আচরণবিধির কঠোর প্রয়োগ ঘটান

বাংলাদেশে নির্বাচনকে উৎসবে রূপ দেয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে উৎসব যাতে লাগামছাড়া না হয়, সে জন্যই আচরণবিধি দিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সেই আচরণবিধি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। রাজধানীর সর্বত্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রাকে শব্দযন্ত্র বসিয়ে দিনভর উচ্চশব্দে গানের তালে ভোট চাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই এখন ‘আপদ’ ঠেকছে। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাসনালয়, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়- কিছুই মানছে না এই প্রচারযন্ত্রগুলো।

এমন ঘটনা হয়ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিস্ময়কর নয়, কিন্তু উদ্বেগজনক হলো নির্বাচন কমিশনের চুপচাপ থাকা। এ বিষয়ে ইসির নির্বিকার ভূমিকা আমাদের হতাশও করেছে। সারা দিন উচ্চশব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। লেখাপড়া বিঘি্নত হচ্ছে, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে। এ নিয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়ায় ‘ঘাটতি’ রয়েছে বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারাও। ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন মেয়র প্রার্থীরা। অথচ আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। ইসির কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ক্ষমতা নিয়ে বসে থেকেও কমিশন কেন চুপচাপ তা একটি প্রশ্ন।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়াদি তদন্ত করা। তদন্ত করে এটার সত্যতা পেলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা। এর বাইরে আর কিছু নেই। কিন্তু অভিযোগ উঠবে আর এর নিষ্পত্তি হবে না কিংবা তদন্ত হবে না- এটা আশাপ্রদ নয়, কাম্যও নয়।

নির্বাচনে আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী যেসব আইনকানুন আছে তা নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী, রাজনৈতিক দল সবাইকে মানতে হবে। আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠা মাত্রই নির্বাচন কমিশনকে তদন্ত করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা যদি যথার্থভাবে করা হয়, তাহলে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার সুযোগ আর বেশি থাকবে না।

প্রতিটি পর্যায়েই ইসিকে কঠোরভাবে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে, যাতে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়। যারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা সবাই নগর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনেরও এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়দায়িত্ব রয়েছে। তাই পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার যাতে জনগণের কষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।

প্রত্যাশা থাকবে, দলমত-নির্বিশেষে যে ব্যক্তিই আচরণবিধি লঙ্ঘন করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও সব রাগ-অনুরাগ বা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- সে কথা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নন, প্রার্থী ও দলগুলোকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

এখনো সময় আছে

আচরণবিধির কঠোর প্রয়োগ ঘটান

বাংলাদেশে নির্বাচনকে উৎসবে রূপ দেয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে উৎসব যাতে লাগামছাড়া না হয়, সে জন্যই আচরণবিধি দিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সেই আচরণবিধি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। রাজধানীর সর্বত্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রাকে শব্দযন্ত্র বসিয়ে দিনভর উচ্চশব্দে গানের তালে ভোট চাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই এখন ‘আপদ’ ঠেকছে। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাসনালয়, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়- কিছুই মানছে না এই প্রচারযন্ত্রগুলো।

এমন ঘটনা হয়ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিস্ময়কর নয়, কিন্তু উদ্বেগজনক হলো নির্বাচন কমিশনের চুপচাপ থাকা। এ বিষয়ে ইসির নির্বিকার ভূমিকা আমাদের হতাশও করেছে। সারা দিন উচ্চশব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। লেখাপড়া বিঘি্নত হচ্ছে, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে। এ নিয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়ায় ‘ঘাটতি’ রয়েছে বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারাও। ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন মেয়র প্রার্থীরা। অথচ আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। ইসির কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ক্ষমতা নিয়ে বসে থেকেও কমিশন কেন চুপচাপ তা একটি প্রশ্ন।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়াদি তদন্ত করা। তদন্ত করে এটার সত্যতা পেলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা। এর বাইরে আর কিছু নেই। কিন্তু অভিযোগ উঠবে আর এর নিষ্পত্তি হবে না কিংবা তদন্ত হবে না- এটা আশাপ্রদ নয়, কাম্যও নয়।

নির্বাচনে আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী যেসব আইনকানুন আছে তা নির্বাচন কমিশন, প্রার্থী, রাজনৈতিক দল সবাইকে মানতে হবে। আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠা মাত্রই নির্বাচন কমিশনকে তদন্ত করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা যদি যথার্থভাবে করা হয়, তাহলে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার সুযোগ আর বেশি থাকবে না।

প্রতিটি পর্যায়েই ইসিকে কঠোরভাবে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে, যাতে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়। যারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা সবাই নগর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে জনজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনেরও এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়দায়িত্ব রয়েছে। তাই পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার যাতে জনগণের কষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।

প্রত্যাশা থাকবে, দলমত-নির্বিশেষে যে ব্যক্তিই আচরণবিধি লঙ্ঘন করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও সব রাগ-অনুরাগ বা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- সে কথা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নন, প্রার্থী ও দলগুলোকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।