সামসুজ্জামান
প্রতিদিন সকালে পত্রিকার পাতা খুলবার আগেই মনের মধ্যে এক আশঙ্কা কাজ করে কেন জানি না। দুরু দুরু মনে প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সম্পাদকীয় হয়ে মফস্বল পাতায় চলে যাই। আমার আশঙ্কার প্রতিদিনই দেখতে পাই সেখানে। আজও একই ঘটনা ঘটল। ঢাবির দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে উত্তরায় রাস্তা পার্শ্ববর্তী ঝোপের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে এক ধর্ষক। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবিসহ সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে ধর্ষকের বিচাররে দাবিতে। মজনু নামে এক ধর্ষককে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আসলেই সে প্রকৃত ধর্ষক কি না? নাকি আপাতত বিক্ষোভ এড়ানোর জন্যে নিরাপত্তা বাহিনী এ পথ বেছে নিয়েছে। ঢাবির ভিপি নূরুল হক নূর স্বয়ং এ কথা বলেছেন যে, এটি জজ মিয়া নাটকও হতে পারে।
পাঁচ বছরের মেয়েকে সৎবাবার কাছে রেখে মা গেছে পার্শ্ববর্তী বাগানে জ্বালানি কুড়াতে। ফিরে দেখে শিশুটিকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করছে তারই সৎবাবা। এ দৃশ্য দেখে মা সহ্য করতে পারেনি। মেয়েকে নিয়ে ছুটেছে হাসপাতালে। এর মধ্যে তার স্বামী পলাতক। ঘটনাটি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী থানার ধানঘোলা গ্রামের। গত ৮ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পশ্চিম কুট্টপাড়া গ্রামের মফিজ মিয়ার চতুর্থ শ্রেণী পড়–য়া ১০ বছর বয়সী কন্যা জয়নব আক্তারের লাশ পাওয়া গেছে পার্শ্ববর্তী বাড়ির একটি বাঁশ বাগানের মধ্যে উলঙ্গ অবস্থায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মেডিকেল টিম। লাশ পাবার ২১ ঘণ্টা আগে মেয়েটি নিখোঁজ হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ১৭ ডিসেম্বর। সাভারে এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বাড়ির জুয়েল ও সোহেল নামের দুই যুবক তার একাকিত্বের সুযোগে ধর্ষণ করে তাকে। নারায়ণগঞ্জে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূকে ধর্ষণ করে শাহিন নামের এক যুবক। পুলিশ তাকে আটক করেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরা মাজডাঙ্গা গ্রামের দশম শ্রেণীর একছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় ১৬ ডিসেম্বর রাতে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলাবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে আসিফ ও বিজয় নামের দুই যুবক। অবশ্য দুজনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের মন্দবাগ গ্রামের রফিক মিয়ার ১০ বছর বয়সী কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ধর্ষণকারীরা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের কুতুবের হাট গ্রামের পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীকে দুদিন আটকে গণধর্ষণ করে কয়েক যুবক। মেয়েটির মা থানায় মামলা করলে পুলিশ সাইফুল, সিরাজ, কবির, কামাল এবং জাকির নামে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এতো গেল মাত্র দুটি জাতীয় দৈনিকের তিন দিনের খতিয়ান। এমনি অজানা আরও কত ঘটনা ঘটে চলেছে; যা অজানাই রয়ে যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক মেয়ের ভবিষ্যতে বিয়েশাদীর কথা চিন্তা করে ঘটনা বেমালুম হজম করে যাচ্ছে।
শুধু গ্রামগঞ্জে নয় এখন অনেক প্রভাবশালী গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের হোলিখেলায়। অনেক রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। তাইতো আমরা দেখি পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা। মাদরাসা শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির শিকার হতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ধর্ষণকারীরা কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য যে রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থা এদের গতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে? সোনাগাজী মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ২০ জনকে যদি ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো যায়Ñ তাহলে এরা কেন পার পাবে? যেখানে শিশুদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে আইন কেন থমকে যাচ্ছে। যেখানে পিতা তার শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানি করছে তার কেন বিচার হচ্ছে না।
