করোনাভাইরাস

আতঙ্কিত নয় সতর্ক থাকুন

ভাইরাস প্রবেশ রোধে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরে বিশেষ পর্যবেক্ষণে চীনফেরত যাত্রীরা

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। তারা জানান, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, ভয়ের কোন কারণ নাই। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভাইরাসটি যেন কোনভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি। অন্যদিকে, চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তারা যেখানে থাকেন, সেখানে মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে বেশি মনিটরিং হচ্ছে বিমানবন্দরে। এ সময় যারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন তাদেরও ১৪ দিন মনিটরিং করা হবে। গত ১৫ দিনে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২৮০৫ জন লোক চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এই কয়দিনে ৭৫৭০ জন নাগরিক নিজ দেশে গিয়েছেন, তারা ১৫ দিন পর ফিরে আসার কথা রয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে-ভাইরাসটি যেন কোনভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে চেকপোস্ট, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি। বিমানবন্দরের প্রতি নজর রাখছি বেশি। করোনাভাইরাস বহনকারী কেউ যদি দেশে প্রবেশ করেই ফেলে, সেটি ঠেকাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড খুলেছি। কোন রোগী শনাক্ত হলে এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় সিভিল সার্জন, ডিসি এবং এসপিকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, কুর্মিটোলায় দুইশ’ চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

১. আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকুন।

২. বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া।

৩. জীবিত বা মৃত গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকা।

৪. কাশি ও হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা। টিস্যু ব্যবহার ও তা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।

৫. যেখানে সেখানে কফ-কাশি না ফেলা।

৬. ঘরের বাইরে গেলে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করা। সামাজিক প্রয়োজনে হাত মেলাতে বা খাওয়ার জন্য গ্লাভস বা হাতমোজা খুলতেও হয়, ওই হাতে মুখ চোখ নাক স্পর্শ করা যাবে না। আবার গ্লাভস পরার আগে অবশ্যই গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।

৭. গ্লাভস বা হাতমোজা পরে একবার বাইরে গেলে, তা ভালোভাবে পরিষ্কার না করে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার না করা।

৮. একই মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে।

৯. বাসায় টয়লেট আর কিচেন থেকে পুরনো তোয়ালে সরিয়ে ফেলতে হবে। তোয়ালে নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

১০. সম্ভব হলে গ্লাভস পরে দরজা খোলা বা বন্ধ করা। একই ধরনের সতর্কতা দেখাতে হবে সিঁড়ির রেলিং, কম্পিউটার কি-বোর্ড আর মাউস, ল্যাপটপ, কলম, বাচ্চাদের খেলনা ব্যবহারে।

১১. অন্যের ব্যবহৃত সামগ্রী ধরার পর এরপর অবশ্যই হাত ধোয়ার আগে নাখ, মুখ বা চোখ ছোঁবেন না।

১২) মাংস, ডিম বা শাকসব্জি ভালোভাবে ধুয়ে এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে কোনভাবে কাঁচা না থাকে। সেই সঙ্গে প্রচুর তরল পান করা।

১৩) করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন।

১৪) রোগীকে অবশ্যই আইসোলেটেড থাকতে হবে।

১৫) তরল ও পুষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

১৬) চীন থেকে কেউ এলে তাকে কমপক্ষে ১৪ দিন আইসোলেটেডে রাখতে হবে। কারও সঙ্গে দেখা হলে হ্যান্ডশেক, জড়াজড়ি, কোলাকুলির বদলে হাই-হ্যালো বলতে হবে।

ডাব্লিউএইচও-এর গাইডলাইন অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশের সব হাসপাতালে এই গাইডলাইন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চীনের উহান রাজ্যে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশটির একশ’ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার। এই ভাইরাস পশু থেকে মানুষের দেহে আসে এবং ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, ইঁদুর-বাদুড় থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। ভারইরাসটি খুবই সংক্রামক। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, কেউ আক্রান্ত হলে বেশি মাত্রায় জ্বর হবে, কাশি হবে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ধরনের কোন রোগী আমরা পাইনি।

এদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ইমার্জেন্সি অব এ নিউ করোনাভাইরাস’ শীর্ষক জরুরি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএমএমইউর বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকরা ভাইরাসটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেমিনারে বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ করোনাভাইরাসের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন। ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের উহান শহরের সি-ফুড (সামুদ্রিক খাবার) মার্কেটে পশু-পাখি থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ যারা এ রোগে প্রথম দিকে আক্রান্ত হন তারা সবাই চাইনিজ নিউ ইয়ারের প্রস্তুতির জন্য কেনাকাটা করতে সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এ ভাইরাসে নিহত প্রথম ব্যক্তি সেই সি-ফুড মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি বলেন, কোবরা সাপ নাকি বাদুড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে-এ নিয়ে এখনও দুই রকম মত রয়েছে। তবে পশু-পাখি বা স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে ছড়িয়েছে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশি,শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের এই চিকিৎসক বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, শরীরে দুর্বলতা, ডায়রিয়া। এ ভাইরাসে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়। পরে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, আক্রান্তদের অবশ্যই আইসোলেটেড (আবদ্ধ ঘরে, আলাদা) থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সম্প্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের কারও যদি এমন লক্ষণ থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে তিনি সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ও নাকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেন। সেমিনারে একজন প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা সাপ খায়। তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। উত্তরে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের গবেষকরা বলছেন, একটি সাপের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। আবার অনেকে বলেন, যে সাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেই সাপটি ভাইরাসে আক্রান্ত একটি বাদুড় খেয়েছিল।

image
আরও খবর
চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা আপাতত দেশে ফিরতে পারছে না
ভোটগ্রহণ প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে : প্রচারণা তুঙ্গে
১১শ’ চীনা শ্রমিকের স্বদেশে যাওয়া-আসায় নিষেধাজ্ঞা
ঢাবির ৬৭ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার
আটজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল
১৩টি দেশে আক্রান্তের সন্ধান লাভ
যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতরা ইভিএম দেখে সন্তুষ্ট : ইসি সচিব
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বাসযোগ্য নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি
টাঙ্গাইলে ৩ স্কুলছাত্রী ধর্ষণ দু’জনের স্বীকারোক্তি
১২ দিনে ২ হাজার ৪৭২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য
ভোটকেন্দ্র দখল নিতে বিএনপি অস্ত্রধারীদের ঢাকায় আনছে : কাদের
শিশুসহ ৫ জন নিহত
ক্ষণগণনা

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

আতঙ্কিত নয় সতর্ক থাকুন

ভাইরাস প্রবেশ রোধে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরে বিশেষ পর্যবেক্ষণে চীনফেরত যাত্রীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। তারা জানান, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, ভয়ের কোন কারণ নাই। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভাইরাসটি যেন কোনভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি। অন্যদিকে, চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তারা যেখানে থাকেন, সেখানে মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে বেশি মনিটরিং হচ্ছে বিমানবন্দরে। এ সময় যারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন তাদেরও ১৪ দিন মনিটরিং করা হবে। গত ১৫ দিনে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২৮০৫ জন লোক চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এই কয়দিনে ৭৫৭০ জন নাগরিক নিজ দেশে গিয়েছেন, তারা ১৫ দিন পর ফিরে আসার কথা রয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে-ভাইরাসটি যেন কোনভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে চেকপোস্ট, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি। বিমানবন্দরের প্রতি নজর রাখছি বেশি। করোনাভাইরাস বহনকারী কেউ যদি দেশে প্রবেশ করেই ফেলে, সেটি ঠেকাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড খুলেছি। কোন রোগী শনাক্ত হলে এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় সিভিল সার্জন, ডিসি এবং এসপিকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, কুর্মিটোলায় দুইশ’ চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

১. আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে দুই হাত দূরে থাকুন।

২. বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া।

৩. জীবিত বা মৃত গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকা।

৪. কাশি ও হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা। টিস্যু ব্যবহার ও তা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।

