পুঁজিবাজারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শেয়ারবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থানে আছে। শেয়ারবাজারের সূচক একদম তলানিতে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা কয়েকদফা বিক্ষোভও করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ২০১০ সালের ধসের পর ১০ বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে নতুন করে ধস নেমেছে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ছয়টি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারের নেওয়া ছয়টি পদক্ষেপ হচ্ছে : পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধার ব্যবস্থা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশর (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ করা ও বাজারে আস্থা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে মানসম্মত আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ।

সরকারের এই ছয়টি উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। শুধু স্বল্পমেয়াদে উদ্যোগ নিলেই হবে না, দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় নির্ধারন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে উদ্যোগের মধ্যেই বিষয়গুলো সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; এর যথাযথ প্রয়োগ দরকার। আমরা বিগত দিনগুলোতেও দেখেছি যে, পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত বাস্তবায়নের অভাবে বাজার উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এতে করে এর দায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বর্তায়। সবচেয়ে বড় ভীতিকর বিষয়টি হচ্ছে, পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হোল্ড করতে চাচ্ছেন না। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে এবং শেয়ারের দাম কমছে।

কথা হচ্ছে, এর থেকে বাঁচার উপায় কি? সবচেয়ে বড় ভাববার বিষয় হলো, বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো। আস্থা ফেরাতে হলে পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদে সরকারের যে ছয়টি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা দরকার। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে হবে না, ব্যক্তিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা জানি যে, আর্থিক বাজারগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটির পরিবর্তন আরেকটিতে প্রভাব ফেলে। ব্যাংক খাত সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই অবগত আছি। ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে ভুগছে। শুধু পুঁজিবাজারের আস্থা ফেরালেই হবে না, বিনিয়োগকারীদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে বিনিয়োগ কিভাবে হবে! বেশিরভাগ অর্থই আসে ব্যাংক খাত থেকে। আর এই খাতের অবস্থাই শোচনীয়। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমান দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। তবে ছয় মাসের মধ্যেই (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা। যার ফলে ব্যাংকের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে এবং বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। খেলাপিঋণ দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋনের পরিমান প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে। ফলস্বরূপ তারল্য সংকট বাড়ছে। আর এই ব্যাংক খাতই যদি নড়বড়ে অবস্থায় থাকে, তাহলে পুঁজিবাজারের সংকট নিরসন দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই ব্যাংক খাতের সংস্কার করা জরুরি প্রয়োজন।

অনেকেই বলে থাকেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব আছে; না বুঝেই নাকি খারাপ শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। এখন যদি বলায় হয়, এই খারাপ শেয়ার বা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে কার মাধ্যমে? অবশ্যই উত্তর আসবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে। বিনিয়োগকারীদের দোষই যদি দেওয়া হয়, তাহলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেনইবা মন্দ কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে! আইপিওতে মন্দ কোম্পানি এসে বাজার থেকে অর্থ তুলে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এরকম দৃষ্টান্ত কারো অজানা না। এটি মূলত ঘটছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অসতর্কতা বা অসাবধানতার কারনে। তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যে যে কাগজপত্র বা শর্তাদি প্রয়োজন, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। যার ফলে এই সমস্যার উত্থান হয়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ভালো বা মানসম্মত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত করতে হবে। এটির জন্য অত্যান্ত সতর্কতার সহিত কাগজপত্র বা শর্তাদি মূল্যায়ন করতে হবে। পুঁজিবাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজারে কারসাজির প্রভাব কমাতে ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। শেয়ারের আগ্রাসী বিক্রি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিতে হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য সরকারকে আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে। যখনই বাজারে কোনো অনিয়ম ঘটনা ঘটবে তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসসি) শীর্ষ পদে বিতর্কিতদের নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে (বিশেষ করে অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ঋণখেলাপী)। এটির কারনে বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য ব্যাংকখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকগুলোর ঋণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নগদ জমার অনুপাতের (সিআরআর) হার কমাতে হবে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গত কয়েকদিন শেয়ারবাজারের সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও আস্থার সংকটে ভুগছে বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার থেকে আস্থার সংকট দূর করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কমিশনের পুনর্গঠন, ব্যাংকের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হলে শেয়ারবাজারের দুর্দিনের অবসান ঘটবে। পরিশেষে একটা কথাই বলতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো পুঁজিবাজার বা শেয়ারবাজার। এই খাতকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি অর্থনীতিকে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নিতে হলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। তাই এই খাতের দিকে সরকার বা তার কর্তাব্যক্তিদের বিশেষ নজর দিতে হবে।

