মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

২৯ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অগ্রাধিকার থাকবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নির্দেশ প্রদান করছেন। এই ছাড়া শাহাবাগস্থ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালে শতকরা ৭ ভাগ আসন মুক্তিবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

দিল্লি মিশন সফল হয়েছে- তাজউদ্দীন আহমদ

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, নয়া দিল্লিতে তার মিশন সফল হয়েছে। ভারতে চার দিন অবস্থানের পর ঢাকা বিমানবন্দরে প্রত্যাবর্তন করে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে জনাব তাজউদ্দীন উক্ত মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ১০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন। জনাব তাজউদ্দীন বলেন যে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি গিরি, প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী এবং ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, অত্যন্ত বন্ধুত্বমূলক পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও প্রকাশ করেন যে, তাঁর দিল্লি সফর উভয় দেশের মৈত্রী সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। জনাব তাজউদ্দীন পূর্বাহ্নে কলিকাতায় জানান যে, বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সাহায্য দানের ব্যাপারে বহু বন্ধু দেশ সক্রিয় সাড়া দান করেছে। সাহায্যের ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিকট হতে কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, মুক্তি সংগ্রামে আমাদের সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দান করেছে। ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পথে দমদম বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের নিকট তিনি উক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, কোনো শর্ত আরোপ করা না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণ দানকারী এজেন্সির নিকট হতে সাহায্য গ্রহণ করবে। আগামি মার্চ মাস হতে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে- এই ধরনের আশঙ্কার কথা অর্থমন্ত্রী বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, আমাদের যা আছে, তার অংশ যাতে জনসাধারণ পায় তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা বরাবর বহাল থাকবে। তদুপুরি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু সংখ্যক বন্ধু আছেন যারা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। মার্কিন স্বীকৃতির সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তাই স্বীকৃতির ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বলে জানান, কারণ নিক্সন সরকার জনমতের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ভারতের সরকার ও জনসাধারণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ে অভিন্ন আদর্শবাদের অনুসারী, তাই উভয় দেশের মৈত্রী চিরস্থায়ী হবে। তিনি বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেত্রীত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নীতিগত মতৈক্য

জনসাধারণের সর্বাধিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই সুবিধা মতো গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও বিদ্যুৎ শক্তি উন্নয়নের কাজ সহযোগিতামূলক ভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য উভয় দেশ সতর্কভাবে সচেষ্ট হবে বলে বাংলাদেশ ও ভারত নীতিগতভাবে মতৈক্যে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব বিএম আব্বাস উক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। জনাব আব্বাস আরও প্রকাশ করেন যে, উভয় দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনাও উভয় দেশ পর্যালোচনা করবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর জনাব আব্বাস গত শুক্রবারে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। প্রাথমিক আলোচনায় দেখা গেছে যে, ভারত বাংলাদেশের পশ্চিম অংশের জন্য উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সমর্থ। অপরদিকে কাপ্তাই কেন্দ্রকে আরও শক্তিশালী করে বাংলাদেশ আসাম ও ত্রিপুরাসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে।

বাংলাদেশের বাস্তবতাকে পাকিস্তানের স্বীকার করা উচিত

নয়াদিল্লি। ব্রিটিশ শ্রমিক দলের সহকারী নেতা মি. রয় জেনকিন্স আজ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান। এখানে এক সংবাদিক সম্মেলনে মি. জেনকিন্স বলেন যে, সম্পত্তির মালিকানা এবং উভয় দেশের অন্যান্য স্বার্থের ব্যাপারে বিস্তারিত মীমাংসায় পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে আশু আলোচনা অনুষ্ঠান বাঞ্ছনীয়। তবে তার পূর্বে পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়া। তিনি বলেন যে, একইভাবে পাকিস্ত নি ভারতের সাথেও মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। মি. জেনকিন্স ইতাপূর্বে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথেও আলোচনা করেন। লন্ডনের পথে সোমবারে তিনি বোম্বাই রওনা হবেন। তিনি বলেন যে, ব্রিটেন যতশীঘ্রই বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করবে ততই মঙ্গলজনক হবে। ব্রিটিশ শ্রমিক নেতা বলেন যে, শেখ মুজিবের সাথে তিনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন নাই। শেখ সাহেব কমনওয়েলথে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পক্ষপাতি বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানি সম্ভার

কলকাতা। আজ বাংলাদেশ হতে পাটের প্রথম চালানটি ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গিয়েছে। এই চালানে রয়েছে ৯ হাজার টন পাট ও পাট জাত দ্রব্য। চালনা বন্দর হতে একখানি ভারতীয় জাহাজ এইগুলো নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা লাভের পর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানি সম্ভার।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে সাহায্য করতে উদগ্রীব

