গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবরের ঢাকা প্রত্যাবর্তন

দলীয় শক্তি নিরূপণকল্পে পরিষদের জরুরি অধিবেশন আহ্বানের দাবি

ঢাকা; ২৪ জুলাই (এপিপি) : আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক দলের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালিশন পার্টিদ্বয়ের শক্তি নিরূপণ কল্পে প্রাদেশিক পরিষদের এক জরুরি অধিবেশন আহ্বান করার জন্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অদ্য প্রস্তাব করেন। অদ্য করাচী হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি সাংবাদিকদের বলেন জনাব আবু হোসেন। সরকারের মন্ত্রিসভাকে পরাজিত করিয়া আওয়ামী লীগ পরিষদে তাহার শক্তি ভালো রূপেই প্রদর্শন করিয়াছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালিশন পার্টিদ্বয়ের শক্তি নিরূপণের জন্য একটি কেবিনেট মিশন প্রেরণ করিতেছেন বলিয়া যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, উহার সম্পর্কে মতপ্রকাশের জন্য বলা হইলে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, তিনি তাহা বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, পরিষদই হইতেছে দলীয় শক্তি নিরূপণের একমাত্র স্থান। কিন্তু কেহ যদি উক্ত শাসনতান্ত্রিক রেওয়াজ ভঙ্গ করেন তবে এক দিন না এক দিন তাহাকে উহার ফল ভোগ করিতে হইবে। আওয়ামী লীগ সম্পাদক প্রস্তাবিত ইরান পাকিস্তান কনফেডারেশন গঠনের উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করিয়া বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনতা সর্বশক্তি লইয়া উহা প্রতিরোধ করিবে। পূর্ব পাকিস্তানকে সংখ্যালঘু প্রদেশে পরিণত করার জন্য উহা একটি ষড়যন্ত্র মাত্র।

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জুলাই ১৯৫৮

বিনা বিচারে আটক অর্ডিন্যান্স বাতিল কর : সংগ্রামলব্ধ ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষয় হোক সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বজ্রধ্বনি : স্বৈরাচারী প্রতিরোধের জন্য নেতৃবৃন্দের আহ্বান অবিলম্বে প্রদেশে পার্লামেন্টারি সরকারের পুনর্বহাল দাবি

শেখ মুজিবুর

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ইউনিটসমূহকে ১ আগস্ট নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্সবিরোধী দিবস পালনের আহ্বান জানাইয়া এক বিবৃতিতে বলেন :

অতি শীঘ্রই ১৯৩ ধারা প্রত্যাহৃত হইয়া প্রদেশে পার্লামেন্টারি সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর কর্তৃক দমনমূলক আটক অর্ডিন্যান্স জারিতে আমরা বিস্ময়ায়িত হইয়াছি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অপেক্ষা কায়েমি সার্থ সংরক্ষণের খাতিরে অতীতে বহুবার কালাকানুন ব্যবহৃত হয়েছে। কেন্দ্রীয়। সরকারের এইরূপ একটি আইন কার্যকরী রহিয়াছে তদসত্ত্বেও ইহা আমি বুঝিতে পারিতেছি না দেশে এমন কি অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে যাহার জন্য এই অর্ডিন্যান্স জারি করা আবশ্যক হইল? এই রূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে যে, করাচীর কুচক্রী মহল পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও কার্যকারিতা দমন করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেই জন্যও সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবর্গকে অগ্রাহ্য করিয়া প্রদেশে ৯৩ ধারা জারি করিয়াছেন এবং এখন মৌলিক নাগরিক অধিকার হরণ করিয়া প্রেসিডেন্ট শাসনের আড়ালে এই অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছেন। আমি কি জিজ্ঞাসা করিতে পারি এই অর্ডিন্যান্সের অবর্তমানে দেশে এমন কি মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে? তীব্র ভাষায় আমি ইহার নিন্দা না করিয়া পারি না। জনসাধারণ ইহাকে হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলিয়াই মনে করে। মুসলীম লীগ আমলের ঘৃণ্য দমনমূলক ব্যবস্থা আজও আমাদের স্মৃতিতে জাগরুক। উপরোক্ত পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সকল ইউনিটগুলিকে আমি ১ আগস্ট সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠান করিয়া নিবর্তনমূলক আটকবিরোধী দিবসরূপে পালনের আহ্বান জানাইতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ২৭ জুলাই ১৯৫৮

