শত কোটি টাকার মালিক পাগলা মিজান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান গত ১০ বছরে অন্তত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে পাগলা মিজান দেশ-বিদেশে যে সম্পদ গড়েছেন তার তথ্য দিতে শুরু করেছেন।

গতকাল অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অন্যতম আসামি পাগলা মিজান। গতকাল তাকে রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জনের ওই মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ায় গতকাল পাগলা মিজানকে দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। গত ২ জানুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে পাগলা মিজানকে রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি জায়গা দখল, নানাভাবে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিদেশে পাচার করা অর্থ এবং অবৈধ অর্থে গড়া সম্পদের বিষয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলায় তার যে সম্পদের তথ্য রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে পাগলা মিজান দেশ-বিদেশে যে সম্পদ গড়েছেন তার তথ্য দিতে শুরু করেছেন। তবে গতকাল প্রথম দিনে সে যেসব সম্পদের তথ্য দিয়েছেন তা কত টাকা মূল্যের হবে এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। গত ১০ বছরে কমপক্ষে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন পাগলা মিজান। দেশে ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে তার সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার তার বাড়িও রয়েছে। এছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকও। এসব সম্পদের আয়ের উৎস কি ছিলো, কবে কিভাবে এসব সম্পদ অর্জন করা হয়েছে এসব বিষয়ে তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ৬ নভেম্বর ডিএনসিসির ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন। মামলায় মিজানের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন অভিযোগ আনা হয়েছে। পাগলা মিজানের সম্পদ : মামলায় হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের সম্পত্তির বিষয়ে বলা হয়, তিনি মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বসিলার ৩০ কাঠা জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এ মার্কেটের আশপাশে ৪৮২ কাঠা জমি দখল করে ২০টি টিনের দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন কাউন্সিলর মিজান। মিজান লালমাটিয়া বি ব্লকে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ‘স্বপ্নপুরি হাউজিং’ গড়ে তুলেছেন। একই এলাকায় ১০ কাঠা জমিতে ‘পপুলার অর্কিড’ নামে ছয় তলা ভবন, পাশে ১০ কাঠা জমিতে ‘ইমপেরিয়াল গার্ডেন’ নামে ছয় তলা ভবন, ১০ কাঠা জমিতে দুই ইউনিট বিশিষ্ট ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে, ‘স্বপ্নপুরী হাউজিং কমপ্লেক্সে’ এর ২ হাজার গজ দূরে ১৫ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন সাত তলা ‘আড়ং মার্ট’ ভবনের মালিক মিজান বলে এহাজারে বলা হয়। এসব ভবনে নির্মাণে তিনি ১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

কাউন্সিলর পাগলা মিজানকে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম গত ১১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন এবং নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীমঙ্গলে এবং অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অর্থপাচার আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে তাকে নিয়ে তার বাসা-অফিসে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। বাসা থেকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক, ১ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হাবিবুর রহমান মিজান যখন পাগলা মিজান নামে পরিচিত ছিল তখন মিরপুরে একটি হোটেলে বয় হিসেবে কাজ করতেন। এরপর ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী হিসেবে তার কর্মকা- শুরু। বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন। ১৯৯৪ সালে অভিবিক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ড (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ৩২নং ওয়ার্ড) কমিশনার হন। বর্তমানে তিনি ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে বেপরোয় হন মিজান। মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক তিনি। দলের আগামী কাউন্সিলকে ঘিরে তিনি এখন আওয়ামী লীগের বড় পদের জন্য লবিং করেছিলেন। অথচ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। মোহাম্মদপুর এলাকার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আদমেদ গাইন ও তার স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করে পাগলা মিজানের বাহিনী। ওই সময় মিজান মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে সাভারে জোড়া খুনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জমিদখল, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় তার কয়েককোটি টাকা মূল্যের বাড়ি রয়েছে। তিনি নিজেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন পাগলা মিজান। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস নিয়ন্ত্রণে রেখে চাঁদাবাজি করতেন। বাবর রোড দখলে নিয়ে বাজার নির্মাণ, শ্যামলী মাঠ দখল করে বাজার নির্মাণ করেন। মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে ডিশ ব্যবসায়ী শরীফ হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন পাগলা মিজান। সজলও হিমেল হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি। শ্যামলী শাহী মসজিদের জায়গা দখল করেছেন এ পাগলা মিজান। একাধিক বাড়ি দখল, মেহেদী কমিউনিটি সেন্টার দখল, বেরিবাঁধ খ্রিস্টানপল্লী দখল, শের শাহ সুরী রোডে এক বিধবার বাড়ি, বাবর রোডে তাহের নামে এক ব্যক্তির বাড়িসহ মোহাম্মদপুর- আদাবর এলাকায় দখল করেছেন তিনি। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার আস্তানা গড়ে তুলেছেন। ১৯৮৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দ্যেশে ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা যে হামলা করেছিল ওই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুর রহমান মিজান। ক্ষমতার পালাবদলের স্রোতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আসার পর বোল পাল্টে হাবিবুর রহমান মিজান নামে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে ফ্রিডম মিজান অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, জমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১০ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান হাবিবুর রহমান মিজান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে বাড়িও করেছেন।

আরও খবর
সাধারণ জনগণের উন্নতি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত : প্রধানমন্ত্রী
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রপতি
বিএনপি চোরাপথে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে কাদের
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে দুদক চেয়ারম্যান
ভারতীয় হাইকমিশনের ঢাকায় ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন
নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে শিশুসহ নিহত ২
এপ্রিল থেকে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে বাণিজ্যমন্ত্রী
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার নীতিমালা ২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত
ই-পাসপোর্টের জন্য তিন দিনে দু’হাজার আবেদন
ব্যবসায়ী মোমতাহিদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ
সংবাদপত্রের ওয়েজবোর্ড নিয়ে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ
‘মহাকবি মধুসূদন পদক’ পেলেন কবি অনীক মাহমুদ
প্রদর্শনীসহ ৪টি কর্মশালা আজ
ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণ দিবস আজ
অপহৃত আইনজীবীর ছেলে-শ্যালক উদ্ধার
পুলিশ-পাথর শ্রমিক সংঘর্ষ নিহত ১

