ফুলপুর এলএসডির ওসির বিরুদ্ধে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ

ফুলপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামালের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। তিনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সভাপতি হওয়ায় তিনি দাপুটে কর্মকর্তা। ধান সংগ্রহে রয়েছে তার সিন্ডিকেট প্রীতি। ময়মনসিংহ জেলায় একযুগ ধরে কর্মরত থাকায় তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত অর্থবছরে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এতে কৃষক স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, তিনি ফুলপুর ওসিএল এসডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তারাকান্দা, ধানীখলা, ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুরে ওসিএলএসডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে নিয়ম রক্ষার জন্য কয়েক মাস অন্যপদে তাকে রাখা হলেও তিনি একই পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফুলপুর ওসিএলএসডি শাহ কামালের অনিয়ম, দুনীতির ওপর লিখিত অভিযোগ করেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতবছর নবেম্বরে জেলা প্রশাসন তদন্তে নামেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম গত ২০১৯ সালে ১১ নভেম্বর তারিখে ওসিএলএসডিকে নোটিস দেন। সূত্র জানায়, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

জানা যায়, এবারও তিনি কৃষককে উপেক্ষা করে সিন্ডকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ শুরু করছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে টনপ্রতি ২৮০০ টাকা করে উৎকোচ নিচ্ছেন।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ফুলপুর উপজেলায় মোট কৃষকের সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৯২ জন। এর মধ্যে লটারির মাধ্যমে চলিত ১৯-২০ অর্থবছরে সংগ্রহে জন্য ৪ হাজার ৫৩৩ জনকে বাছাই করা হয়।

বাছাই করা চাষিদের মধ্যে ক্ষুদ্র চাষি ১ হাজার ৮১৩ জন, প্রান্তিক ১ হাজার ৩৬০ জন, মাঝারি ৫৪৪ জন, ভূমিহীন কৃষক ৭৭১ জন, বড় চাষি ৪৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তন্মেধ্যে মাঝারি ৫৪৪ আর বড় কৃষক ৪৫ জন নিয়ে ৫৮৯ জনের ঘরে ধান বিক্রির সক্ষমতা রয়েছে। বাকি ৩ হাজার ৯৪৪ জনের ঘরে খাবার ধান ব্যতীত বিক্রির ধান না থাকায় এ সব কৃষকের কার্ড সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সিন্ডিকেট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বদলে কৃষকদের ৪শত ৫শত টাকা দিয়ে সেইসব কার্ডে ১ টন করে দান সংগ্রহের নামে টনে প্রায় ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট ও গুদাম কর্মকর্তা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বউলা এবং রুপসী ইউনিয়ন থেকে নিয়োজিত সিন্ডিকেট ২৩ জন কৃষকের কার্ড হাতিয়ে নেয়। বালিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে এদের নামের বিপরীতে ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে ধানের মূল্য বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের দেয়া হয়নি এক কানাকড়িও। কৃষকরা হলো বউলা ইউনিয়নের মোজাম্মেল হোসেন, আলাল উদ্দিন, দুলাল মিয়া, তমিজ খাঁ, স্বপন মিয়া, রিপন মিয়া, মো. ফারুক আ. রহমান, হাসেম খান, আব্দুল বাসার, দিদারুল ইসলাম, আমেনা খাতুন, মোছলেম উদ্দিন, রিপন মিয়া, খোকন মিয়া, এখলাছ উদ্দিন, লিপি আক্তার, মনোয়ারা খাতুন, বজলু কবীর এবং রুপসী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, মঞ্জুরুল হক, আজিজুল হক এবং শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

ফুলপুর এলএসডির ওসির বিরুদ্ধে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধি তারাকান্দা, ফুলপুর (ময়মনসিংহ)

ফুলপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামালের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। তিনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সভাপতি হওয়ায় তিনি দাপুটে কর্মকর্তা। ধান সংগ্রহে রয়েছে তার সিন্ডিকেট প্রীতি। ময়মনসিংহ জেলায় একযুগ ধরে কর্মরত থাকায় তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত অর্থবছরে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এতে কৃষক স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, তিনি ফুলপুর ওসিএল এসডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তারাকান্দা, ধানীখলা, ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুরে ওসিএলএসডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে নিয়ম রক্ষার জন্য কয়েক মাস অন্যপদে তাকে রাখা হলেও তিনি একই পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফুলপুর ওসিএলএসডি শাহ কামালের অনিয়ম, দুনীতির ওপর লিখিত অভিযোগ করেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতবছর নবেম্বরে জেলা প্রশাসন তদন্তে নামেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম গত ২০১৯ সালে ১১ নভেম্বর তারিখে ওসিএলএসডিকে নোটিস দেন। সূত্র জানায়, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

জানা যায়, এবারও তিনি কৃষককে উপেক্ষা করে সিন্ডকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ শুরু করছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে টনপ্রতি ২৮০০ টাকা করে উৎকোচ নিচ্ছেন।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ফুলপুর উপজেলায় মোট কৃষকের সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৯২ জন। এর মধ্যে লটারির মাধ্যমে চলিত ১৯-২০ অর্থবছরে সংগ্রহে জন্য ৪ হাজার ৫৩৩ জনকে বাছাই করা হয়।

বাছাই করা চাষিদের মধ্যে ক্ষুদ্র চাষি ১ হাজার ৮১৩ জন, প্রান্তিক ১ হাজার ৩৬০ জন, মাঝারি ৫৪৪ জন, ভূমিহীন কৃষক ৭৭১ জন, বড় চাষি ৪৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তন্মেধ্যে মাঝারি ৫৪৪ আর বড় কৃষক ৪৫ জন নিয়ে ৫৮৯ জনের ঘরে ধান বিক্রির সক্ষমতা রয়েছে। বাকি ৩ হাজার ৯৪৪ জনের ঘরে খাবার ধান ব্যতীত বিক্রির ধান না থাকায় এ সব কৃষকের কার্ড সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সিন্ডিকেট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বদলে কৃষকদের ৪শত ৫শত টাকা দিয়ে সেইসব কার্ডে ১ টন করে দান সংগ্রহের নামে টনে প্রায় ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট ও গুদাম কর্মকর্তা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বউলা এবং রুপসী ইউনিয়ন থেকে নিয়োজিত সিন্ডিকেট ২৩ জন কৃষকের কার্ড হাতিয়ে নেয়। বালিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে এদের নামের বিপরীতে ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে ধানের মূল্য বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের দেয়া হয়নি এক কানাকড়িও। কৃষকরা হলো বউলা ইউনিয়নের মোজাম্মেল হোসেন, আলাল উদ্দিন, দুলাল মিয়া, তমিজ খাঁ, স্বপন মিয়া, রিপন মিয়া, মো. ফারুক আ. রহমান, হাসেম খান, আব্দুল বাসার, দিদারুল ইসলাম, আমেনা খাতুন, মোছলেম উদ্দিন, রিপন মিয়া, খোকন মিয়া, এখলাছ উদ্দিন, লিপি আক্তার, মনোয়ারা খাতুন, বজলু কবীর এবং রুপসী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, মঞ্জুরুল হক, আজিজুল হক এবং শফিকুল ইসলাম। এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।