মো. মামুনুর রশিদ

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

আরও খবর

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

পুঁজিবাজারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শেয়ারবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থানে আছে। শেয়ারবাজারের সূচক একদম তলানিতে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা কয়েকদফা বিক্ষোভও করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ২০১০ সালের ধসের পর ১০ বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে নতুন করে ধস নেমেছে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ছয়টি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারের নেওয়া ছয়টি পদক্ষেপ হচ্ছে : পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধার ব্যবস্থা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশর (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ করা ও বাজারে আস্থা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে মানসম্মত আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ।

সরকারের এই ছয়টি উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। শুধু স্বল্পমেয়াদে উদ্যোগ নিলেই হবে না, দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় নির্ধারন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে উদ্যোগের মধ্যেই বিষয়গুলো সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; এর যথাযথ প্রয়োগ দরকার। আমরা বিগত দিনগুলোতেও দেখেছি যে, পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত বাস্তবায়নের অভাবে বাজার উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এতে করে এর দায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বর্তায়। সবচেয়ে বড় ভীতিকর বিষয়টি হচ্ছে, পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হোল্ড করতে চাচ্ছেন না। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে এবং শেয়ারের দাম কমছে।

কথা হচ্ছে, এর থেকে বাঁচার উপায় কি? সবচেয়ে বড় ভাববার বিষয় হলো, বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো। আস্থা ফেরাতে হলে পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদে সরকারের যে ছয়টি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা দরকার। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে হবে না, ব্যক্তিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা জানি যে, আর্থিক বাজারগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটির পরিবর্তন আরেকটিতে প্রভাব ফেলে। ব্যাংক খাত সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই অবগত আছি। ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে ভুগছে। শুধু পুঁজিবাজারের আস্থা ফেরালেই হবে না, বিনিয়োগকারীদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে বিনিয়োগ কিভাবে হবে! বেশিরভাগ অর্থই আসে ব্যাংক খাত থেকে। আর এই খাতের অবস্থাই শোচনীয়। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমান দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কথা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। তবে ছয় মাসের মধ্যেই (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা। যার ফলে ব্যাংকের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে এবং বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। খেলাপিঋণ দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋনের পরিমান প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে। ফলস্বরূপ তারল্য সংকট বাড়ছে। আর এই ব্যাংক খাতই যদি নড়বড়ে অবস্থায় থাকে, তাহলে পুঁজিবাজারের সংকট নিরসন দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই ব্যাংক খাতের সংস্কার করা জরুরি প্রয়োজন।

অনেকেই বলে থাকেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব আছে; না বুঝেই নাকি খারাপ শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। এখন যদি বলায় হয়, এই খারাপ শেয়ার বা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে কার মাধ্যমে? অবশ্যই উত্তর আসবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে। বিনিয়োগকারীদের দোষই যদি দেওয়া হয়, তাহলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেনইবা মন্দ কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে! আইপিওতে মন্দ কোম্পানি এসে বাজার থেকে অর্থ তুলে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এরকম দৃষ্টান্ত কারো অজানা না। এটি মূলত ঘটছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অসতর্কতা বা অসাবধানতার কারনে। তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য যে যে কাগজপত্র বা শর্তাদি প্রয়োজন, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। যার ফলে এই সমস্যার উত্থান হয়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ভালো বা মানসম্মত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত করতে হবে। এটির জন্য অত্যান্ত সতর্কতার সহিত কাগজপত্র বা শর্তাদি মূল্যায়ন করতে হবে। পুঁজিবাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজারে কারসাজির প্রভাব কমাতে ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। শেয়ারের আগ্রাসী বিক্রি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিতে হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য সরকারকে আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে। যখনই বাজারে কোনো অনিয়ম ঘটনা ঘটবে তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসসি) শীর্ষ পদে বিতর্কিতদের নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে (বিশেষ করে অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ঋণখেলাপী)। এটির কারনে বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য ব্যাংকখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকগুলোর ঋণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নগদ জমার অনুপাতের (সিআরআর) হার কমাতে হবে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। গত কয়েকদিন শেয়ারবাজারের সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও আস্থার সংকটে ভুগছে বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার থেকে আস্থার সংকট দূর করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কমিশনের পুনর্গঠন, ব্যাংকের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া হলে শেয়ারবাজারের দুর্দিনের অবসান ঘটবে। পরিশেষে একটা কথাই বলতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো পুঁজিবাজার বা শেয়ারবাজার। এই খাতকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি অর্থনীতিকে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নিতে হলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। তাই এই খাতের দিকে সরকার বা তার কর্তাব্যক্তিদের বিশেষ নজর দিতে হবে।

মো. মামুনুর রশিদ

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।