গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

প্রতিবাদ দিবসের জনসভা অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতি

শেখ মুজিবের বিবৃতিতে তীব্র সমালোচনা

পূর্ব পাকিস্তান নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্স জারির প্রতিবাদে আগামীকল্য ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহূত ‘প্রতিবাদ দিবস’ উপলক্ষে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য সরকার অনুমতি দান না করায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (বুধবার) তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিয়া এক বিবৃতি দান করেন। বিবৃতিটিতে তিনি বলেন, শহরে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের নিকট তিনি অনুমতি প্রার্থনা করিলে সরকার সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল থাকা সত্ত্বেও প্রথমে সভার উদ্দেশ্য উদ্ধৃত না থাকার অজুহাতে উক্ত আবেদনপত্র নামঞ্জুর করিয়া দেন। পরে সভার উদ্দেশ্য উদ্ধৃত করিয়া পুনরায় আবেদন করা হইলে সরকার অত্যন্ত বাজে অজুহাত দেখাইয়া তাহা নামঞ্জুর করেন। শেখ মুজিবুর রহমান আরও জানান, প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারি হইলে আওয়ামী লীগ উহার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জ্ঞাপনার্থে জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে সরকার পূর্বাহ্নে অনুমতি দান করা সত্ত্বেও ৪৪ ধারা জারি করিয়া উক্ত জনসভা বন্ধ করিয়া দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন বানচালের জন্য কোন অদৃশ্য হস্ত যবনিকার অন্তরালে তৎপর রহিয়াছে, তিনি জানেন না। তবে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী কার্যাবলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের জন্য আওয়ামী লীগকে জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি দান না করা অব্যাহত থাকিলে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে বাধ্য হইবে। বিবৃতিতে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণকল্পে অদ্য (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় অফিসে আমি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি অধিবেশন আহ্বান করিতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ১ আগস্ট ১৯৫৮

নয়া করের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব

খুলনা, ৬ আগস্ট (এপিপি) : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এখানে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে নয়া কর ধার্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ বর্তমানে আর কোন কর দিতে অক্ষম। দেশের উভয়াংশে সম্পদ বণ্টনে চরম বৈষম্য সৃষ্টির জন্য মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়া তিনি বলেন, মুসলিম লীগ ইসলামের নামে জনসাধারণকে শোষণ করিয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ৭ আগস্ট ১৯৫৮

নাটোর আওয়ামী লীগ নির্বাচন

হট্টোগলের মধ্যে পরিসমাপ্ত

সংবাদদাতা প্রেরিত : রাজশাহী, ৮ আগস্ট

আওয়ামী লীগের সূত্রে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বিগত ১ আগস্ট বিরাট হট্টগোলের মধ্য দিয়া নাটোর মহাকুমা আওয়ামী লীগের নির্বাচনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

জানা গিয়াছে যে, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জনাব মুজিবুর রহমান এমপিএ তাহার নিজের নেতৃত্বে কোটারি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে উক্ত নির্বাচনে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা জনাব কাঞ্চন উদ্দিন এমপি একে সমর্থন দান করিতে চাহিলেই গ-গোলের সূত্রপাত হয়। ফলে জনাব মুজিবুর রহমানের মতলব ভেস্তে যায় এবং কাউন্সিলারদের নিকট নাজেহাল হইয়া তিনি নির্বাচন স্থান ত্যাগ করিয়া কাটিয়া পড়েন। আওয়ামী লীগের অপর এক মহলের খবরে প্রকাশ, আগামী ২৪ আগস্ট তারিখে নাটোর মহাকুমা কমিটির নির্বাচনের তারিখ পুনরায় ধার্য করা হইয়াছে। তবে ঘটনাস্রোত কোন দিকে গিয়া দাঁড়ায় তাহা বলা কঠিন।

এখানে আরও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত ১৯ জুলাই তারিখে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সদর মহাকুমা আওয়ামী লীগের নির্বাচনও হৈ চৈর মধ্যে শেষ হয়। মোট ৬ জন কাউন্সিলারের মধ্যে নির্বাচনী সভায় উপস্থিত ৩২ জন সদস্য স্বল্পকালীন সময়ে নির্বাচনের নোটিস দানও অন্যান্য গঠনতন্ত্রে বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান।

