দক্ষিণের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ইশতেহার

তাপসের ৯০ দিনের, ইশরাকের ১০০ দিনের পরিকল্পনা

আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থীই আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়তে চান। বিভিন্ন ইস্যুতে নানা রকমের পরিকল্পনা থাকলেও কার্যত উন্নয়নের অভিন্ন ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তারা। ’আমাদের ঢাকা, আমাদের ঐতিহ্য’ স্লোগানকে সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। মৌলিক সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে ৯০ দিনের পরিকল্পনার কথা বলছেন তাপস। নাগরিক সমস্যা সমাধানে সল্পমেয়াদে ১০০ দিনের পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন ইশরাক।

’ঐতিহ্যে-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’ পাঁচটি রূপরেখায় ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তাপস। দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সেবা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ সব কিছুর সম্মিলনে বিশ্বমানের ঢাকা গড়তে ১৬ দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ইশরাক। নাগরিক সমস্যা সমাধানে দু’জনই ২৪ ঘণ্টা নিজেকে নিয়োজিত রাখার কথা জানিয়েছেন। বিভক্ত ঢাকায় ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হলেও পরবর্তীতে এই সিটিতে আরও ১৮টি ওয়ার্ড নতুনভাবে যুক্ত হয়। বর্তমানে দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি এই ওয়ার্ডগুলোর পাশাপাশি ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও ভোট হবে। দক্ষিণে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। এই সিটিতে সাতজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন তাপস ও ইশরাক। ভোটাররা অধীর আগ্রহে আছেন, নৌকা নাকি ধানের শীষের প্রার্থী মেয়র হবেন, তা জানার জন্য।

তাপস

গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তাপস। ফজলে নূর বলেন, অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত ও দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। এখন ‘ঐতিহ্যবাহী-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’র পথে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করব। দায়িত্বগ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যেই মৌলিক সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। তার দেয়া রুপরেখাগুলো হলো—

ঐতিহ্যের ঢাকা : ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অনন্য; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা উৎসবসহ রয়েছে স্বীয় সাংস্কৃতিক ধারা। মহাপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার স্বীয় গৌরবে সাজিয়ে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরব। ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগে যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি নির্মাণ করা হবে। পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে ‘ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সুন্দর ঢাকা : র্দীঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাড় ঘিরে বনায়ন ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বায়ু ও শব্দদূষণ রোধসহ শরীর ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, শরীর চর্চাকেন্দ্র এবং নারী-শিশু ও প্রবীণদের জন্যে হাঁটার উন্মুক্ত স্থান, আধুনিক মানের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্যান নির্মাণ, বাড়িতে ছাদ বাগানে উৎসাহ দান ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বাড়ানো, সাধারণ ও ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ব্যবস্থার ও বস্তিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনি কর্মসূচির আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। জলাধার সংরক্ষণে খালগুলো থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খনন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নর্দমা নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়কের উন্মুক্ত আবর্জনার স্তুপ প্রতিদিন অপসারণ করা হবে।

সচল ঢাকা : যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। তাই গণপরিবহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুত গতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীর গতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষের হাঁটার ব্যবস্থা করব। রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থাসহ নগর ঘুরে দেখার জন্য থাকবে ‘হপ অন হপ অফ’ বাস সেবা। নদীর পাড়ে থাকবে সুপ্রশস্ত রাস্তা, যেখানে পায়ে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, চলবে রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি। জনসাধারণের জন্য সড়কের পাশে উন্নত ওয়াশরুম নির্মাণ এবং হকারদের পুনর্বাসন করে পর্যায়ক্রমে ফুটপাত দখলমুক্ত করব।

সুশাসিত ঢাকা : এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধ সংশোধনকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হবে বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য খোলা থাকবে।

