বেশ কিছুদিন ধরে আমরা এমন কিছু অপরাধ সমাজে দেখতে পাচ্ছি যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বলা যায় গত কয়েকদিন আগে ধর্ষণের পর ধর্ষকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে। এই চরম মাত্রার সামাজিক অবক্ষয়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক অনুশাসনের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনের অভাব। ভাবার বিষয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে এক্ষেত্রে।
প্রতিটি ব্যাক্তির আচার-আচরণের মূল ভিত্তি গড়ে উঠে পরিবার থেকে, ক্রমান্বয়ে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিবেশী এবং সমাজব্যবস্থা থেকে ভূমিকা নেয়। পরিবার কি তাহলে তার নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে, সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি সুশিক্ষা এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার তাগিদে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ হতে পারে অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব এবং প্রযুক্তির অত্যাধিক সহজলভ্যতা। আমরা জানি যে সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা ভৌগলিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্ম নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধকে ভিন্ন মাপকাঠিতে পরিমাপ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিগত কল্যাণে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বিদেশি অনুকরণপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন অপসংস্কৃতির প্রভাব আমাদের সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। অপ-সংস্কৃতির সহজলভ্যতা যা প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে তা সামাজিক অবক্ষয় ঘটাতে সাহায্য করছে।
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সাম্প্রতিক একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় একটি অপরাধ সংগঠিত হবার পর, পরপর একই অপরাধ কিছুদিন সংগঠিত হতে থাকে, অপরাধীরা যেন উৎসাহীত হয়ে থাকে, এর একটি উল্লেখ্যযোগ্য কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। আমাদের দেশে অপরাধ সংগঠিত হবার পর প্রবল জনরোষ ব্যতীত আইনশৃঙখলা বাহিনীর তৎপরতা ততটা দেখা যায় না। এছাড়া আইনের জটিলতা এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে নতুন আইন সংশোধন না করাও একটি কারন। মাঝেমাঝে অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রাধান্য, প্রভাব প্রতিপত্তির অজুহাতে বিচারে গাফিলতি হবার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাই এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রথমত সব ধরনের আইনি জটিলতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপসারণ এবং কঠোর শাস্তির জন্য নতুন আইন তৈরি করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পরিবার যেহেতু ব্যক্তির সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান তাই বাবা-মাকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মাকে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে সেই মনমানসিকতা পরিহার করে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকেই যেন নৈতিকতা এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় সরকারকে সেদিকে সুদৃষ্টি দেয়া উচিত।
আয়শা আক্তার নিশু
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১
বেশ কিছুদিন ধরে আমরা এমন কিছু অপরাধ সমাজে দেখতে পাচ্ছি যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বলা যায় গত কয়েকদিন আগে ধর্ষণের পর ধর্ষকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে। এই চরম মাত্রার সামাজিক অবক্ষয়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক অনুশাসনের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনের অভাব। ভাবার বিষয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে এক্ষেত্রে।
প্রতিটি ব্যাক্তির আচার-আচরণের মূল ভিত্তি গড়ে উঠে পরিবার থেকে, ক্রমান্বয়ে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিবেশী এবং সমাজব্যবস্থা থেকে ভূমিকা নেয়। পরিবার কি তাহলে তার নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে, সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি সুশিক্ষা এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার তাগিদে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক অবক্ষয়ের আরেকটি কারণ হতে পারে অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব এবং প্রযুক্তির অত্যাধিক সহজলভ্যতা। আমরা জানি যে সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা ভৌগলিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ধর্ম নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধকে ভিন্ন মাপকাঠিতে পরিমাপ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিগত কল্যাণে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বিদেশি অনুকরণপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন অপসংস্কৃতির প্রভাব আমাদের সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। অপ-সংস্কৃতির সহজলভ্যতা যা প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে তা সামাজিক অবক্ষয় ঘটাতে সাহায্য করছে।
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সাম্প্রতিক একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় একটি অপরাধ সংগঠিত হবার পর, পরপর একই অপরাধ কিছুদিন সংগঠিত হতে থাকে, অপরাধীরা যেন উৎসাহীত হয়ে থাকে, এর একটি উল্লেখ্যযোগ্য কারণ হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। আমাদের দেশে অপরাধ সংগঠিত হবার পর প্রবল জনরোষ ব্যতীত আইনশৃঙখলা বাহিনীর তৎপরতা ততটা দেখা যায় না। এছাড়া আইনের জটিলতা এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে নতুন আইন সংশোধন না করাও একটি কারন। মাঝেমাঝে অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রাধান্য, প্রভাব প্রতিপত্তির অজুহাতে বিচারে গাফিলতি হবার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাই এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রথমত সব ধরনের আইনি জটিলতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপসারণ এবং কঠোর শাস্তির জন্য নতুন আইন তৈরি করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পরিবার যেহেতু ব্যক্তির সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান তাই বাবা-মাকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মাকে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে সেই মনমানসিকতা পরিহার করে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকেই যেন নৈতিকতা এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় সরকারকে সেদিকে সুদৃষ্টি দেয়া উচিত।
আয়শা আক্তার নিশু
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়