দৈনিক সংবাদ : ১১ আগস্ট ১৯৫৮

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

প্রতিবাদ দিবসের জনসভা অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতি

শেখ মুজিবের বিবৃতিতে তীব্র সমালোচনা

পূর্ব পাকিস্তান নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্স জারির প্রতিবাদে আগামীকল্য ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহূত ‘প্রতিবাদ দিবস’ উপলক্ষে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য সরকার অনুমতি দান না করায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (বুধবার) তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিয়া এক বিবৃতি দান করেন। বিবৃতিটিতে তিনি বলেন, শহরে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের নিকট তিনি অনুমতি প্রার্থনা করিলে সরকার সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল থাকা সত্ত্বেও প্রথমে সভার উদ্দেশ্য উদ্ধৃত না থাকার অজুহাতে উক্ত আবেদনপত্র নামঞ্জুর করিয়া দেন। পরে সভার উদ্দেশ্য উদ্ধৃত করিয়া পুনরায় আবেদন করা হইলে সরকার অত্যন্ত বাজে অজুহাত দেখাইয়া তাহা নামঞ্জুর করেন। শেখ মুজিবুর রহমান আরও জানান, প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারি হইলে আওয়ামী লীগ উহার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জ্ঞাপনার্থে জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে সরকার পূর্বাহ্নে অনুমতি দান করা সত্ত্বেও ৪৪ ধারা জারি করিয়া উক্ত জনসভা বন্ধ করিয়া দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন বানচালের জন্য কোন অদৃশ্য হস্ত যবনিকার অন্তরালে তৎপর রহিয়াছে, তিনি জানেন না। তবে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী কার্যাবলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের জন্য আওয়ামী লীগকে জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি দান না করা অব্যাহত থাকিলে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে বাধ্য হইবে। বিবৃতিতে শেখ মুজিবর রহমান বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণকল্পে অদ্য (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় অফিসে আমি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি অধিবেশন আহ্বান করিতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ১ আগস্ট ১৯৫৮

নয়া করের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব

খুলনা, ৬ আগস্ট (এপিপি) : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এখানে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে নয়া কর ধার্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ বর্তমানে আর কোন কর দিতে অক্ষম। দেশের উভয়াংশে সম্পদ বণ্টনে চরম বৈষম্য সৃষ্টির জন্য মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়া তিনি বলেন, মুসলিম লীগ ইসলামের নামে জনসাধারণকে শোষণ করিয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ৭ আগস্ট ১৯৫৮

নাটোর আওয়ামী লীগ নির্বাচন

হট্টোগলের মধ্যে পরিসমাপ্ত

সংবাদদাতা প্রেরিত : রাজশাহী, ৮ আগস্ট

আওয়ামী লীগের সূত্রে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বিগত ১ আগস্ট বিরাট হট্টগোলের মধ্য দিয়া নাটোর মহাকুমা আওয়ামী লীগের নির্বাচনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

জানা গিয়াছে যে, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জনাব মুজিবুর রহমান এমপিএ তাহার নিজের নেতৃত্বে কোটারি কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে উক্ত নির্বাচনে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা জনাব কাঞ্চন উদ্দিন এমপি একে সমর্থন দান করিতে চাহিলেই গ-গোলের সূত্রপাত হয়। ফলে জনাব মুজিবুর রহমানের মতলব ভেস্তে যায় এবং কাউন্সিলারদের নিকট নাজেহাল হইয়া তিনি নির্বাচন স্থান ত্যাগ করিয়া কাটিয়া পড়েন। আওয়ামী লীগের অপর এক মহলের খবরে প্রকাশ, আগামী ২৪ আগস্ট তারিখে নাটোর মহাকুমা কমিটির নির্বাচনের তারিখ পুনরায় ধার্য করা হইয়াছে। তবে ঘটনাস্রোত কোন দিকে গিয়া দাঁড়ায় তাহা বলা কঠিন।

এখানে আরও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত ১৯ জুলাই তারিখে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সদর মহাকুমা আওয়ামী লীগের নির্বাচনও হৈ চৈর মধ্যে শেষ হয়। মোট ৬ জন কাউন্সিলারের মধ্যে নির্বাচনী সভায় উপস্থিত ৩২ জন সদস্য স্বল্পকালীন সময়ে নির্বাচনের নোটিস দানও অন্যান্য গঠনতন্ত্রে বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান।

দৈনিক সংবাদ : ১১ আগস্ট ১৯৫৮