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

দশ বছরে

শত কোটি টাকার মালিক পাগলা মিজান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান গত ১০ বছরে অন্তত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে পাগলা মিজান দেশ-বিদেশে যে সম্পদ গড়েছেন তার তথ্য দিতে শুরু করেছেন।

গতকাল অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অন্যতম আসামি পাগলা মিজান। গতকাল তাকে রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জনের ওই মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ায় গতকাল পাগলা মিজানকে দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। গত ২ জানুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে পাগলা মিজানকে রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় দুদক কার্যালয়ে আনা হয়। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি জায়গা দখল, নানাভাবে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিদেশে পাচার করা অর্থ এবং অবৈধ অর্থে গড়া সম্পদের বিষয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলায় তার যে সম্পদের তথ্য রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনে পাগলা মিজান দেশ-বিদেশে যে সম্পদ গড়েছেন তার তথ্য দিতে শুরু করেছেন। তবে গতকাল প্রথম দিনে সে যেসব সম্পদের তথ্য দিয়েছেন তা কত টাকা মূল্যের হবে এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। গত ১০ বছরে কমপক্ষে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন পাগলা মিজান। দেশে ছাড়াও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে তার সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার তার বাড়িও রয়েছে। এছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকও। এসব সম্পদের আয়ের উৎস কি ছিলো, কবে কিভাবে এসব সম্পদ অর্জন করা হয়েছে এসব বিষয়ে তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ৬ নভেম্বর ডিএনসিসির ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন। মামলায় মিজানের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন অভিযোগ আনা হয়েছে। পাগলা মিজানের সম্পদ : মামলায় হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের সম্পত্তির বিষয়ে বলা হয়, তিনি মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বসিলার ৩০ কাঠা জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এ মার্কেটের আশপাশে ৪৮২ কাঠা জমি দখল করে ২০টি টিনের দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন কাউন্সিলর মিজান। মিজান লালমাটিয়া বি ব্লকে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ‘স্বপ্নপুরি হাউজিং’ গড়ে তুলেছেন। একই এলাকায় ১০ কাঠা জমিতে ‘পপুলার অর্কিড’ নামে ছয় তলা ভবন, পাশে ১০ কাঠা জমিতে ‘ইমপেরিয়াল গার্ডেন’ নামে ছয় তলা ভবন, ১০ কাঠা জমিতে দুই ইউনিট বিশিষ্ট ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে, ‘স্বপ্নপুরী হাউজিং কমপ্লেক্সে’ এর ২ হাজার গজ দূরে ১৫ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন সাত তলা ‘আড়ং মার্ট’ ভবনের মালিক মিজান বলে এহাজারে বলা হয়। এসব ভবনে নির্মাণে তিনি ১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

কাউন্সিলর পাগলা মিজানকে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম গত ১১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন এবং নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীমঙ্গলে এবং অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অর্থপাচার আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে তাকে নিয়ে তার বাসা-অফিসে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। বাসা থেকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক, ১ কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হাবিবুর রহমান মিজান যখন পাগলা মিজান নামে পরিচিত ছিল তখন মিরপুরে একটি হোটেলে বয় হিসেবে কাজ করতেন। এরপর ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী হিসেবে তার কর্মকা- শুরু। বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন। ১৯৯৪ সালে অভিবিক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ড (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ৩২নং ওয়ার্ড) কমিশনার হন। বর্তমানে তিনি ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে বেপরোয় হন মিজান। মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক তিনি। দলের আগামী কাউন্সিলকে ঘিরে তিনি এখন আওয়ামী লীগের বড় পদের জন্য লবিং করেছিলেন। অথচ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। মোহাম্মদপুর এলাকার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আদমেদ গাইন ও তার স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করে পাগলা মিজানের বাহিনী। ওই সময় মিজান মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে সাভারে জোড়া খুনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জমিদখল, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় তার কয়েককোটি টাকা মূল্যের বাড়ি রয়েছে। তিনি নিজেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন পাগলা মিজান। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস নিয়ন্ত্রণে রেখে চাঁদাবাজি করতেন। বাবর রোড দখলে নিয়ে বাজার নির্মাণ, শ্যামলী মাঠ দখল করে বাজার নির্মাণ করেন। মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে ডিশ ব্যবসায়ী শরীফ হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন পাগলা মিজান। সজলও হিমেল হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি। শ্যামলী শাহী মসজিদের জায়গা দখল করেছেন এ পাগলা মিজান। একাধিক বাড়ি দখল, মেহেদী কমিউনিটি সেন্টার দখল, বেরিবাঁধ খ্রিস্টানপল্লী দখল, শের শাহ সুরী রোডে এক বিধবার বাড়ি, বাবর রোডে তাহের নামে এক ব্যক্তির বাড়িসহ মোহাম্মদপুর- আদাবর এলাকায় দখল করেছেন তিনি। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার আস্তানা গড়ে তুলেছেন। ১৯৮৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দ্যেশে ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা যে হামলা করেছিল ওই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুর রহমান মিজান। ক্ষমতার পালাবদলের স্রোতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আসার পর বোল পাল্টে হাবিবুর রহমান মিজান নামে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে ফ্রিডম মিজান অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, জমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১০ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান হাবিবুর রহমান মিজান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে বাড়িও করেছেন।