ঢাবি ছাত্রীর শোকজের নোটিস ছাত্রলীগের হাতে কেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলের দুই শিক্ষার্থীকে শোকের নোটিসের অনুলিপি ছাত্রলীগ নেতাকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোকেয়া হলে কর্মচারী নিয়োগে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা, হল ছাত্রলীগ ও হল সংসদের নেতারা দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ছাত্রীদের। এরপর জিনাত হুদার পদত্যাগসহ স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে গত রোববার সংবাদ খবর প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। সেখানে অফিস সহায়ক পদে একজন, বাগানের মালী পদে একজন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে তিনজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তিনজন নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়। রোকেয়া হলের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে হল সংসদের ভিপিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এর সঙ্গে হলের প্রাধ্যক্ষেরও যোগসাজশ রয়েছেÑ এমন অভিযোগও রয়েছে।

শোকজের বিষয়টি হচ্ছে পুরোপুরি প্রশাসনিক কর্তৃত্বাধীন কাজ। আর এ কাজটি করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগের হাতে পুরো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রাধ্যক্ষ কি ছাত্রলীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। শোকজের অনুলিপিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু সেটা না করে তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে পাঠালেন কেন? তিনি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে প্রতিবাদকারী ছাত্রীদের ‘ঠা-া’ করতে চেয়েছেন? এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সখ্য গড়ে ওঠে। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ, টেন্ডারের কাজ হলে সেটা ছাত্রলীগকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসবের কারণে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদদ্যালয়ে টেন্ডারবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করার পেছনে বা কর্তৃত্ব বিস্তারে দলবাজ শিক্ষকদের সক্রিয় সহযোগিতা রয়েছে। ছাত্রলীগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার বা ছাত্রলীগের ওপর শিক্ষকদের নির্ভরতা এবং সখ্য যতদিন পর্যন্ত না বন্ধ হবে ততদিন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব এবং আধিপত্য দূর করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। ছাত্রলীগকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার এবং শিক্ষকদের নির্ভরতা এবং সখ্য দূর করতে হবে। ঢাবির রোকেয়া হলেও প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদাকে এ অন্যায় কাজের জন্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

ঢাবি ছাত্রীর শোকজের নোটিস ছাত্রলীগের হাতে কেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলের দুই শিক্ষার্থীকে শোকের নোটিসের অনুলিপি ছাত্রলীগ নেতাকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোকেয়া হলে কর্মচারী নিয়োগে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা, হল ছাত্রলীগ ও হল সংসদের নেতারা দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ছাত্রীদের। এরপর জিনাত হুদার পদত্যাগসহ স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে গত রোববার সংবাদ খবর প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। সেখানে অফিস সহায়ক পদে একজন, বাগানের মালী পদে একজন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে তিনজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তিনজন নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়। রোকেয়া হলের নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে হল সংসদের ভিপিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এর সঙ্গে হলের প্রাধ্যক্ষেরও যোগসাজশ রয়েছেÑ এমন অভিযোগও রয়েছে।

শোকজের বিষয়টি হচ্ছে পুরোপুরি প্রশাসনিক কর্তৃত্বাধীন কাজ। আর এ কাজটি করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগের হাতে পুরো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রাধ্যক্ষ কি ছাত্রলীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। শোকজের অনুলিপিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু সেটা না করে তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে পাঠালেন কেন? তিনি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে প্রতিবাদকারী ছাত্রীদের ‘ঠা-া’ করতে চেয়েছেন? এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সখ্য গড়ে ওঠে। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ, টেন্ডারের কাজ হলে সেটা ছাত্রলীগকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসবের কারণে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদদ্যালয়ে টেন্ডারবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করার পেছনে বা কর্তৃত্ব বিস্তারে দলবাজ শিক্ষকদের সক্রিয় সহযোগিতা রয়েছে। ছাত্রলীগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার বা ছাত্রলীগের ওপর শিক্ষকদের নির্ভরতা এবং সখ্য যতদিন পর্যন্ত না বন্ধ হবে ততদিন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব এবং আধিপত্য দূর করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। ছাত্রলীগকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার এবং শিক্ষকদের নির্ভরতা এবং সখ্য দূর করতে হবে। ঢাবির রোকেয়া হলেও প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদাকে এ অন্যায় কাজের জন্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে।