প্রত্যাখ্যান প্যালেস্টাইনের সমর্থন ইসরাইলের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এক শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প এটিকে শতাব্দীর সেরা চুক্তি (ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি ) নামে উল্লেখ করেছেন। তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে, এ প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন। এ পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইউরোপ, জাতিসংঘসহ বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলো এর কড়া সমালোচনা করেছে। এএফপি, রয়টার্স।

এমন এক সময় এ প্রস্তাব পেশ করা হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসন প্রস্তাব ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগ ও সরকার গঠন নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় (আন্তর্জাতিক মান সময় ১৭টায়) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্প পরিকল্পনা পেশ করেন। এর আওতায় ইসরায়েল -প্যালেস্টাইনের মধ্যকার চলমান সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে এ পরিকল্পনা ঘোষণায় ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে প্যালেস্টাইনিদের জন্যও রাজধানী দেয়ার কথাও বলা হয়েছে তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনায়। এতে স্বাধীন প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য চিহ্নিত এলাকায় ইসরায়েল আগামী চার বছরের জন্য কোন কর্মকাণ্ড চালাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কোন ইসরায়েলি রা প্যালেস্টাইনি নিজ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবেন না। এ সময় তিনি প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাতে চিঠি লিখেছেন বলেও জানান। এ সময় প্যালেস্টাইনিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তিনি ৫,০০০ কোটি ডলারের এক পরিকল্পনারও উল্লেখ করেন। তার মতে, প্যালেস্টাইনিরা সম্ভবত এমন সুযোগ আর কখনওই পাবে না। গত বছরের গ্রীষ্মে ট্রাম্প প্রশাসন এ পরিকল্পনার রূপরেখা পেশ করেন।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ওয়াশিংটনের পরিক্ষীত মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ ইসরায়েল শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে বড় এক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমার এই স্বপ্ন দুই পক্ষের জন্যই সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। এ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্র একদিকে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র এবং অন্যদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার ঝুঁকি দূর করবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি গভীর সমর্থন জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ট্রাম্পের পরিকল্পনার আওতায় ওয়াশিংটন অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতিগুলোকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় নেতানিয়াহু গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্যালেস্টাইন ট্রাম্পের সব শর্ত মেনে নিলে ভবিষ্যৎ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনা করতেও তিনি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান এ সময়।

এদিকে কার্যত ইসরায়েলের যাবতীয় দাবি মেনে নিয়ে ট্রাম্প প্যালেস্টাইনিদের জন্য শুধু এক ‘প্রতীকী রাষ্ট্র’ রাখার ব্যবস্থা করেছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় সমালোচনা করছে। ১৯৬৭ সালের সীমানা ও ইহুদি বসতি থাকা এলাকার ওপর সব দাবি ছেড়ে দিয়ে কোন সামরিক বাহিনী ছাড়াই এ রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে তার আগে প্যালেস্টাইনিদের দৃঢ়ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শর্তও আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রস্তাবের আওতায় প্যালেস্টাইনিদের ইসারয়েলের ভূখণ্ডে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফেরার কোন অধিকারও থাকবে না। হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রস্তাবিত ওই রাষ্ট্রের সীমানাসহ একটি মানচিত্রও টুইট করেছেন। অধীকৃত গাজা ও মিসর সীমান্তের কাছে ইসরায়েলের মরুভূমি এলাকাও প্রস্তাবিত প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তর্গত রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন। দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্বাস এ পরিকল্পনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর উদ্দেশে বলেছেন, প্যালেস্টাইনি জনগণের অধিকার (জেরুজালেম)বিক্রি করা হবে না। তিনি বলেন, ‘জেরুজালেম ইজ নট ফর সেল।’ তার মতে, প্যালেস্টাইনিদের সব অধিকার বিক্রি বা দরকষাকষির জন্য নয়। ট্রাম্পের উদ্দেশে আব্বাস বলেন, আপনার চুক্তি, অর্থাৎ ষড়যন্ত্রও অনুমোদন করা হবে না। গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা প্যালেস্টাইনি দল হামাসও পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া : এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইই) স্পষ্ট জানিয়েছে, একমাত্র ইসরায়েলি ও প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে যে সমাধানসূত্র উঠে আসবে, ঐক্যবদ্ধভাবে তার প্রতি সমর্থন জানাতে প্রস্তুত এই রাষ্ট্রজোট। ইইউয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল জানিয়েছেন, ব্রাসেলস ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে তার মূল্যায়ন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের ফলে আলোচনার ভিত্তিতে এই সংকট সমাধানের সুযোগকে স্বাগত জানান তিনি। তবে এ আলোচনায় কোন পক্ষকে বাইরে রাখলে চলবে না বলেও জানান বরেল। এদিকে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা শতাব্দীর সেরা চুক্তি নয় বরং এটি হচ্ছে প্যালেস্টাইনিদের সঙ্গে শতাব্দীর সেরা বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি এমন মন্তব্য করে বলেছেন, তেহরান মনে করে, প্যালেস্টাইনিদের ওপর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া এই লজ্জাজনক পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অন্যদিকে, তুরস্ক ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ‘একদমই অগ্রহণযোগ্য’। তিনি আরও বলেন, জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য পবিত্র। জেরুজালেম ইসরায়েলকে দিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা মেনে নেয়া যায় না। এ পরিকল্পনা প্যালেস্টাইনিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ও ইসরায়েলের অবৈধ বসতিকে বৈধতা দেয়। ট্রাম্পের কথিত এই ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রত্যাখ্যান করে এটি মোকাবিলার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আরব লীগের একটি বিশেষ অধিবেশন চায় প্যালেস্টাইন। আরব লীগও বিশেষ বৈঠকে বসে এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ : এ পরিকল্পনা প্রকাশ কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় কয়েক হাজার প্যালেস্টাইনি প্রতিবাদ করেছেন। এছাড়াও তুরস্কেও ইস্তাম্বুলে, জর্ডান ছাড়াও বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এ পরিকল্পনার নিন্দায়। অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভ দিবস’ পালিত হয়েছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। রাতে প্রস্তাবটি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসার কথা প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আর আগামী শনিবার জরুরি বৈঠকে বসবে আরব লীগ।

প্রসঙ্গত, গত দু’বছর ধরে গোপনীয়তার মধ্যে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের তত্ত্বাবধানে খসড়াটি তৈরি করা হয়। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের সমাধান।পরিকল্পনাটি প্রকাশ উপলক্ষে সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও বিরোধী দলীয় নেতা বেনি গান্তজ। নেতানিয়াহু ওই দিন ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শতাব্দীর সেরা চুক্তি হলো শতাব্দীর সেরা সুযোগ। আমরা তা এড়িয়ে যাব না।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনা ট্রাম্পের

প্রত্যাখ্যান প্যালেস্টাইনের সমর্থন ইসরাইলের

সংবাদ ডেস্ক |

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এক শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প এটিকে শতাব্দীর সেরা চুক্তি (ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি ) নামে উল্লেখ করেছেন। তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে, এ প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন। এ পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইউরোপ, জাতিসংঘসহ বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলো এর কড়া সমালোচনা করেছে। এএফপি, রয়টার্স।

এমন এক সময় এ প্রস্তাব পেশ করা হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসন প্রস্তাব ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগ ও সরকার গঠন নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় (আন্তর্জাতিক মান সময় ১৭টায়) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্প পরিকল্পনা পেশ করেন। এর আওতায় ইসরায়েল -প্যালেস্টাইনের মধ্যকার চলমান সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে এ পরিকল্পনা ঘোষণায় ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে প্যালেস্টাইনিদের জন্যও রাজধানী দেয়ার কথাও বলা হয়েছে তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনায়। এতে স্বাধীন প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য চিহ্নিত এলাকায় ইসরায়েল আগামী চার বছরের জন্য কোন কর্মকাণ্ড চালাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কোন ইসরায়েলি রা প্যালেস্টাইনি নিজ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবেন না। এ সময় তিনি প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাতে চিঠি লিখেছেন বলেও জানান। এ সময় প্যালেস্টাইনিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তিনি ৫,০০০ কোটি ডলারের এক পরিকল্পনারও উল্লেখ করেন। তার মতে, প্যালেস্টাইনিরা সম্ভবত এমন সুযোগ আর কখনওই পাবে না। গত বছরের গ্রীষ্মে ট্রাম্প প্রশাসন এ পরিকল্পনার রূপরেখা পেশ করেন।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ওয়াশিংটনের পরিক্ষীত মিত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ ইসরায়েল শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে বড় এক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমার এই স্বপ্ন দুই পক্ষের জন্যই সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। এ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্র একদিকে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র এবং অন্যদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার ঝুঁকি দূর করবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি গভীর সমর্থন জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ট্রাম্পের পরিকল্পনার আওতায় ওয়াশিংটন অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতিগুলোকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় নেতানিয়াহু গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্যালেস্টাইন ট্রাম্পের সব শর্ত মেনে নিলে ভবিষ্যৎ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনা করতেও তিনি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান এ সময়।

এদিকে কার্যত ইসরায়েলের যাবতীয় দাবি মেনে নিয়ে ট্রাম্প প্যালেস্টাইনিদের জন্য শুধু এক ‘প্রতীকী রাষ্ট্র’ রাখার ব্যবস্থা করেছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় সমালোচনা করছে। ১৯৬৭ সালের সীমানা ও ইহুদি বসতি থাকা এলাকার ওপর সব দাবি ছেড়ে দিয়ে কোন সামরিক বাহিনী ছাড়াই এ রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে তার আগে প্যালেস্টাইনিদের দৃঢ়ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শর্তও আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রস্তাবের আওতায় প্যালেস্টাইনিদের ইসারয়েলের ভূখণ্ডে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফেরার কোন অধিকারও থাকবে না। হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রস্তাবিত ওই রাষ্ট্রের সীমানাসহ একটি মানচিত্রও টুইট করেছেন। অধীকৃত গাজা ও মিসর সীমান্তের কাছে ইসরায়েলের মরুভূমি এলাকাও প্রস্তাবিত প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তর্গত রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন। দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্বাস এ পরিকল্পনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর উদ্দেশে বলেছেন, প্যালেস্টাইনি জনগণের অধিকার (জেরুজালেম)বিক্রি করা হবে না। তিনি বলেন, ‘জেরুজালেম ইজ নট ফর সেল।’ তার মতে, প্যালেস্টাইনিদের সব অধিকার বিক্রি বা দরকষাকষির জন্য নয়। ট্রাম্পের উদ্দেশে আব্বাস বলেন, আপনার চুক্তি, অর্থাৎ ষড়যন্ত্রও অনুমোদন করা হবে না। গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা প্যালেস্টাইনি দল হামাসও পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া : এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইই) স্পষ্ট জানিয়েছে, একমাত্র ইসরায়েলি ও প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে যে সমাধানসূত্র উঠে আসবে, ঐক্যবদ্ধভাবে তার প্রতি সমর্থন জানাতে প্রস্তুত এই রাষ্ট্রজোট। ইইউয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল জানিয়েছেন, ব্রাসেলস ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে তার মূল্যায়ন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের ফলে আলোচনার ভিত্তিতে এই সংকট সমাধানের সুযোগকে স্বাগত জানান তিনি। তবে এ আলোচনায় কোন পক্ষকে বাইরে রাখলে চলবে না বলেও জানান বরেল। এদিকে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা শতাব্দীর সেরা চুক্তি নয় বরং এটি হচ্ছে প্যালেস্টাইনিদের সঙ্গে শতাব্দীর সেরা বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি এমন মন্তব্য করে বলেছেন, তেহরান মনে করে, প্যালেস্টাইনিদের ওপর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া এই লজ্জাজনক পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অন্যদিকে, তুরস্ক ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ‘একদমই অগ্রহণযোগ্য’। তিনি আরও বলেন, জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য পবিত্র। জেরুজালেম ইসরায়েলকে দিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা মেনে নেয়া যায় না। এ পরিকল্পনা প্যালেস্টাইনিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ও ইসরায়েলের অবৈধ বসতিকে বৈধতা দেয়। ট্রাম্পের কথিত এই ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রত্যাখ্যান করে এটি মোকাবিলার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আরব লীগের একটি বিশেষ অধিবেশন চায় প্যালেস্টাইন। আরব লীগও বিশেষ বৈঠকে বসে এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ : এ পরিকল্পনা প্রকাশ কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় কয়েক হাজার প্যালেস্টাইনি প্রতিবাদ করেছেন। এছাড়াও তুরস্কেও ইস্তাম্বুলে, জর্ডান ছাড়াও বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এ পরিকল্পনার নিন্দায়। অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভ দিবস’ পালিত হয়েছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। রাতে প্রস্তাবটি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসার কথা প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আর আগামী শনিবার জরুরি বৈঠকে বসবে আরব লীগ।

প্রসঙ্গত, গত দু’বছর ধরে গোপনীয়তার মধ্যে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের তত্ত্বাবধানে খসড়াটি তৈরি করা হয়। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের সমাধান।পরিকল্পনাটি প্রকাশ উপলক্ষে সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও বিরোধী দলীয় নেতা বেনি গান্তজ। নেতানিয়াহু ওই দিন ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শতাব্দীর সেরা চুক্তি হলো শতাব্দীর সেরা সুযোগ। আমরা তা এড়িয়ে যাব না।