সাবেক আমলাদের দেশসেবার খায়েশের পেছনে রহস্য কী

গত সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বৈঠক করেছেন ৪২ জন সাবেক সচিব। এ নিয়ে গত বুধবার একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কর্মজীবনে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দেশের নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তার ফলাফলকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উক্ত বৈঠকের আয়োজন করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চিঠি দিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেন। সূত্র অনুযায়ী, উল্লিখিত অর্জনে সাবেক সচিব নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সাবেক সচিবরা তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা সরকারের কাজে লাগানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, কর্মরত আমলাদের জ্ঞান বা প্রশিক্ষণে কোন ঘাটতি আছে কিনা যে কারণে সাবেক আমলাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সরকারের প্রয়োজন পড়বে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, সাবেক হয়ে যাওয়ার আগে উল্লিখিত আমলারা তাদের শিক্ষা আর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কি দেশসেবায় কাজে লাগাননি। নাকি সিন্দুকে পুরে রেখেছিলেন এটা ভেবে যে অবসরের পর অর্জিত জ্ঞান সরকারের সেবায় নিয়োগ করবেন। এতকাল ‘দেশসেবা’ করেও সাবেক আমলাদের মন ভরেনি। বিষয়টি ভেবে আমরা পুলক বোধ করছি। অবশ্য দুর্মুখের বলছেন, নতুন সংগঠনের নামে দলবাজ আমলারা সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে আরেক দফা ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন।

সাবেক আমলারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার নতুন ফন্দি আঁটছেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে আমলাদের এ বৈঠকের পেছনে সরকারের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব। কারণ আমরা জেনেছি যে, উক্ত বৈঠক আহ্বান করেছেন দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি এ ধরনের বৈঠক আহ্বান করতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আমরা দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য আশা করছি। আবার বৈঠক সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে। এটা দেখে প্রশ্ন উঠেছে যে, সাবেক আমলারা তাদের কর্মকাণ্ডে সরকারকে সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছে নাকি সরকার তাদের কাজে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দলবাজ সাবেক আমলারা প্রশাসন তথা সরকারের কাজে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ খুঁজছেন। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি, সাবেক আমলাদের তথাকথিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগানোর আরও অনেক পথ রয়েছে। তাদের সরকারি কাজকর্মে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। বর্তমান আমলারা নিরাপদ পানির সন্ধানে উগান্ডা যাচ্ছেন, শিক্ষা আইন ঝুলিয়ে রেখেছেন- এটাই যথেষ্ট। দেশ ও জাতির এহেন সেবায় সাবেকদের আর দরকার নেই।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

সাবেক আমলাদের দেশসেবার খায়েশের পেছনে রহস্য কী

গত সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বৈঠক করেছেন ৪২ জন সাবেক সচিব। এ নিয়ে গত বুধবার একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কর্মজীবনে অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দেশের নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তার ফলাফলকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে উক্ত বৈঠকের আয়োজন করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চিঠি দিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেন। সূত্র অনুযায়ী, উল্লিখিত অর্জনে সাবেক সচিব নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সাবেক সচিবরা তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা সরকারের কাজে লাগানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, কর্মরত আমলাদের জ্ঞান বা প্রশিক্ষণে কোন ঘাটতি আছে কিনা যে কারণে সাবেক আমলাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সরকারের প্রয়োজন পড়বে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, সাবেক হয়ে যাওয়ার আগে উল্লিখিত আমলারা তাদের শিক্ষা আর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কি দেশসেবায় কাজে লাগাননি। নাকি সিন্দুকে পুরে রেখেছিলেন এটা ভেবে যে অবসরের পর অর্জিত জ্ঞান সরকারের সেবায় নিয়োগ করবেন। এতকাল ‘দেশসেবা’ করেও সাবেক আমলাদের মন ভরেনি। বিষয়টি ভেবে আমরা পুলক বোধ করছি। অবশ্য দুর্মুখের বলছেন, নতুন সংগঠনের নামে দলবাজ আমলারা সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে আরেক দফা ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন।

সাবেক আমলারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার নতুন ফন্দি আঁটছেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে আমলাদের এ বৈঠকের পেছনে সরকারের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব। কারণ আমরা জেনেছি যে, উক্ত বৈঠক আহ্বান করেছেন দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি এ ধরনের বৈঠক আহ্বান করতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আমরা দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য আশা করছি। আবার বৈঠক সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে। এটা দেখে প্রশ্ন উঠেছে যে, সাবেক আমলারা তাদের কর্মকাণ্ডে সরকারকে সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছে নাকি সরকার তাদের কাজে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দলবাজ সাবেক আমলারা প্রশাসন তথা সরকারের কাজে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ খুঁজছেন। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি, সাবেক আমলাদের তথাকথিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগানোর আরও অনেক পথ রয়েছে। তাদের সরকারি কাজকর্মে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। বর্তমান আমলারা নিরাপদ পানির সন্ধানে উগান্ডা যাচ্ছেন, শিক্ষা আইন ঝুলিয়ে রেখেছেন- এটাই যথেষ্ট। দেশ ও জাতির এহেন সেবায় সাবেকদের আর দরকার নেই।