গৃহ কর বাড়ানো হবে না। হতদরিদ্রদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা; অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, বিনোদন ও চিকিৎসা সেবায় পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং স্থাপন করা হবে ডে-কেয়ার সেন্টার। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে প্রয়োজনে নিজস্ব দমকল বাহিনী গঠন ও ফায়ার হাইড্র্যান্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পাড়া-মহল্লায় অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি প্রবেশের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বছরের একটি সময় নির্দিষ্ট করে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর কাছে ‘বার্ষিক কাজের চাহিদাপত্র’ চাওয়া হবে। করপোরেশন কোন রাস্তা নির্মাণের পরে অন্তত তিন বছরের মধ্যে অন্য কোন সংস্থা ওই রাস্তা খনন করতে পারবে না। সহজে ও দ্রুত নাগরিক সেবা দিতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হবে। সপ্তাহে একদিন নগরবাসী মেয়রের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন।

উন্নত ঢাকা : দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ৩০ বছরমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার আওতায় পাঁচ বছরমেয়াদি নানা প্রকল্প হাতে নিয়ে ইমারত নির্মাণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও নগরীর উন্নতিসাধন করা হবে। ঢাকা দক্ষিণে যুক্ত নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ভালোভাবে প্রত্যেকটি সড়ক ও নর্দমার উন্নয়ন করা হবে, যাতে অন্তত ১০ বছর স্থায়িত্ব থাকে। জনসংখ্যার চাপ বিবেচনায় নিয়ে জমির যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত; জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সুব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোস্টেল গড়ে তোলা হবে। বাণিজ্য লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনপত্র, প্রত্যয়নপত্র, গৃহকর, পৌরকর, অন্যান্য করসমূহ তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার আওতায় আনা হবে। ঘরে বসেই কর এবং নির্ধারিত ক্ষেত্রে ফি পরিশোধ করা যাবে। নাগরিক সেবায় ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন, তথ্যসমৃদ্ধ নগর অ্যাপ, ই-লাইব্রেরি, নগর ভবনে নিয়ন্ত্রণকক্ষ রেখে বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ফ্রি ওয়াইফাই সেবা দেয়া হবে।

নিজের নির্বাচনী তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করে তিনি বলেন, আমাদের ঢাকা, আমাদের ঐতিহ্য- এই স্লোগানে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে উন্নত ঢাকা হিসাবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এই ঢাকা আমাদের সবার প্রাণের ঢাকা। আমি আশা করি, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে সুযোগ দেবেন।

ইশরাক

মঙ্গলবার ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশরাক ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে আধুনিক বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা পেলে বাস্তব প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ইশতেহারে নাগরিক সেবা, নাগরিক বিনোদন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ উন্নয়ন বনায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমাজসেবা কার্যক্রম, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা তুলে ধরেন। নির্বাচিত হলে সমন্বিত ও কার্যকর নগর সরকার ধারণা বাস্তবায়নে সক্রিয় উদ্যোগ নেয়ার কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য রাজউকের মাস্টারপ্লানের সঙ্গে সমন্বয় করে অঞ্চলভিত্তিক ‘অ্যাকশন এরিয়া প্লান’ গ্রহণ, নাগরিক সেবার কর্মকাণ্ড ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।

প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে স্বল্পমেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বড়িৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যায়ামাগার আধুনিক করা হবে। বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট চালু করা হবে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। নদী দূষণ রোধ করে নদী পর্যটন চালু করা হবে। মেয়রের দায়িত্ব পেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে মশার অভয়াশ্রম ঢাকার জলাশয়গুলো পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে। মশক নিধনে ‘আধুনিক প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব। যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগরী ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হবে। সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া যেকোন নাগরিকের জন্য আমার দুয়ার এবং ব্যক্তিগত ফোন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ‘ডিএনডি’ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধ এলাকার পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম্পোজিট সার তৈরি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে। মেয়র হলে তিনি বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নেয়া হবে এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, নৌপর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শিশু পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কার করা হবে।

ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। নির্বাচনই যেহেতু ক্ষমতা বদলের একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থা, তাই আমাদের দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে আপনারা ধানের শীষ তথা বেগম জিয়ার পক্ষে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।

ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন-সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া রয়েছে যৌতুক সমস্যা, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপসহ নানা ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের দৌরাত্ম্য। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের ভয়াবহ ধ্বংস নামার কারণেই সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণমাধ্যম, একাডেমিক কারিকুলাম, সার্বিক ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার করা হবে। রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ সার্ভিস চালু করা হবে। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। বছরে দুইবার নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকাবাসী যেকোন সময় মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

