বিতর্কিত যুবলীগ নেতা এবং টেন্ডার নিয়ন্ত্রক গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জিকে শামীম) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আবাসন ব্যবসায়ী দ্য ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড আর্টিটেক্টস লিমিটেডের এমডি শেখ মোমতাহিদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । গতকাল সকাল থেকে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদক সূত্র জানায়, আবাসন ব্যবসায়ী শেখ মোমতাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজে অংশিদার হওয়াও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জিকে শামীমের সঙ্গে অনেক প্রকল্পে জড়িত সে। যেহেতু জিকে শামীম সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সরকারি প্রকল্পের কাজ হাতিয়ে নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন এসব অপকর্মের সঙ্গে শেখ মোমতাহিদুর রহমানও জড়িত।
১৯ জানুয়ারি মোমতাহিদুর রহমানকে তলব করে নোটিশ পাঠায় দুদক। নোটিশে বলা হয়, জিকে শামীমসহ অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শ’ শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শ’ শ’ কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। একই ঘটনায় বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলামকে তলব করা হলেও তিনি দুদকে হাজির হননি।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেফতার করা হয় কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জিকে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী, তার সহযোগী এনামুল হক, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ও তারেকুজ্জামান রাজীব। গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ওঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোজে মাঠে নামে দুদক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দু’জনকে দলে যুক্ত করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন সংস্থার উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করেছে দুদক।
সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
বিতর্কিত যুবলীগ নেতা এবং টেন্ডার নিয়ন্ত্রক গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জিকে শামীম) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আবাসন ব্যবসায়ী দ্য ইঞ্জিনিয়ারর্স অ্যান্ড আর্টিটেক্টস লিমিটেডের এমডি শেখ মোমতাহিদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । গতকাল সকাল থেকে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদক সূত্র জানায়, আবাসন ব্যবসায়ী শেখ মোমতাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজে অংশিদার হওয়াও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জিকে শামীমের সঙ্গে অনেক প্রকল্পে জড়িত সে। যেহেতু জিকে শামীম সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সরকারি প্রকল্পের কাজ হাতিয়ে নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন এসব অপকর্মের সঙ্গে শেখ মোমতাহিদুর রহমানও জড়িত।
১৯ জানুয়ারি মোমতাহিদুর রহমানকে তলব করে নোটিশ পাঠায় দুদক। নোটিশে বলা হয়, জিকে শামীমসহ অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শ’ শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শ’ শ’ কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। একই ঘটনায় বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলামকে তলব করা হলেও তিনি দুদকে হাজির হননি।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেফতার করা হয় কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জিকে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী, তার সহযোগী এনামুল হক, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ও তারেকুজ্জামান রাজীব। গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ওঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোজে মাঠে নামে দুদক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দু’জনকে দলে যুক্ত করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন সংস্থার উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করেছে দুদক।