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবরের ঢাকা প্রত্যাবর্তন

দলীয় শক্তি নিরূপণকল্পে পরিষদের জরুরি অধিবেশন আহ্বানের দাবি

ঢাকা; ২৪ জুলাই (এপিপি) : আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক দলের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালিশন পার্টিদ্বয়ের শক্তি নিরূপণ কল্পে প্রাদেশিক পরিষদের এক জরুরি অধিবেশন আহ্বান করার জন্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অদ্য প্রস্তাব করেন। অদ্য করাচী হইতে প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি সাংবাদিকদের বলেন জনাব আবু হোসেন। সরকারের মন্ত্রিসভাকে পরাজিত করিয়া আওয়ামী লীগ পরিষদে তাহার শক্তি ভালো রূপেই প্রদর্শন করিয়াছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালিশন পার্টিদ্বয়ের শক্তি নিরূপণের জন্য একটি কেবিনেট মিশন প্রেরণ করিতেছেন বলিয়া যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, উহার সম্পর্কে মতপ্রকাশের জন্য বলা হইলে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, তিনি তাহা বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, পরিষদই হইতেছে দলীয় শক্তি নিরূপণের একমাত্র স্থান। কিন্তু কেহ যদি উক্ত শাসনতান্ত্রিক রেওয়াজ ভঙ্গ করেন তবে এক দিন না এক দিন তাহাকে উহার ফল ভোগ করিতে হইবে। আওয়ামী লীগ সম্পাদক প্রস্তাবিত ইরান পাকিস্তান কনফেডারেশন গঠনের উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করিয়া বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনতা সর্বশক্তি লইয়া উহা প্রতিরোধ করিবে। পূর্ব পাকিস্তানকে সংখ্যালঘু প্রদেশে পরিণত করার জন্য উহা একটি ষড়যন্ত্র মাত্র।

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জুলাই ১৯৫৮

বিনা বিচারে আটক অর্ডিন্যান্স বাতিল কর : সংগ্রামলব্ধ ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষয় হোক সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বজ্রধ্বনি : স্বৈরাচারী প্রতিরোধের জন্য নেতৃবৃন্দের আহ্বান অবিলম্বে প্রদেশে পার্লামেন্টারি সরকারের পুনর্বহাল দাবি

শেখ মুজিবুর

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ইউনিটসমূহকে ১ আগস্ট নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্সবিরোধী দিবস পালনের আহ্বান জানাইয়া এক বিবৃতিতে বলেন :

অতি শীঘ্রই ১৯৩ ধারা প্রত্যাহৃত হইয়া প্রদেশে পার্লামেন্টারি সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর কর্তৃক দমনমূলক আটক অর্ডিন্যান্স জারিতে আমরা বিস্ময়ায়িত হইয়াছি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অপেক্ষা কায়েমি সার্থ সংরক্ষণের খাতিরে অতীতে বহুবার কালাকানুন ব্যবহৃত হয়েছে। কেন্দ্রীয়। সরকারের এইরূপ একটি আইন কার্যকরী রহিয়াছে তদসত্ত্বেও ইহা আমি বুঝিতে পারিতেছি না দেশে এমন কি অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে যাহার জন্য এই অর্ডিন্যান্স জারি করা আবশ্যক হইল? এই রূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে যে, করাচীর কুচক্রী মহল পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও কার্যকারিতা দমন করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেই জন্যও সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবর্গকে অগ্রাহ্য করিয়া প্রদেশে ৯৩ ধারা জারি করিয়াছেন এবং এখন মৌলিক নাগরিক অধিকার হরণ করিয়া প্রেসিডেন্ট শাসনের আড়ালে এই অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছেন। আমি কি জিজ্ঞাসা করিতে পারি এই অর্ডিন্যান্সের অবর্তমানে দেশে এমন কি মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে? তীব্র ভাষায় আমি ইহার নিন্দা না করিয়া পারি না। জনসাধারণ ইহাকে হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলিয়াই মনে করে। মুসলীম লীগ আমলের ঘৃণ্য দমনমূলক ব্যবস্থা আজও আমাদের স্মৃতিতে জাগরুক। উপরোক্ত পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সকল ইউনিটগুলিকে আমি ১ আগস্ট সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠান করিয়া নিবর্তনমূলক আটকবিরোধী দিবসরূপে পালনের আহ্বান জানাইতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ২৭ জুলাই ১৯৫৮