আমাদের পার্শ্ববর্তী এতবড় দেশ ভারত যেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ধর্ষণ মামলার আইন রয়েছে। আমরা দেখেছি মধ্যপ্রদেশে একজন পশু চিকিৎসককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করার অপরাধে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে এদের ফাঁসির দড়িতেই ঝুলতে হবে। ভারতে ১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাসের মধ্যে এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। দামিনী নামের তারুণ্যে ভরা এক তরুণী মেডিকেল ছাত্রী তার সহপাঠী এক ছেলের সঙ্গে আসছিল। বাসে আর কোন যাত্রী ছিল না। একটু নির্জন জায়গায় এসে ছেলেটিকে হাত-পা বেঁধে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় হেলপারসহ তার দুজন সহযোগী। তারপর হায়নার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েটির ওপর। ১২ দিন হাসপাতালের বেডে জীবনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যায় দামিনী। ২৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে তুমুল হইচই হয়। ভারত সরকার তাকে ‘ভারত সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে। বাসচালক এবং তার অপর তিন সহযোগীকে ঝুলতে হয় ফাঁসির দড়িতে। আমাদের দেশে এমন একটি উদাহরণ আজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি আইনি দুর্বলতার কারণে। এক্ষেত্রে আইনের সংশোধন অবশ্যম্ভাবী। তাহলে হয়ত ধর্ষণকারীরা চুপসে যাবে।
রাষ্ট্রের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সরকার কি সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে সাধারণকে। বিশেষ করে মেয়েদের ন্যূনতম নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে পারছে না সরকার। আজ যদি আইন মতো শাস্তি হতো ধর্ষণকারীর, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় বহুলাংশে কমে যেত। আর এটা না হওয়ার ফলে ধর্ষণকারীরা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। আজ যদি এমন কঠিন আইন থাকতো এবং তা প্রয়োগ করা হতো তাহলে অপরাধীর মনে ভয় জন্মাতো। ইন্টারনেটের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একজন অশিক্ষিত যুবকের হাতেও দেখা যায় টাচফোন। এখানে নীল ছবির দংশন তাকে আরও বেশি প্রলুব্ধ করে যৌনচারের ব্যাপারে। আর এ কারণেই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বেশি।
বাসে কোন মহিলা এখন একা যেতে ভয় পান। ট্রেনের বাথরুমে ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। এই ব্যধি আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, মনে হচ্ছে আমরা কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ থেকে পরিত্রাণ অত্যাবশ্যক। না হলে বিশ্বের কাছে আমরা কলঙ্কিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত হব; যা আমাদের কাম্য নয়। আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে উন্নয়নের পথ বেয়ে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। এই উন্নয়ন শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেই চলবে না। এর সঙ্গে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নও প্রয়োজন। যে জায়গাতে আমরা এখন হাবুডুবু খাচ্ছি কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে বেরিয়ে আসতে হবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শিশুসহ ধর্ষণের হার বেড়েছে ৩৪.২৯% শতাংশ। ধর্ষণের পর হত্যার হার বেড়েছে ১৭২.৭৩ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান সত্যিই উদ্বেগজনক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৯৭ জন শিশু। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে ১২১ জন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৮১ শিশু। এছাড়া ধর্ষণকারীরা হত্যা করেছে ৩১৫ জনকে। দায়ের করা মামলার মাত্র তিন শতাংশ মামলার সাজা কার্যকর হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত করতে হবে।
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে দেশবাসীর কাছে। আমরা দায়বদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে অনেক উদ্যোগই নিচ্ছি এবং তা কার্যকরী করছি। এক্ষেত্রেও আমাদের একই ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে দায়ভার আমাদের কাঁধেই রয়ে যাবে।
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১
সামসুজ্জামান
প্রতিদিন সকালে পত্রিকার পাতা খুলবার আগেই মনের মধ্যে এক আশঙ্কা কাজ করে কেন জানি না। দুরু দুরু মনে প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সম্পাদকীয় হয়ে মফস্বল পাতায় চলে যাই। আমার আশঙ্কার প্রতিদিনই দেখতে পাই সেখানে। আজও একই ঘটনা ঘটল। ঢাবির দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে উত্তরায় রাস্তা পার্শ্ববর্তী ঝোপের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে এক ধর্ষক। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবিসহ সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে ধর্ষকের বিচাররে দাবিতে। মজনু নামে এক ধর্ষককে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আসলেই সে প্রকৃত ধর্ষক কি না? নাকি আপাতত বিক্ষোভ এড়ানোর জন্যে নিরাপত্তা বাহিনী এ পথ বেছে নিয়েছে। ঢাবির ভিপি নূরুল হক নূর স্বয়ং এ কথা বলেছেন যে, এটি জজ মিয়া নাটকও হতে পারে।
পাঁচ বছরের মেয়েকে সৎবাবার কাছে রেখে মা গেছে পার্শ্ববর্তী বাগানে জ্বালানি কুড়াতে। ফিরে দেখে শিশুটিকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করছে তারই সৎবাবা। এ দৃশ্য দেখে মা সহ্য করতে পারেনি। মেয়েকে নিয়ে ছুটেছে হাসপাতালে। এর মধ্যে তার স্বামী পলাতক। ঘটনাটি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাংনী থানার ধানঘোলা গ্রামের। গত ৮ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পশ্চিম কুট্টপাড়া গ্রামের মফিজ মিয়ার চতুর্থ শ্রেণী পড়–য়া ১০ বছর বয়সী কন্যা জয়নব আক্তারের লাশ পাওয়া গেছে পার্শ্ববর্তী বাড়ির একটি বাঁশ বাগানের মধ্যে উলঙ্গ অবস্থায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মেডিকেল টিম। লাশ পাবার ২১ ঘণ্টা আগে মেয়েটি নিখোঁজ হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ১৭ ডিসেম্বর। সাভারে এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বাড়ির জুয়েল ও সোহেল নামের দুই যুবক তার একাকিত্বের সুযোগে ধর্ষণ করে তাকে। নারায়ণগঞ্জে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূকে ধর্ষণ করে শাহিন নামের এক যুবক। পুলিশ তাকে আটক করেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরা মাজডাঙ্গা গ্রামের দশম শ্রেণীর একছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় ১৬ ডিসেম্বর রাতে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলাবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে আসিফ ও বিজয় নামের দুই যুবক। অবশ্য দুজনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের মন্দবাগ গ্রামের রফিক মিয়ার ১০ বছর বয়সী কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ধর্ষণকারীরা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের কুতুবের হাট গ্রামের পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীকে দুদিন আটকে গণধর্ষণ করে কয়েক যুবক। মেয়েটির মা থানায় মামলা করলে পুলিশ সাইফুল, সিরাজ, কবির, কামাল এবং জাকির নামে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এতো গেল মাত্র দুটি জাতীয় দৈনিকের তিন দিনের খতিয়ান। এমনি অজানা আরও কত ঘটনা ঘটে চলেছে; যা অজানাই রয়ে যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক মেয়ের ভবিষ্যতে বিয়েশাদীর কথা চিন্তা করে ঘটনা বেমালুম হজম করে যাচ্ছে।
শুধু গ্রামগঞ্জে নয় এখন অনেক প্রভাবশালী গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের হোলিখেলায়। অনেক রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। তাইতো আমরা দেখি পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা। মাদরাসা শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির শিকার হতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ধর্ষণকারীরা কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য যে রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থা এদের গতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে? সোনাগাজী মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ২০ জনকে যদি ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো যায়Ñ তাহলে এরা কেন পার পাবে? যেখানে শিশুদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে আইন কেন থমকে যাচ্ছে। যেখানে পিতা তার শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানি করছে তার কেন বিচার হচ্ছে না।
