মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১ ফেব্রুয়ারি

সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ভুলে গিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করার জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের মনিব মনে না করে জনগণের মনে করা জন্য উপদেশ দেন। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ মন্ত্রী দফতর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এক সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু উপরোক্ত আহ্বান জানান। সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নয়নমণি শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ দেশের মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করুন এবং দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিন। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, গত ৯ মাসে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করেছে। পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতন, অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের হাত হতে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য সমগ্র জাতি রুখে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি যে ত্যাগ স্বীকার করেছে বিশ্বের ইতিহাসে এর কোনো তুলনা নেই। প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসারদের বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নতুন জাতি গঠনের কাজে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, তার সরকারের নীতি হবে এ দেশের অগণিত দরিদ্র সাধারণ এবং যেসব মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের রক্ত দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছে তারা যাতে স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান। তিনি আরো বলেন, শুধু ক্ষমতার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে নাই। তিনি জানান, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে যে, একটি বিপ্লবের মাধ্যমেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বিপ্লবী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী অফিসারদের লক্ষ্য করে বলেন, দেশ চরম অবস্থার দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এবং লক্ষ লক্ষ অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মঙ্গলের জন্য সরকার যুদ্ধকালীন জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকারের নীতি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং স্বাধীন ও জোটবিহীন পররাষ্ট্রনীতি। প্রধানমন্ত্রী কর্মচারীদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু যারা আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করবেন না তাদের সসম্মানে চাকরি থেকে চলে যেতে বলা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু আরও জানান, যেসব অফিসার প্রকাশ্যে ও সরাসরিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতা করেছেন, তাদের চাকরি ছাড়তে হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্বকাশে টাঙ্গাইল মুজিববাহিনী

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক জনাব ফজলুর রহমান ফারুক, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আব্দুল বাতেন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খান মেনুর নেতৃত্বে গঠিত টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর ১৫ শতাধিক গেরিলা আজ সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনের কাজে প্রতিটি গেরিলাকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব শাহজাহান সিরাজও এই সময় উপস্থিত ছিলেন। টাঙ্গাইল জেলার মুজিব বাহিনীর গেরিলারা বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি গেরিলাদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান করেন। টাঙ্গাইলের মুজিব বাহিনীর গেরিলারা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য আহ্বান জানান।

দেশের কাউকে অনাহারে মরতে দেয়া হবে না

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী শ্রী ফনীভূষণ মজুমদার গত সোমবার ঢাকায় দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, দেশের কাউকেই অনাহারে মরতে দেয়া হবে না। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য না থাকলেও দেশকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে যেতে দেয়া হবে না। তিনি জানান যে, ইরি ও বোরো ধান প্রচুর ফলানোর জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে কৃষকদের সাহায্য করছেন। তিনি আরও জানান যে, কৃষি সুবিধার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই ২৫ হাজার পাম্পকল সরবরাহ করেছে এবং সুবিধার জন্য পাম্প প্রতি মাসিক দুই ব্যারেল জ্বালানি দেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকার কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বিতরণ করছে। এবং ফসল উঠার পর এই সারের মূল্য আদায় করা হবে। তিনি জানান যে, বর্তমানে আমরা যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে থাকি সে সমস্ত খাদদ্রব্য আমরা ফলাবার চেষ্টা করব। তিনি আরও জানান যে, কৃষি কার্যের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান যে, দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমির ব্যক্তিগত মালিকানা রদ করতে হবে। তবে সাময়িকভাবে তা নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে করা হবে। ভূমিহীন কৃষকদের ব্যাপারে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান যে, ২৫ বিঘার বেশি জমি যাদের আছে তাদের অতিরিক্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

শহীদানের পরিবার বর্গকে সকল সাহায্য দেয়া হবে- বঙ্গবন্ধু

জাতির পিতা গত সোমবার ঢাকা স্টেডিয়ামে মুজিব বাহিনীর অস্ত্র গোলাবারুদ হস্তান্তরের দিনে দৃঢ় তার সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বীর সন্তান শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য দেয়া হবে। মুজিব বাহিনীতে যোগদানকারী যেসব সরকারি কর্মচারী শহীদ হয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের পেনশন ও আর্থিক সাহায্য এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বত্রই শহীদানের স্মৃতিস্তম্ভ সরকার নিজ খরচে সম্পন্ন করবে।’

২ ফেব্রুয়ারি

সরকারি অফিসে বিলাসিতা চলবে না- বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিলাদ্রব্যাদি কেনাকাটা অবৈধ ঘোষণা করেন এবং এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকরী হবে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে নয়া গালিচা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং অধিক মূল্যের আসবাবপত্র কেনা নিষিদ্ধ করে অফিসারকে যতকাল সম্ভব পুরাতন জিনিসপত্র দিয়েই কাজ চালাতে বলা হয়েছে। এছাড়া এতে অফিসারদের প্রতি আতিথেয়তা বাবদও যথাসাধ্য কম খরচা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

image

১ ফেব্রুয়ারি

সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ভুলে গিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করার জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের মনিব মনে না করে জনগণের মনে করা জন্য উপদেশ দেন। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ মন্ত্রী দফতর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এক সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু উপরোক্ত আহ্বান জানান। সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নয়নমণি শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ দেশের মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করুন এবং দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিন। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, গত ৯ মাসে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বর্বর পাকিস্তান বাহিনীর হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করেছে। পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতন, অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের হাত হতে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য সমগ্র জাতি রুখে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি যে ত্যাগ স্বীকার করেছে বিশ্বের ইতিহাসে এর কোনো তুলনা নেই। প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসারদের বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নতুন জাতি গঠনের কাজে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, তার সরকারের নীতি হবে এ দেশের অগণিত দরিদ্র সাধারণ এবং যেসব মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের রক্ত দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছে তারা যাতে স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান। তিনি আরো বলেন, শুধু ক্ষমতার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে নাই। তিনি জানান, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে যে, একটি বিপ্লবের মাধ্যমেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বিপ্লবী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী অফিসারদের লক্ষ্য করে বলেন, দেশ চরম অবস্থার দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এবং লক্ষ লক্ষ অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মঙ্গলের জন্য সরকার যুদ্ধকালীন জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকারের নীতি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং স্বাধীন ও জোটবিহীন পররাষ্ট্রনীতি। প্রধানমন্ত্রী কর্মচারীদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু যারা আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করবেন না তাদের সসম্মানে চাকরি থেকে চলে যেতে বলা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু আরও জানান, যেসব অফিসার প্রকাশ্যে ও সরাসরিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতা করেছেন, তাদের চাকরি ছাড়তে হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্বকাশে টাঙ্গাইল মুজিববাহিনী

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক জনাব ফজলুর রহমান ফারুক, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আব্দুল বাতেন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খান মেনুর নেতৃত্বে গঠিত টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর ১৫ শতাধিক গেরিলা আজ সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনের কাজে প্রতিটি গেরিলাকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব শাহজাহান সিরাজও এই সময় উপস্থিত ছিলেন। টাঙ্গাইল জেলার মুজিব বাহিনীর গেরিলারা বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি গেরিলাদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান করেন। টাঙ্গাইলের মুজিব বাহিনীর গেরিলারা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য আহ্বান জানান।

দেশের কাউকে অনাহারে মরতে দেয়া হবে না

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী শ্রী ফনীভূষণ মজুমদার গত সোমবার ঢাকায় দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, দেশের কাউকেই অনাহারে মরতে দেয়া হবে না। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য না থাকলেও দেশকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে যেতে দেয়া হবে না। তিনি জানান যে, ইরি ও বোরো ধান প্রচুর ফলানোর জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে কৃষকদের সাহায্য করছেন। তিনি আরও জানান যে, কৃষি সুবিধার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই ২৫ হাজার পাম্পকল সরবরাহ করেছে এবং সুবিধার জন্য পাম্প প্রতি মাসিক দুই ব্যারেল জ্বালানি দেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকার কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বিতরণ করছে। এবং ফসল উঠার পর এই সারের মূল্য আদায় করা হবে। তিনি জানান যে, বর্তমানে আমরা যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে থাকি সে সমস্ত খাদদ্রব্য আমরা ফলাবার চেষ্টা করব। তিনি আরও জানান যে, কৃষি কার্যের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান যে, দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমির ব্যক্তিগত মালিকানা রদ করতে হবে। তবে সাময়িকভাবে তা নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে করা হবে। ভূমিহীন কৃষকদের ব্যাপারে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান যে, ২৫ বিঘার বেশি জমি যাদের আছে তাদের অতিরিক্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

শহীদানের পরিবার বর্গকে সকল সাহায্য দেয়া হবে- বঙ্গবন্ধু

জাতির পিতা গত সোমবার ঢাকা স্টেডিয়ামে মুজিব বাহিনীর অস্ত্র গোলাবারুদ হস্তান্তরের দিনে দৃঢ় তার সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বীর সন্তান শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য দেয়া হবে। মুজিব বাহিনীতে যোগদানকারী যেসব সরকারি কর্মচারী শহীদ হয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের পেনশন ও আর্থিক সাহায্য এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বত্রই শহীদানের স্মৃতিস্তম্ভ সরকার নিজ খরচে সম্পন্ন করবে।’

২ ফেব্রুয়ারি

সরকারি অফিসে বিলাসিতা চলবে না- বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিলাদ্রব্যাদি কেনাকাটা অবৈধ ঘোষণা করেন এবং এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকরী হবে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে নয়া গালিচা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং অধিক মূল্যের আসবাবপত্র কেনা নিষিদ্ধ করে অফিসারকে যতকাল সম্ভব পুরাতন জিনিসপত্র দিয়েই কাজ চালাতে বলা হয়েছে। এছাড়া এতে অফিসারদের প্রতি আতিথেয়তা বাবদও যথাসাধ্য কম খরচা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২