শেবাচিমের জমিতে ঘর তুলে দৈনিক অর্ধলক্ষ ভাড়া বাণিজ্য

বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলছে। হাসপতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় একটি চক্র। এসব স্থাপনায় দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রতিদিন সেখান থেকে প্রায় অর্ধলাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে এই চক্রটি। দখলদাররা দাবি করেছেন, তারা সকলকে ম্যানেজ করে ঘর তুলে ব্যবসা করছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন হাসপাতালের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসনে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আবারও আবেদন জানানো হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

শেবাচিম হাসপাতাল সংলগ্ন বান্দ রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে চতুর্থ শ্রেণীর আবাসিক এলাকা। বান্দ রোডের মূল সড়ক থেকে আবাসিক এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রায় ১৫ ফুট প্রশস্ত সড়ক রয়েছে। এই সড়কের দু’পাশে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। এ ঘরগুলোতে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান করেছেন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা। আবাসিক এলাকার পুকুরের মধ্যেও ঘর তোলা হয়েছে। সড়কের ওপর দোকানপাট তোলায় আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখই এক প্রকার আটকে গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে এই ঘরগুলোতে। প্রতিটি ঘর থেকে দৈনিক সর্বনিম্নœ ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে দখলদারা। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেতারও এ টাকার ভাগ পান বলে স্থানীয়রা জানান। ব্যবসায়ীদের কাছে ঘর মালিকদের নাম জানতে চাইলে জানাতে অস্বীকার করেন তারা। পরে ঘর ভাড়া নেবার কথা জানালে কাজল নামক এক ঘর মালিকের মোবাইল নম্বর দেন এক ব্যবসায়ী।

জালাল আহম্মেদ কাজল নামের ওই ব্যক্তির কাছে মোবাইলে কল দিয়ে ঘর ভাড়া নেবার কথা জানালে অকপটে সব স্বীকার করেন তিনি। কাজল জানান, প্রতিটি ঘরের আকার ভেদে দৈনিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। অগ্রীম নেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। বিদ্যুত বিল ফ্রি। উচ্ছেদের মুখে পড়তে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের ডাইরেক্টর থেকে নেতা সব আমার ম্যানেজে। খালি ভয় পাই ম্যাজিস্ট্রেটকে। জালালের দেয়া তথ্যমতে, গত ৩-৪ বছরে সেখানে কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। কাজল জানান, সেখানে অর্ধশতাধিক ঘর মালিক তিনি ছাড়াও আছেন তার বেয়াই মোকলেস, ভাতিজা আবুল ও মোন্তা এবং সুমন নামক আরেকজন। তারা সকলকে ম্যানেজ করে ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন।

তবে ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের কবির বলেন, আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখ দখলের সঙ্গে হাসপাতালের কোন কর্মচারীরা জড়িত নয়। স্থানীয়রা ওই ঘর তুলেছে। তিনি উল্টো পরিচালকের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, উচ্ছেদের জন্য তাকে বার বার বলা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

শেবাচিমের জমিতে ঘর তুলে দৈনিক অর্ধলক্ষ ভাড়া বাণিজ্য

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলছে। হাসপতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় একটি চক্র। এসব স্থাপনায় দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রতিদিন সেখান থেকে প্রায় অর্ধলাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে এই চক্রটি। দখলদাররা দাবি করেছেন, তারা সকলকে ম্যানেজ করে ঘর তুলে ব্যবসা করছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন হাসপাতালের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসনে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আবারও আবেদন জানানো হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

শেবাচিম হাসপাতাল সংলগ্ন বান্দ রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে চতুর্থ শ্রেণীর আবাসিক এলাকা। বান্দ রোডের মূল সড়ক থেকে আবাসিক এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রায় ১৫ ফুট প্রশস্ত সড়ক রয়েছে। এই সড়কের দু’পাশে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। এ ঘরগুলোতে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান করেছেন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা। আবাসিক এলাকার পুকুরের মধ্যেও ঘর তোলা হয়েছে। সড়কের ওপর দোকানপাট তোলায় আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখই এক প্রকার আটকে গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে এই ঘরগুলোতে। প্রতিটি ঘর থেকে দৈনিক সর্বনিম্নœ ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে দখলদারা। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেতারও এ টাকার ভাগ পান বলে স্থানীয়রা জানান। ব্যবসায়ীদের কাছে ঘর মালিকদের নাম জানতে চাইলে জানাতে অস্বীকার করেন তারা। পরে ঘর ভাড়া নেবার কথা জানালে কাজল নামক এক ঘর মালিকের মোবাইল নম্বর দেন এক ব্যবসায়ী।

জালাল আহম্মেদ কাজল নামের ওই ব্যক্তির কাছে মোবাইলে কল দিয়ে ঘর ভাড়া নেবার কথা জানালে অকপটে সব স্বীকার করেন তিনি। কাজল জানান, প্রতিটি ঘরের আকার ভেদে দৈনিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। অগ্রীম নেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। বিদ্যুত বিল ফ্রি। উচ্ছেদের মুখে পড়তে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের ডাইরেক্টর থেকে নেতা সব আমার ম্যানেজে। খালি ভয় পাই ম্যাজিস্ট্রেটকে। জালালের দেয়া তথ্যমতে, গত ৩-৪ বছরে সেখানে কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। কাজল জানান, সেখানে অর্ধশতাধিক ঘর মালিক তিনি ছাড়াও আছেন তার বেয়াই মোকলেস, ভাতিজা আবুল ও মোন্তা এবং সুমন নামক আরেকজন। তারা সকলকে ম্যানেজ করে ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন।

তবে ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের কবির বলেন, আবাসিক এলাকায় প্রবেশমুখ দখলের সঙ্গে হাসপাতালের কোন কর্মচারীরা জড়িত নয়। স্থানীয়রা ওই ঘর তুলেছে। তিনি উল্টো পরিচালকের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, উচ্ছেদের জন্য তাকে বার বার বলা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।