আমাদের পার্শ্ববর্তী এতবড় দেশ ভারত যেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ধর্ষণ মামলার আইন রয়েছে। আমরা দেখেছি মধ্যপ্রদেশে একজন পশু চিকিৎসককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করার অপরাধে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে এদের ফাঁসির দড়িতেই ঝুলতে হবে। ভারতে ১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাসের মধ্যে এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। দামিনী নামের তারুণ্যে ভরা এক তরুণী মেডিকেল ছাত্রী তার সহপাঠী এক ছেলের সঙ্গে আসছিল। বাসে আর কোন যাত্রী ছিল না। একটু নির্জন জায়গায় এসে ছেলেটিকে হাত-পা বেঁধে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় হেলপারসহ তার দুজন সহযোগী। তারপর হায়নার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েটির ওপর। ১২ দিন হাসপাতালের বেডে জীবনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যায় দামিনী। ২৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে তুমুল হইচই হয়। ভারত সরকার তাকে ‘ভারত সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে। বাসচালক এবং তার অপর তিন সহযোগীকে ঝুলতে হয় ফাঁসির দড়িতে। আমাদের দেশে এমন একটি উদাহরণ আজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি আইনি দুর্বলতার কারণে। এক্ষেত্রে আইনের সংশোধন অবশ্যম্ভাবী। তাহলে হয়ত ধর্ষণকারীরা চুপসে যাবে।
রাষ্ট্রের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সরকার কি সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে সাধারণকে। বিশেষ করে মেয়েদের ন্যূনতম নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে পারছে না সরকার। আজ যদি আইন মতো শাস্তি হতো ধর্ষণকারীর, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় বহুলাংশে কমে যেত। আর এটা না হওয়ার ফলে ধর্ষণকারীরা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। আজ যদি এমন কঠিন আইন থাকতো এবং তা প্রয়োগ করা হতো তাহলে অপরাধীর মনে ভয় জন্মাতো। ইন্টারনেটের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একজন অশিক্ষিত যুবকের হাতেও দেখা যায় টাচফোন। এখানে নীল ছবির দংশন তাকে আরও বেশি প্রলুব্ধ করে যৌনচারের ব্যাপারে। আর এ কারণেই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বেশি।
বাসে কোন মহিলা এখন একা যেতে ভয় পান। ট্রেনের বাথরুমে ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। এই ব্যধি আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, মনে হচ্ছে আমরা কৃষ্ণ গহ্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ থেকে পরিত্রাণ অত্যাবশ্যক। না হলে বিশ্বের কাছে আমরা কলঙ্কিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত হব; যা আমাদের কাম্য নয়। আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে উন্নয়নের পথ বেয়ে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। এই উন্নয়ন শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেই চলবে না। এর সঙ্গে আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নও প্রয়োজন। যে জায়গাতে আমরা এখন হাবুডুবু খাচ্ছি কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে বেরিয়ে আসতে হবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শিশুসহ ধর্ষণের হার বেড়েছে ৩৪.২৯% শতাংশ। ধর্ষণের পর হত্যার হার বেড়েছে ১৭২.৭৩ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান সত্যিই উদ্বেগজনক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৯৭ জন শিশু। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে ১২১ জন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৮১ শিশু। এছাড়া ধর্ষণকারীরা হত্যা করেছে ৩১৫ জনকে। দায়ের করা মামলার মাত্র তিন শতাংশ মামলার সাজা কার্যকর হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত করতে হবে।
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে দেশবাসীর কাছে। আমরা দায়বদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে অনেক উদ্যোগই নিচ্ছি এবং তা কার্যকরী করছি। এক্ষেত্রেও আমাদের একই ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে দায়ভার আমাদের কাঁধেই রয়ে যাবে।