পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। কারণ কমিশন যে সব ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সংক্রান্ত দুর্নীতি তদন্ত করছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এ প্রক্রিয়াকে কতিপয় ব্যক্তি ম্যানুপুলেট (বিকৃত) করে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকেই বিতর্কিত করছে। গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের একটি প্রতিনিধি দল দুর্নীতি কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য সমর্থনযোগ্য। আমরাও মনে করি, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট গলদ রয়েছে এবং এসব ত্রুটি-বিচ্যুতির সুযোগেই দুর্নীতিবাজরা সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। দুর্নীতি সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর ও অন্যান্য বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অপ্রতুলতা রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধীন দফতরসগুলোর সেবার মান নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ নেই। সরকারি বিধি-বিধান যথাযথভাবে না মানায় সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেন্ডার ছিনতাই, টেন্ডার জমা প্রদানে বাধা প্রদান, টেন্ডার আহ্বানকারী ও দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অপরাধীরা সুকৌশলে ইজিপি প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ করছে। এসব অপরাধীদের কারণে একই ঠিকাদার অধিকাংশ সরকারি কাজ পাচ্ছে। এসব কারণে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা হারাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মর্জিমাফিক সিদ্ধান্তের কারণেও অনেক সময় সেবা প্রদান বিঘ্নিত ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের হানি ঘটছে।

এসব অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেভাবেই হোক, অনিয়ম বন্ধ করতে হবে এবং অনিয়মের হোতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সৃজনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ক্রয় কার্যাদির শতভাগ ‘ই-টেন্ডারিং’-এর আওতায় আনা, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও ক্রয় কার্য যথাযথ হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শক্তিশালী টিম গঠন করা দরকার। নীতিমালা প্রণয়নে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোকে কিভাবে সংযোজন করা যায় এবং যাতে পদ্ধতিগতভাবেই দুর্নীতির সুযোগ রুদ্ধ হয়ে যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়নকালে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক ‘প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিং’-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, বরাদ্দ বৃদ্ধি এগুলো আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী করার সুযোগ রয়েছে। তবে কখনও কখনও আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, কিংবা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সময়মতো জনকল্যাণ হয় না। সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে জনগণ প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। কেউ কেউ এসব অনিয়মকে নিয়ম করতে চান। এটা কোনভাবেই করতে দেয়া যাবে না। প্রজেক্ট প্রোফাইল থেকে শুরু করে এস্টিমেশন এবং সর্বোপরি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ নির্ধারিত বিধি-বিধান অনুসারে সম্পন্ন করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। কারণ কমিশন যে সব ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সংক্রান্ত দুর্নীতি তদন্ত করছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এ প্রক্রিয়াকে কতিপয় ব্যক্তি ম্যানুপুলেট (বিকৃত) করে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকেই বিতর্কিত করছে। গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের একটি প্রতিনিধি দল দুর্নীতি কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য সমর্থনযোগ্য। আমরাও মনে করি, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট গলদ রয়েছে এবং এসব ত্রুটি-বিচ্যুতির সুযোগেই দুর্নীতিবাজরা সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। দুর্নীতি সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর ও অন্যান্য বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অপ্রতুলতা রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধীন দফতরসগুলোর সেবার মান নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ নেই। সরকারি বিধি-বিধান যথাযথভাবে না মানায় সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেন্ডার ছিনতাই, টেন্ডার জমা প্রদানে বাধা প্রদান, টেন্ডার আহ্বানকারী ও দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অপরাধীরা সুকৌশলে ইজিপি প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ করছে। এসব অপরাধীদের কারণে একই ঠিকাদার অধিকাংশ সরকারি কাজ পাচ্ছে। এসব কারণে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা হারাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মর্জিমাফিক সিদ্ধান্তের কারণেও অনেক সময় সেবা প্রদান বিঘ্নিত ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের হানি ঘটছে।

এসব অনিয়ম কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেভাবেই হোক, অনিয়ম বন্ধ করতে হবে এবং অনিয়মের হোতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সৃজনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ক্রয় কার্যাদির শতভাগ ‘ই-টেন্ডারিং’-এর আওতায় আনা, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও ক্রয় কার্য যথাযথ হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শক্তিশালী টিম গঠন করা দরকার। নীতিমালা প্রণয়নে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলোকে কিভাবে সংযোজন করা যায় এবং যাতে পদ্ধতিগতভাবেই দুর্নীতির সুযোগ রুদ্ধ হয়ে যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়নকালে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক ‘প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিং’-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, বরাদ্দ বৃদ্ধি এগুলো আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী করার সুযোগ রয়েছে। তবে কখনও কখনও আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, কিংবা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সময়মতো জনকল্যাণ হয় না। সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে জনগণ প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। কেউ কেউ এসব অনিয়মকে নিয়ম করতে চান। এটা কোনভাবেই করতে দেয়া যাবে না। প্রজেক্ট প্রোফাইল থেকে শুরু করে এস্টিমেশন এবং সর্বোপরি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ নির্ধারিত বিধি-বিধান অনুসারে সম্পন্ন করতে হবে।