মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

২৭ জানুয়ারি

পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার একটি নজির

ক্ষত-বিক্ষত বাংলায় গত ২৭ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার বড়সালগড় গ্রামে কুখ্যাত পাকিস্তান বর্বর বাহিনীর চারজন সদস্য হঠাৎ এসে উপস্থিত হয় ওখানকার ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জনাব এমএ জলিলের বৈঠক খানায়। গ্রামে তারা নৃশংসতা চালাতে চায়। সে ব্যাপারে সমর্থন চায় জলিল সাহেবের। কিছু আলোচনার পর যখন পাকিস্তান সেনারা বৈঠক খানার বাইরে হাওয়া খাওয়ায় মত্ত তখন বিচ্ছুদের রাইফেল গর্জে উঠল। তাড়াহুড়া করে পলায়নের সময় জলিল সাহেবের বাড়িতে একটি এলএমজি রেখে পলায়ন করে। অতঃপর ২৯ তারিখে দল বেঁধে মিলিটারি এসে কয়েকজনের সঙ্গে জলিল সাহেবকেও ধরে নিয়ে যায়। অতঃপর অনেক চেষ্টা করেও তার কোন খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয় নাই। অনেকের মতে কয়েকদিন পর এক বিকেলে পাকিস্তান সেনার কুখ্যাত ক্যাপ্টেন জায়েদীর নির্দেশে কিছু লোককে চোখ বেঁধে কোম্পানিগঞ্জ বাজারের ক্যাম্পে গোমতী নদীর তীরে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে হয়তো হতভাগ্য জলিল সাহেবও ছিলেন।

এক কক্ষ পরিষদ ও এককেন্দ্রিক সরকারের ব্যবস্থা সম্বলিত শাসনতন্ত্র

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার বার্তা সংস্থা ‘এনা’ এই খবর পরিবেশন করেন। খসড়ায় প্রস্তাবিত প্রধান প্রধান বিষয় হচ্ছে : ১. সরকার হবে এককেন্দ্রিক এবং পার্লামেন্টারি ধরনের। ২. পরিষদ হবে এক-কক্ষবিশিষ্ট। এতে সদস্য থাকবেন ৩৫০ জন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র এই তিন নীতির ভিত্তিতে নবজাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রে পূর্ব প্রতি যে সমস্ত বিষয়ের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো : সমাজতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অর্থনীতি চালু করা, প্রশাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্যের নিশ্চয়তা সম্বলিত ভ্রাতৃত্ববোধ সুপ্রতিষ্ঠিত করা। খসড়ায় বলা হয়েছে, এককক্ষ বিশিষ্ট পরিষদের সদস্যগণ (৩৫০ জন) পাঁচ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হবেন এবং নির্বাচন হবে সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। এই পরিষদ সদস্যগণ আবার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের জাতীয় (সরকারি) ভাষা হবে বাংলা। নাগরিক অধিকার সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, যে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা যার পিতা কিংবা মাতার জন্ম এই দেশে অথবা ৫ বৎসর যাবত ডোমিসাইল হিসাবে যে এখানকার বাসিন্দা সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে। মৌলিক অধিকার সম্পর্কে খসড়া শাসনতন্ত্রে বলা হয়েছে : আইনের চোখে সবাই সমান বলে পরিগণিত হবে, চিন্তা, বিশ্বাস ও বাক স্বাধীনতার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকবে, নিশ্চয়তা থাকবে আপন ধর্মমত অনুসরণ এবং সে অনুযায়ী প্রার্থনা করার। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে সকল শ্রেণী সমমর্যাদা এবং সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী হবে এবং ন্যায়বিচার লাভের অধিকারীও হবে সকলে সমপরিমাণে। খসড়ায় এই সকল বিষয়ে পূর্ণ গ্যারান্টি রয়েছে। নির্দেশক নীতিমালা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সাম্য, সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি পুরোপুরি প্রতিপালিত হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রটি ২০টি ভাগে বিভক্ত এবং এতে অনুচ্ছেদ রয়েছে ২২৯টি। জানা গেছে যে, খসড়াটি বাংলাদেশ গণপরিষদের সামনে উপস্থাপনের পূর্বে আইন ও পার্লামেন্টারিবিষয়কমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত খসড়া শাসনতন্ত্র কমিটি যা আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বিবেচনার জন্য তার সামনে পেশ করবেন। খুব সম্ভবত এক মাসের মধ্যেই গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। উল্লেখযোগ্য যে, ইতিপূর্বেই বাংলাদেশের অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ- ১৯৭২ অনুসারে গণপরিষদ গঠন করা হয়েছে। বিগত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এন.এ এবং এমপিদের মধ্যে যারা অযোগ্য বিবেচিত হবেন তারা ছাড়া বাদবাকি যোগ্য। এম.এন.এ এবং এমপিগণ গণপরিষদের সদস্য অথবা এমসিএ বলে পরিগণিত হবেন।