দক্ষিণের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ইশতেহার

তাপসের ৯০ দিনের, ইশরাকের ১০০ দিনের পরিকল্পনা

আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থীই আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়তে চান। বিভিন্ন ইস্যুতে নানা রকমের পরিকল্পনা থাকলেও কার্যত উন্নয়নের অভিন্ন ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তারা। ’আমাদের ঢাকা, আমাদের ঐতিহ্য’ স্লোগানকে সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। মৌলিক সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে ৯০ দিনের পরিকল্পনার কথা বলছেন তাপস। নাগরিক সমস্যা সমাধানে সল্পমেয়াদে ১০০ দিনের পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন ইশরাক।

’ঐতিহ্যে-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’ পাঁচটি রূপরেখায় ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তাপস। দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সেবা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ সব কিছুর সম্মিলনে বিশ্বমানের ঢাকা গড়তে ১৬ দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ইশরাক। নাগরিক সমস্যা সমাধানে দু’জনই ২৪ ঘণ্টা নিজেকে নিয়োজিত রাখার কথা জানিয়েছেন। বিভক্ত ঢাকায় ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হলেও পরবর্তীতে এই সিটিতে আরও ১৮টি ওয়ার্ড নতুনভাবে যুক্ত হয়। বর্তমানে দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি এই ওয়ার্ডগুলোর পাশাপাশি ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও ভোট হবে। দক্ষিণে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। এই সিটিতে সাতজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন তাপস ও ইশরাক। ভোটাররা অধীর আগ্রহে আছেন, নৌকা নাকি ধানের শীষের প্রার্থী মেয়র হবেন, তা জানার জন্য।

তাপস

গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তাপস। ফজলে নূর বলেন, অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত ও দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। এখন ‘ঐতিহ্যবাহী-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’র পথে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করব। দায়িত্বগ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যেই মৌলিক সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। তার দেয়া রুপরেখাগুলো হলো—

ঐতিহ্যের ঢাকা : ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অনন্য; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা উৎসবসহ রয়েছে স্বীয় সাংস্কৃতিক ধারা। মহাপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার স্বীয় গৌরবে সাজিয়ে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরব। ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগে যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি নির্মাণ করা হবে। পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে ‘ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সুন্দর ঢাকা : র্দীঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাড় ঘিরে বনায়ন ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বায়ু ও শব্দদূষণ রোধসহ শরীর ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, শরীর চর্চাকেন্দ্র এবং নারী-শিশু ও প্রবীণদের জন্যে হাঁটার উন্মুক্ত স্থান, আধুনিক মানের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্যান নির্মাণ, বাড়িতে ছাদ বাগানে উৎসাহ দান ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বাড়ানো, সাধারণ ও ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ব্যবস্থার ও বস্তিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনি কর্মসূচির আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। জলাধার সংরক্ষণে খালগুলো থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খনন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নর্দমা নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়কের উন্মুক্ত আবর্জনার স্তুপ প্রতিদিন অপসারণ করা হবে।

সচল ঢাকা : যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। তাই গণপরিবহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুত গতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীর গতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষের হাঁটার ব্যবস্থা করব। রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থাসহ নগর ঘুরে দেখার জন্য থাকবে ‘হপ অন হপ অফ’ বাস সেবা। নদীর পাড়ে থাকবে সুপ্রশস্ত রাস্তা, যেখানে পায়ে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, চলবে রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি। জনসাধারণের জন্য সড়কের পাশে উন্নত ওয়াশরুম নির্মাণ এবং হকারদের পুনর্বাসন করে পর্যায়ক্রমে ফুটপাত দখলমুক্ত করব।

সুশাসিত ঢাকা : এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধ সংশোধনকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হবে বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য খোলা থাকবে।

গৃহ কর বাড়ানো হবে না। হতদরিদ্রদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা; অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, বিনোদন ও চিকিৎসা সেবায় পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং স্থাপন করা হবে ডে-কেয়ার সেন্টার। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে প্রয়োজনে নিজস্ব দমকল বাহিনী গঠন ও ফায়ার হাইড্র্যান্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পাড়া-মহল্লায় অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি প্রবেশের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বছরের একটি সময় নির্দিষ্ট করে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর কাছে ‘বার্ষিক কাজের চাহিদাপত্র’ চাওয়া হবে। করপোরেশন কোন রাস্তা নির্মাণের পরে অন্তত তিন বছরের মধ্যে অন্য কোন সংস্থা ওই রাস্তা খনন করতে পারবে না। সহজে ও দ্রুত নাগরিক সেবা দিতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হবে। সপ্তাহে একদিন নগরবাসী মেয়রের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন।

উন্নত ঢাকা : দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ৩০ বছরমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার আওতায় পাঁচ বছরমেয়াদি নানা প্রকল্প হাতে নিয়ে ইমারত নির্মাণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও নগরীর উন্নতিসাধন করা হবে। ঢাকা দক্ষিণে যুক্ত নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ভালোভাবে প্রত্যেকটি সড়ক ও নর্দমার উন্নয়ন করা হবে, যাতে অন্তত ১০ বছর স্থায়িত্ব থাকে। জনসংখ্যার চাপ বিবেচনায় নিয়ে জমির যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত; জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সুব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোস্টেল গড়ে তোলা হবে। বাণিজ্য লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনপত্র, প্রত্যয়নপত্র, গৃহকর, পৌরকর, অন্যান্য করসমূহ তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার আওতায় আনা হবে। ঘরে বসেই কর এবং নির্ধারিত ক্ষেত্রে ফি পরিশোধ করা যাবে। নাগরিক সেবায় ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন, তথ্যসমৃদ্ধ নগর অ্যাপ, ই-লাইব্রেরি, নগর ভবনে নিয়ন্ত্রণকক্ষ রেখে বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ফ্রি ওয়াইফাই সেবা দেয়া হবে।

নিজের নির্বাচনী তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করে তিনি বলেন, আমাদের ঢাকা, আমাদের ঐতিহ্য- এই স্লোগানে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে উন্নত ঢাকা হিসাবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এই ঢাকা আমাদের সবার প্রাণের ঢাকা। আমি আশা করি, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে সুযোগ দেবেন।

ইশরাক

মঙ্গলবার ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশরাক ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে আধুনিক বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা পেলে বাস্তব প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ইশতেহারে নাগরিক সেবা, নাগরিক বিনোদন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ উন্নয়ন বনায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমাজসেবা কার্যক্রম, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা তুলে ধরেন। নির্বাচিত হলে সমন্বিত ও কার্যকর নগর সরকার ধারণা বাস্তবায়নে সক্রিয় উদ্যোগ নেয়ার কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য রাজউকের মাস্টারপ্লানের সঙ্গে সমন্বয় করে অঞ্চলভিত্তিক ‘অ্যাকশন এরিয়া প্লান’ গ্রহণ, নাগরিক সেবার কর্মকাণ্ড ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।

প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে স্বল্পমেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বড়িৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যায়ামাগার আধুনিক করা হবে। বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট চালু করা হবে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। নদী দূষণ রোধ করে নদী পর্যটন চালু করা হবে। মেয়রের দায়িত্ব পেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে মশার অভয়াশ্রম ঢাকার জলাশয়গুলো পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে। মশক নিধনে ‘আধুনিক প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব। যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগরী ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হবে। সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া যেকোন নাগরিকের জন্য আমার দুয়ার এবং ব্যক্তিগত ফোন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ‘ডিএনডি’ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধ এলাকার পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম্পোজিট সার তৈরি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে। মেয়র হলে তিনি বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নেয়া হবে এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, নৌপর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শিশু পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কার করা হবে।

ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। নির্বাচনই যেহেতু ক্ষমতা বদলের একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থা, তাই আমাদের দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে আপনারা ধানের শীষ তথা বেগম জিয়ার পক্ষে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।

ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন-সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া রয়েছে যৌতুক সমস্যা, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপসহ নানা ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের দৌরাত্ম্য। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের ভয়াবহ ধ্বংস নামার কারণেই সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণমাধ্যম, একাডেমিক কারিকুলাম, সার্বিক ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার করা হবে। রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ সার্ভিস চালু করা হবে। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। বছরে দুইবার নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকাবাসী যেকোন সময় মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।