৫. যেখানে সেখানে কফ-কাশি না ফেলা।

৬. ঘরের বাইরে গেলে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করা। সামাজিক প্রয়োজনে হাত মেলাতে বা খাওয়ার জন্য গ্লাভস বা হাতমোজা খুলতেও হয়, ওই হাতে মুখ চোখ নাক স্পর্শ করা যাবে না। আবার গ্লাভস পরার আগে অবশ্যই গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।

৭. গ্লাভস বা হাতমোজা পরে একবার বাইরে গেলে, তা ভালোভাবে পরিষ্কার না করে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার না করা।

৮. একই মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে।

৯. বাসায় টয়লেট আর কিচেন থেকে পুরনো তোয়ালে সরিয়ে ফেলতে হবে। তোয়ালে নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

১০. সম্ভব হলে গ্লাভস পরে দরজা খোলা বা বন্ধ করা। একই ধরনের সতর্কতা দেখাতে হবে সিঁড়ির রেলিং, কম্পিউটার কি-বোর্ড আর মাউস, ল্যাপটপ, কলম, বাচ্চাদের খেলনা ব্যবহারে।

১১. অন্যের ব্যবহৃত সামগ্রী ধরার পর এরপর অবশ্যই হাত ধোয়ার আগে নাখ, মুখ বা চোখ ছোঁবেন না।

১২) মাংস, ডিম বা শাকসব্জি ভালোভাবে ধুয়ে এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে কোনভাবে কাঁচা না থাকে। সেই সঙ্গে প্রচুর তরল পান করা।

১৩) করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন।

১৪) রোগীকে অবশ্যই আইসোলেটেড থাকতে হবে।

১৫) তরল ও পুষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

১৬) চীন থেকে কেউ এলে তাকে কমপক্ষে ১৪ দিন আইসোলেটেডে রাখতে হবে। কারও সঙ্গে দেখা হলে হ্যান্ডশেক, জড়াজড়ি, কোলাকুলির বদলে হাই-হ্যালো বলতে হবে।

ডাব্লিউএইচও-এর গাইডলাইন অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশের সব হাসপাতালে এই গাইডলাইন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চীনের উহান রাজ্যে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশটির একশ’ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার। এই ভাইরাস পশু থেকে মানুষের দেহে আসে এবং ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, ইঁদুর-বাদুড় থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। ভারইরাসটি খুবই সংক্রামক। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, কেউ আক্রান্ত হলে বেশি মাত্রায় জ্বর হবে, কাশি হবে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ধরনের কোন রোগী আমরা পাইনি।

এদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ইমার্জেন্সি অব এ নিউ করোনাভাইরাস’ শীর্ষক জরুরি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএমএমইউর বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকরা ভাইরাসটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেমিনারে বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ করোনাভাইরাসের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন। ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের উহান শহরের সি-ফুড (সামুদ্রিক খাবার) মার্কেটে পশু-পাখি থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ যারা এ রোগে প্রথম দিকে আক্রান্ত হন তারা সবাই চাইনিজ নিউ ইয়ারের প্রস্তুতির জন্য কেনাকাটা করতে সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এ ভাইরাসে নিহত প্রথম ব্যক্তি সেই সি-ফুড মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি বলেন, কোবরা সাপ নাকি বাদুড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে-এ নিয়ে এখনও দুই রকম মত রয়েছে। তবে পশু-পাখি বা স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে ছড়িয়েছে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশি,শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের এই চিকিৎসক বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, শরীরে দুর্বলতা, ডায়রিয়া। এ ভাইরাসে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়। পরে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, আক্রান্তদের অবশ্যই আইসোলেটেড (আবদ্ধ ঘরে, আলাদা) থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সম্প্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের কারও যদি এমন লক্ষণ থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে তিনি সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ও নাকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেন। সেমিনারে একজন প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা সাপ খায়। তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। উত্তরে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের গবেষকরা বলছেন, একটি সাপের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। আবার অনেকে বলেন, যে সাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সেই সাপটি ভাইরাসে আক্রান্ত একটি বাদুড় খেয়েছিল।