২৮ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান

বাংলাদেশ লিবারেশন মুভমেন্টের সভাপতির পক্ষ হতে সভ্যদের অনুরোধ করা হয়েছে যে, তারা যেন আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের স্ব স্ব অস্ত্র উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে সমপর্ণ করেন। এই আদেশ অমান্য করলে সংস্থার আইনকানুন অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলে সভাপতি স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজে বলা হয়।

বঙ্গবন্ধুর সকাশে বাংলাদেশ বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতি

২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতি প্রায় ৫০ হাজার বাস্তুহার সহকারে এক বিরাট মিছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বাংলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে গমন করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শনলাভে সমবেত বাস্তুহারা তাদের পুঞ্জীভূত দুঃখ ও ব্যথা বেদনাকে ভুলে গিয়ে আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতির পক্ষ হতে সমিতির সভাপতি জনাব একেএম আমিন উল্লাহ বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি মেমোরেন্ডাম প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারাদের লক্ষ্য করে পুনরায় তেজদীপ্ত কণ্ঠে বলেন, বাস্তুহারাদের বাড়ি দেয়া হবে। অতঃপর বাস্তুহারারা জয় বাংলা ধ্বনিতে সরকারি ভবনের সম্মুখ মুখরিত করে তোলেন। সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গরিব বাস্তুহারাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। বাস্তুহারাদের নিকট হতে কেউ কোন চাদা গ্রহণ করতে পারবে না। সমিতির কর্মকর্তারাও দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দেন, “তারা কোন চাঁদা গ্রহণ করে না, যারা গরিব-সর্বহারা-বাস্তুহারাদের নিকট হতে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।” অতঃপর মিছিলটি সমিতির প্রধান কার্যালয় নীলক্ষেত বাবুপুরায় সমবেত হয়ে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রস্তাব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর উক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

২৭ জানুয়ারি

পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার একটি নজির

ক্ষত-বিক্ষত বাংলায় গত ২৭ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার বড়সালগড় গ্রামে কুখ্যাত পাকিস্তান বর্বর বাহিনীর চারজন সদস্য হঠাৎ এসে উপস্থিত হয় ওখানকার ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জনাব এমএ জলিলের বৈঠক খানায়। গ্রামে তারা নৃশংসতা চালাতে চায়। সে ব্যাপারে সমর্থন চায় জলিল সাহেবের। কিছু আলোচনার পর যখন পাকিস্তান সেনারা বৈঠক খানার বাইরে হাওয়া খাওয়ায় মত্ত তখন বিচ্ছুদের রাইফেল গর্জে উঠল। তাড়াহুড়া করে পলায়নের সময় জলিল সাহেবের বাড়িতে একটি এলএমজি রেখে পলায়ন করে। অতঃপর ২৯ তারিখে দল বেঁধে মিলিটারি এসে কয়েকজনের সঙ্গে জলিল সাহেবকেও ধরে নিয়ে যায়। অতঃপর অনেক চেষ্টা করেও তার কোন খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয় নাই। অনেকের মতে কয়েকদিন পর এক বিকেলে পাকিস্তান সেনার কুখ্যাত ক্যাপ্টেন জায়েদীর নির্দেশে কিছু লোককে চোখ বেঁধে কোম্পানিগঞ্জ বাজারের ক্যাম্পে গোমতী নদীর তীরে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে হয়তো হতভাগ্য জলিল সাহেবও ছিলেন।

এক কক্ষ পরিষদ ও এককেন্দ্রিক সরকারের ব্যবস্থা সম্বলিত শাসনতন্ত্র

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার বার্তা সংস্থা ‘এনা’ এই খবর পরিবেশন করেন। খসড়ায় প্রস্তাবিত প্রধান প্রধান বিষয় হচ্ছে : ১. সরকার হবে এককেন্দ্রিক এবং পার্লামেন্টারি ধরনের। ২. পরিষদ হবে এক-কক্ষবিশিষ্ট। এতে সদস্য থাকবেন ৩৫০ জন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র এই তিন নীতির ভিত্তিতে নবজাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রে পূর্ব প্রতি যে সমস্ত বিষয়ের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো : সমাজতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অর্থনীতি চালু করা, প্রশাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্যের নিশ্চয়তা সম্বলিত ভ্রাতৃত্ববোধ সুপ্রতিষ্ঠিত করা। খসড়ায় বলা হয়েছে, এককক্ষ বিশিষ্ট পরিষদের সদস্যগণ (৩৫০ জন) পাঁচ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হবেন এবং নির্বাচন হবে সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। এই পরিষদ সদস্যগণ আবার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের জাতীয় (সরকারি) ভাষা হবে বাংলা। নাগরিক অধিকার সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, যে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা যার পিতা কিংবা মাতার জন্ম এই দেশে অথবা ৫ বৎসর যাবত ডোমিসাইল হিসাবে যে এখানকার বাসিন্দা সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে। মৌলিক অধিকার সম্পর্কে খসড়া শাসনতন্ত্রে বলা হয়েছে : আইনের চোখে সবাই সমান বলে পরিগণিত হবে, চিন্তা, বিশ্বাস ও বাক স্বাধীনতার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকবে, নিশ্চয়তা থাকবে আপন ধর্মমত অনুসরণ এবং সে অনুযায়ী প্রার্থনা করার। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে সকল শ্রেণী সমমর্যাদা এবং সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী হবে এবং ন্যায়বিচার লাভের অধিকারীও হবে সকলে সমপরিমাণে। খসড়ায় এই সকল বিষয়ে পূর্ণ গ্যারান্টি রয়েছে। নির্দেশক নীতিমালা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সাম্য, সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি পুরোপুরি প্রতিপালিত হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রটি ২০টি ভাগে বিভক্ত এবং এতে অনুচ্ছেদ রয়েছে ২২৯টি। জানা গেছে যে, খসড়াটি বাংলাদেশ গণপরিষদের সামনে উপস্থাপনের পূর্বে আইন ও পার্লামেন্টারিবিষয়কমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত খসড়া শাসনতন্ত্র কমিটি যা আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বিবেচনার জন্য তার সামনে পেশ করবেন। খুব সম্ভবত এক মাসের মধ্যেই গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। উল্লেখযোগ্য যে, ইতিপূর্বেই বাংলাদেশের অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ- ১৯৭২ অনুসারে গণপরিষদ গঠন করা হয়েছে। বিগত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এন.এ এবং এমপিদের মধ্যে যারা অযোগ্য বিবেচিত হবেন তারা ছাড়া বাদবাকি যোগ্য। এম.এন.এ এবং এমপিগণ গণপরিষদের সদস্য অথবা এমসিএ বলে পরিগণিত হবেন।

২৮ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান

বাংলাদেশ লিবারেশন মুভমেন্টের সভাপতির পক্ষ হতে সভ্যদের অনুরোধ করা হয়েছে যে, তারা যেন আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের স্ব স্ব অস্ত্র উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে সমপর্ণ করেন। এই আদেশ অমান্য করলে সংস্থার আইনকানুন অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলে সভাপতি স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজে বলা হয়।

বঙ্গবন্ধুর সকাশে বাংলাদেশ বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতি

২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতি প্রায় ৫০ হাজার বাস্তুহার সহকারে এক বিরাট মিছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বাংলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে গমন করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শনলাভে সমবেত বাস্তুহারা তাদের পুঞ্জীভূত দুঃখ ও ব্যথা বেদনাকে ভুলে গিয়ে আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। বাস্তুহারা পুনর্বাসন সমিতির পক্ষ হতে সমিতির সভাপতি জনাব একেএম আমিন উল্লাহ বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি মেমোরেন্ডাম প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারাদের লক্ষ্য করে পুনরায় তেজদীপ্ত কণ্ঠে বলেন, বাস্তুহারাদের বাড়ি দেয়া হবে। অতঃপর বাস্তুহারারা জয় বাংলা ধ্বনিতে সরকারি ভবনের সম্মুখ মুখরিত করে তোলেন। সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গরিব বাস্তুহারাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। বাস্তুহারাদের নিকট হতে কেউ কোন চাদা গ্রহণ করতে পারবে না। সমিতির কর্মকর্তারাও দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দেন, “তারা কোন চাঁদা গ্রহণ করে না, যারা গরিব-সর্বহারা-বাস্তুহারাদের নিকট হতে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।” অতঃপর মিছিলটি সমিতির প্রধান কার্যালয় নীলক্ষেত বাবুপুরায় সমবেত হয়ে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রস্তাব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর উক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২