বাণিজ্যমন্ত্রী এমআর সিদ্দিকী এখানে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ করেন যে, কার্গিলের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল শীঘ্রই বাংলাদেশে আগমন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সাহায্য করতে উদগ্রীব বলে মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার ঢাকার সফর সম্পর্কিত প্রকাশিত সংবাদের ওপর মন্তব্য করতে বলা হলে মন্ত্রী মহোদয় উপরোক্ত উক্তি করেন। জনাব সিদ্দিকী উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাংকের সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রকে সাহায্য করার পূর্ব উদাহরণ রয়েছে। তিনি বলেন যে, বিশ্বব্যাংকের সাহায্য দুই প্রকারে দেয়া হয়। এক, দেশ পুনর্গঠনের জন্য সাহায্য এবং দুই, উন্নয়ন কার্যের জন্য সাহায্য। বিশ্বব্যাংকের সদস্য রাষ্ট্রকে শেষোক্ত প্রকারের সাহায্য দেওয়া হয়। পুনর্গঠনের কাজে সাহায্য দেওয়ার। ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশকে বিশ্বব্যাংকের সদস্য হওয়ার আবশ্যকতা নাই। দ্বিতীয়, মহাযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংক পশ্চিম জার্মানিকে পুনর্গঠন কার্যের জন্য সাহয্য দান করে। সেই সময় পশ্চিম জার্মানি যদিও বিশ্বব্যাংকের সদস্য ছিল না। মন্ত্রী মহোদয় অতঃপর বলেন, তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের দ্বারা জানেন যে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশের প্রতি সহনুভূতিশীল এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বাংলাদেশ সফরে আগমন করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠন কার্যে কি পরিমাণ সাহায্যের প্রয়োজন তা জরিপ করার জন্য বিশ্বব্যাংকের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। জনাব সিদ্দিকী বলেন যে, সাবেক পূর্বপাকিস্তানের বিশ্বব্যাংকের কতিপয় প্রকল্পের কাজ চলছিল এবং বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। ঐ সকল প্রকল্পের মধ্যে ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে এবং ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন প্রকল্প।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

২৯ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অগ্রাধিকার থাকবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নির্দেশ প্রদান করছেন। এই ছাড়া শাহাবাগস্থ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালে শতকরা ৭ ভাগ আসন মুক্তিবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

দিল্লি মিশন সফল হয়েছে- তাজউদ্দীন আহমদ

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, নয়া দিল্লিতে তার মিশন সফল হয়েছে। ভারতে চার দিন অবস্থানের পর ঢাকা বিমানবন্দরে প্রত্যাবর্তন করে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে জনাব তাজউদ্দীন উক্ত মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ১০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন। জনাব তাজউদ্দীন বলেন যে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি গিরি, প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী এবং ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, অত্যন্ত বন্ধুত্বমূলক পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও প্রকাশ করেন যে, তাঁর দিল্লি সফর উভয় দেশের মৈত্রী সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। জনাব তাজউদ্দীন পূর্বাহ্নে কলিকাতায় জানান যে, বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সাহায্য দানের ব্যাপারে বহু বন্ধু দেশ সক্রিয় সাড়া দান করেছে। সাহায্যের ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিকট হতে কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, মুক্তি সংগ্রামে আমাদের সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দান করেছে। ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পথে দমদম বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের নিকট তিনি উক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, কোনো শর্ত আরোপ করা না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণ দানকারী এজেন্সির নিকট হতে সাহায্য গ্রহণ করবে। আগামি মার্চ মাস হতে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে- এই ধরনের আশঙ্কার কথা অর্থমন্ত্রী বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, আমাদের যা আছে, তার অংশ যাতে জনসাধারণ পায় তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা বরাবর বহাল থাকবে। তদুপুরি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু সংখ্যক বন্ধু আছেন যারা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। মার্কিন স্বীকৃতির সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তাই স্বীকৃতির ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বলে জানান, কারণ নিক্সন সরকার জনমতের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ভারতের সরকার ও জনসাধারণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ে অভিন্ন আদর্শবাদের অনুসারী, তাই উভয় দেশের মৈত্রী চিরস্থায়ী হবে। তিনি বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেত্রীত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নীতিগত মতৈক্য

জনসাধারণের সর্বাধিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই সুবিধা মতো গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও বিদ্যুৎ শক্তি উন্নয়নের কাজ সহযোগিতামূলক ভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য উভয় দেশ সতর্কভাবে সচেষ্ট হবে বলে বাংলাদেশ ও ভারত নীতিগতভাবে মতৈক্যে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব বিএম আব্বাস উক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। জনাব আব্বাস আরও প্রকাশ করেন যে, উভয় দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনাও উভয় দেশ পর্যালোচনা করবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর জনাব আব্বাস গত শুক্রবারে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। প্রাথমিক আলোচনায় দেখা গেছে যে, ভারত বাংলাদেশের পশ্চিম অংশের জন্য উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সমর্থ। অপরদিকে কাপ্তাই কেন্দ্রকে আরও শক্তিশালী করে বাংলাদেশ আসাম ও ত্রিপুরাসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে।

বাংলাদেশের বাস্তবতাকে পাকিস্তানের স্বীকার করা উচিত

নয়াদিল্লি। ব্রিটিশ শ্রমিক দলের সহকারী নেতা মি. রয় জেনকিন্স আজ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান। এখানে এক সংবাদিক সম্মেলনে মি. জেনকিন্স বলেন যে, সম্পত্তির মালিকানা এবং উভয় দেশের অন্যান্য স্বার্থের ব্যাপারে বিস্তারিত মীমাংসায় পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে আশু আলোচনা অনুষ্ঠান বাঞ্ছনীয়। তবে তার পূর্বে পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়া। তিনি বলেন যে, একইভাবে পাকিস্ত নি ভারতের সাথেও মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। মি. জেনকিন্স ইতাপূর্বে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথেও আলোচনা করেন। লন্ডনের পথে সোমবারে তিনি বোম্বাই রওনা হবেন। তিনি বলেন যে, ব্রিটেন যতশীঘ্রই বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করবে ততই মঙ্গলজনক হবে। ব্রিটিশ শ্রমিক নেতা বলেন যে, শেখ মুজিবের সাথে তিনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন নাই। শেখ সাহেব কমনওয়েলথে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পক্ষপাতি বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানি সম্ভার

কলকাতা। আজ বাংলাদেশ হতে পাটের প্রথম চালানটি ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গিয়েছে। এই চালানে রয়েছে ৯ হাজার টন পাট ও পাট জাত দ্রব্য। চালনা বন্দর হতে একখানি ভারতীয় জাহাজ এইগুলো নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা লাভের পর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানি সম্ভার।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে সাহায্য করতে উদগ্রীব

বাণিজ্যমন্ত্রী এমআর সিদ্দিকী এখানে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ করেন যে, কার্গিলের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল শীঘ্রই বাংলাদেশে আগমন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সাহায্য করতে উদগ্রীব বলে মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার ঢাকার সফর সম্পর্কিত প্রকাশিত সংবাদের ওপর মন্তব্য করতে বলা হলে মন্ত্রী মহোদয় উপরোক্ত উক্তি করেন। জনাব সিদ্দিকী উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাংকের সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রকে সাহায্য করার পূর্ব উদাহরণ রয়েছে। তিনি বলেন যে, বিশ্বব্যাংকের সাহায্য দুই প্রকারে দেয়া হয়। এক, দেশ পুনর্গঠনের জন্য সাহায্য এবং দুই, উন্নয়ন কার্যের জন্য সাহায্য। বিশ্বব্যাংকের সদস্য রাষ্ট্রকে শেষোক্ত প্রকারের সাহায্য দেওয়া হয়। পুনর্গঠনের কাজে সাহায্য দেওয়ার। ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশকে বিশ্বব্যাংকের সদস্য হওয়ার আবশ্যকতা নাই। দ্বিতীয়, মহাযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাংক পশ্চিম জার্মানিকে পুনর্গঠন কার্যের জন্য সাহয্য দান করে। সেই সময় পশ্চিম জার্মানি যদিও বিশ্বব্যাংকের সদস্য ছিল না। মন্ত্রী মহোদয় অতঃপর বলেন, তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের দ্বারা জানেন যে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশের প্রতি সহনুভূতিশীল এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বাংলাদেশ সফরে আগমন করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠন কার্যে কি পরিমাণ সাহায্যের প্রয়োজন তা জরিপ করার জন্য বিশ্বব্যাংকের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। জনাব সিদ্দিকী বলেন যে, সাবেক পূর্বপাকিস্তানের বিশ্বব্যাংকের কতিপয় প্রকল্পের কাজ চলছিল এবং বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। ঐ সকল প্রকল্পের মধ্যে ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে এবং ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন প্রকল্প।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২