চার হাজার ঋণ খেলাপি পরিশোধ করেনি এক টাকাও

মোট খেলাপির ৫২ শতাংশেরই পরিশোধ শূন্য

জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ঋণখেলাপির মধ্যে ৪ হাজার ৩১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঋণের এক টাকাও পরিশোধ করেনি। অর্থাৎ ওই সব খেলাপি ঋণ নেয়ার পর ব্যাংককে কোন টাকাই ফেরত দেয়নি। এমনকি খেলাপি হওয়ার পরও ঋণের কোন অংশ পরিশোধ করেনি। এসব খেলাপিদের মধ্যে কারও কারও কাছে হাজার কোটি টাকার উপরে আটকে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ছোট গ্রাহকও। যাদের কাছে পাওয়া যাবে ৪-৫ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদে বুধবার ৮ হাজার ২৩৮ জন ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সে হিসাবে ঋণের অর্থ পরিশোধের ঘর শূন্য হয়ে আছে এমন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপির ৫০ শতাংশ। প্রকাশিত তালিকা গুণে এমন চিত্র পাওয়া যায়। এর আগে গতবছর জুনে অর্থমন্ত্রী তিনশ’ ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন।

সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দেয়া তথ্যানুযায়ী ঋণখেলাপি ৮ হাজার ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালিকার শীর্ষে থাকা প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানই জনতা ব্যাংকের গ্রাহক ক্রিসেন্ট গ্রুপের। এর মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কাছে পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার বেশি। ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা রয়েছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। পাওনার বিপরীতে কোন অর্থই পরিশোধ করেনি ক্রিসেন্ট গ্রুপের এ তিন প্রতিষ্ঠান।

বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের। চামড়ার ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে একদিকে সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অন্যদিকে রপ্তানির অর্থও ফেরত আনেনি। অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে।

এছাড়া এ তালিকায় লেক্সকো লি. বেল কন্সট্রাক্টশন লি., এসকে স্টিল, হেল্প লাইন রিসোর্স লি. নুরানি ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার লি., বিসমিল্লাহ টাওয়াল লি., ভিরগো মিডিয়ার মতো বড় কোম্পানিগুলো যেমন রয়েছে তেমন চার পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার মতো ছোট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় বলা হয়, বাংলাদেশের সব ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ২০১৯ সালের নভেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি চার লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের ৯ম কার্যদিবসে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ‘প্রশ্নোত্তর (টেবিলে উপস্থাপিত) পর্বে’ টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর লিখিত প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন । এ সময় অর্থমন্ত্রী ১০৭ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে উত্থাপন করেন। সেই তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, কে কত টাকা ঋণখেলাপি।

তিনি আরও জানান এ বকেয়া ঋণের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৩৮ হাজার ৬১১ কোট ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংকের ৪৮হাজার ৬শ’ কোটি ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২৬ হাজার ৯৫৪ কোটি ২৪ লাখ ২ হাজার টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৪৩ লাখ ৫৪৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪১ টাকা। এছাড়া পরিচালকের অন্য বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ বকেয়া রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলোর দাখিল করা ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং সংক্রান্ত সিএল বিবরণী অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রীর তথ্য অনুসারে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকদের নামে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। তিনি জানান এ ঋণের মধ্যে পরিচালকদের কাছে নিজ ২৫টি ব্যাংকের পাওনা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যা মোট দেয়া ঋণের শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। আর বকেয়া বাকি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা রাষ্ট্রায়ত্তসহ ৫৫টি ব্যাংকের রয়েছে। এটা মোট দেয়া ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ ।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

চার হাজার ঋণ খেলাপি পরিশোধ করেনি এক টাকাও

মোট খেলাপির ৫২ শতাংশেরই পরিশোধ শূন্য

রোকন মাহমুদ/ রেজাউল করিম

জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ঋণখেলাপির মধ্যে ৪ হাজার ৩১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঋণের এক টাকাও পরিশোধ করেনি। অর্থাৎ ওই সব খেলাপি ঋণ নেয়ার পর ব্যাংককে কোন টাকাই ফেরত দেয়নি। এমনকি খেলাপি হওয়ার পরও ঋণের কোন অংশ পরিশোধ করেনি। এসব খেলাপিদের মধ্যে কারও কারও কাছে হাজার কোটি টাকার উপরে আটকে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ছোট গ্রাহকও। যাদের কাছে পাওয়া যাবে ৪-৫ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদে বুধবার ৮ হাজার ২৩৮ জন ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সে হিসাবে ঋণের অর্থ পরিশোধের ঘর শূন্য হয়ে আছে এমন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপির ৫০ শতাংশ। প্রকাশিত তালিকা গুণে এমন চিত্র পাওয়া যায়। এর আগে গতবছর জুনে অর্থমন্ত্রী তিনশ’ ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন।

সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দেয়া তথ্যানুযায়ী ঋণখেলাপি ৮ হাজার ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালিকার শীর্ষে থাকা প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানই জনতা ব্যাংকের গ্রাহক ক্রিসেন্ট গ্রুপের। এর মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কাছে পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার বেশি। ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা রয়েছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। পাওনার বিপরীতে কোন অর্থই পরিশোধ করেনি ক্রিসেন্ট গ্রুপের এ তিন প্রতিষ্ঠান।

বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের। চামড়ার ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে একদিকে সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অন্যদিকে রপ্তানির অর্থও ফেরত আনেনি। অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে।

এছাড়া এ তালিকায় লেক্সকো লি. বেল কন্সট্রাক্টশন লি., এসকে স্টিল, হেল্প লাইন রিসোর্স লি. নুরানি ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার লি., বিসমিল্লাহ টাওয়াল লি., ভিরগো মিডিয়ার মতো বড় কোম্পানিগুলো যেমন রয়েছে তেমন চার পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার মতো ছোট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় বলা হয়, বাংলাদেশের সব ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ২০১৯ সালের নভেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি চার লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের ৯ম কার্যদিবসে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ‘প্রশ্নোত্তর (টেবিলে উপস্থাপিত) পর্বে’ টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর লিখিত প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন । এ সময় অর্থমন্ত্রী ১০৭ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে উত্থাপন করেন। সেই তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, কে কত টাকা ঋণখেলাপি।

তিনি আরও জানান এ বকেয়া ঋণের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৩৮ হাজার ৬১১ কোট ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংকের ৪৮হাজার ৬শ’ কোটি ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২৬ হাজার ৯৫৪ কোটি ২৪ লাখ ২ হাজার টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৪৩ লাখ ৫৪৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪১ টাকা। এছাড়া পরিচালকের অন্য বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ বকেয়া রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলোর দাখিল করা ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং সংক্রান্ত সিএল বিবরণী অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রীর তথ্য অনুসারে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকদের নামে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। তিনি জানান এ ঋণের মধ্যে পরিচালকদের কাছে নিজ ২৫টি ব্যাংকের পাওনা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যা মোট দেয়া ঋণের শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। আর বকেয়া বাকি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা রাষ্ট্রায়ত্তসহ ৫৫টি ব্যাংকের রয়েছে। এটা মোট দেয়া ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ ।