্রামের প্রবাসী যুবকদের আর্থিক সহযোগিতা আমাদের কাজকে সহজ করেছে। এলাকার মানুষ মনে করে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্যদিয়ে আর কেউ অন্যায় কাজ করতে সাহস পাবেনা। গ্রামের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা থাকায় অন্যায়কারীদের চিন্তা করতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে তাদের অন্যায়ের সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরতে পারব।

সাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিনহাজ ফকির বলেন, তিলকপুর গ্রাম বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই এলাকায় চতুরপাশদিয়ে প্রবেশ করা যায়। মাদকসহ চুরির ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি সামাজিক ভাবে এ্র প্রতিকার করার। অনেক সময় প্রমানের অভাবে মূল হুতারা অন্যায় কাজ করেও বেঁচে যায়। তবে এই গ্রামের বেশ শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। তারা একত্রিত হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব। ভাল কাজের সাথে আমরা আছি। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রমের একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। উল্লেখ্য গ্রামটি পাবনা এবং ঈশ্বরদী উপজেলার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত।