ব্যবসায়ীদের ফরমায়েশে নষ্ট হচ্ছে ঐতিহ্যের খেজুর গুড়

চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ খেজুর গুড়ের হাট কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি মিশ্রিতগুড় তৈরির কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এখানে সপ্তাহে দু’দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজারটি মাটির ভাড়ে দেড় থেকে ২ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটটি স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ১৯৪৭ সাল থেকে সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার বসে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদাহ ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের খেজুর গুড় প্রস্তুতকারী আলামিন (৩৭) জানান, বেশি লাভের আশায় সরোজগঞ্জ বাজারে বেশিরভাগ চাষী খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। এতে গুড়ের রং সুন্দর দেখালেও মান কমে যাচ্ছে।

একই উপজেলার কালুপোল গ্রামের চাষি বকুল সর্দ্দার জানান, এই হাটে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ গুড় চিনি মিশ্রিত। এটা হয়েছে ব্যসায়ীদের উদ্বুদ্ধের কারণে। এটা বন্ধ না হলে এই এলাকার খেজুর গাছ চাষিরা হুমকির সম্মুখীন হবেন। তিনি আরও জানান, আজকের বাজারে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে ১৭ কেজি ওজনের এক ভাড় গুড় ১ হাজার দুইশত টাকা থেকে ১ হাজার তিনশত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বাদে ওই গুড় কিনতে চাইলে ২ হাজার টাকা লাগবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাভ হয় । চিনি মেশানোর কারণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজীব (৪৫) ও মুছা করিম (৩০) জানান, প্রথম দিকে গুড়ের রং সাদা করার জন্য ব্যবসায়ীরা ২-১ কেজি চিনি মেশানোর পরামর্শ দিতে যেয়ে আজ বাজারে গুড়ের মান কমে গিয়েছে। সিরাজগঞ্জ সাহাজাদপুর থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ঘোষ (৬১) জানান, চিনি ছাড়াও এই বাজারে উন্নতমনের গুড় আছে কিন্তু দাম বেশি। ঢাকা সাভার থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী তাপোস পালও জানান, রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করার কারণে গুড়ের মান কমে যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজার কৃষিভিত্তিক হাট। এই হাটের সুনামের কারণে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া,মেহেরপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা গুড় নিয়ে হাটে আসে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্ররোচণায় গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশানোর কারণে এই হাটের সুনাম হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, সুধীদের নিয়ে কর্মশালা করে গুড়ের সঠিক মান নির্ধারণ করতে হবে। নতুবা হাটের ঐতিহ্য একদিন হারিয়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৯৩ হাজার ৪৫০টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ হাজার ৩১০টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৩ হাজার ৭০০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩৬ হাজার ৫০০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এই মৌসুমে এই গাছগুলো থেকে ১ হাজার ৫০ মেট্রিকটন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৫০ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯২০ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ২৮০ মেট্রিকটন গুড় তৈরির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ভাল গুড় তৈরির জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ব্যবসায়ীদের ফরমায়েশে নষ্ট হচ্ছে ঐতিহ্যের খেজুর গুড়

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা

image

চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ খেজুর গুড়ের হাট কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি মিশ্রিতগুড় তৈরির কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এখানে সপ্তাহে দু’দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজারটি মাটির ভাড়ে দেড় থেকে ২ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটটি স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ১৯৪৭ সাল থেকে সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার বসে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদাহ ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের খেজুর গুড় প্রস্তুতকারী আলামিন (৩৭) জানান, বেশি লাভের আশায় সরোজগঞ্জ বাজারে বেশিরভাগ চাষী খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। এতে গুড়ের রং সুন্দর দেখালেও মান কমে যাচ্ছে।

একই উপজেলার কালুপোল গ্রামের চাষি বকুল সর্দ্দার জানান, এই হাটে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ গুড় চিনি মিশ্রিত। এটা হয়েছে ব্যসায়ীদের উদ্বুদ্ধের কারণে। এটা বন্ধ না হলে এই এলাকার খেজুর গাছ চাষিরা হুমকির সম্মুখীন হবেন। তিনি আরও জানান, আজকের বাজারে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে ১৭ কেজি ওজনের এক ভাড় গুড় ১ হাজার দুইশত টাকা থেকে ১ হাজার তিনশত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বাদে ওই গুড় কিনতে চাইলে ২ হাজার টাকা লাগবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাভ হয় । চিনি মেশানোর কারণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজীব (৪৫) ও মুছা করিম (৩০) জানান, প্রথম দিকে গুড়ের রং সাদা করার জন্য ব্যবসায়ীরা ২-১ কেজি চিনি মেশানোর পরামর্শ দিতে যেয়ে আজ বাজারে গুড়ের মান কমে গিয়েছে। সিরাজগঞ্জ সাহাজাদপুর থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ঘোষ (৬১) জানান, চিনি ছাড়াও এই বাজারে উন্নতমনের গুড় আছে কিন্তু দাম বেশি। ঢাকা সাভার থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী তাপোস পালও জানান, রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করার কারণে গুড়ের মান কমে যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজার কৃষিভিত্তিক হাট। এই হাটের সুনামের কারণে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া,মেহেরপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা গুড় নিয়ে হাটে আসে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর প্ররোচণায় গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশানোর কারণে এই হাটের সুনাম হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, সুধীদের নিয়ে কর্মশালা করে গুড়ের সঠিক মান নির্ধারণ করতে হবে। নতুবা হাটের ঐতিহ্য একদিন হারিয়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৯৩ হাজার ৪৫০টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ হাজার ৩১০টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৩ হাজার ৭০০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩৬ হাজার ৫০০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এই মৌসুমে এই গাছগুলো থেকে ১ হাজার ৫০ মেট্রিকটন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৫০ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯২০ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ২৮০ মেট্রিকটন গুড় তৈরির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ভাল গুড় তৈরির জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।