ঢাকা সিটি নির্বাচন : মেয়র পদে

তাপস-আতিক জয়ী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক | নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

http://print.thesangbad.net/images/2020/February/02Feb20/news/upload.jpg

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জয়লাভ করেছেন। এই প্রতিবেদন লেখাকালীন আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও সবগুলো কেন্দ্র থেকে পাঠানো ফলে দুই সিটি আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় সমস্যা হচ্ছে। তবে আতিক ও তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা কেবল আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।

দুই সিটির নগরবাসী গতকাল ভোটের মাধ্যমে ২ জন মেয়র, ১২৭ জন কাউন্সিলর এবং ৪১ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (এর আগে ৪ জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) নির্বাচিত করতে ভোট দেন। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া দুই সিটিতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণে মোট ১১৫০টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস নৌকা প্রতীকে ৪২৪৫৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ২৩৬৫১২ ভোট পেয়েছেন। উত্তরে ১৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রাপ্ত ৮১১টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ২৫৯৯৮৫ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে ১৫৯৩৬১ ভোট পেয়েছেন। অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলোর ফলাফলের (প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত) অনুলিপিও প্রার্থী ও তার এজেন্টদের হাতে আছে। ওই ফলাফল হিসাব করে আতিকুলের জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবি, দুই সিটিতেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বলছে, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে ভোটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আজ ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এদিকে বিএনপির এ হরতাল প্রতিহত করতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

http://print.thesangbad.net/images/2020/February/02Feb20/news/score.jpg

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ভোট শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ভালো হয়েছে। কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে এটা ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি; এমন অভিযোগ তুলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকার সন্ধ্যায় লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, আমি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ১২টি কেন্দ্র পরিদর্শন করি। এই ১২টি কেন্দ্রে আমি সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছাড়া আর কোন মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট দেখতে পাইনি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া কোন মারামারি বা রক্তক্ষয় হয়নি। ভোটের মাঠে এক পক্ষ ব্যতীত অন্য পক্ষগুলোকে দেখা যায়নি। ভোটের মাঠে অন্যপক্ষের অনুপস্থিতির কারণ আমার অজ্ঞাত।

সরেজমিন ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম; অভিযোগ ছিল বিস্তর। সব অভিযোগই বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের আশপাশে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতি থাকলেও বিএনপির কর্মীদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি।

কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের মারধর, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের কিছু ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাড়া আঙ্গুলের চাপ দেয়ার পর ভোটারকে নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বয়স্ক ও শ্রমজীবী মানুষের ইভিএমে ভোট দিতে বেশি অসুবিধা হয়েছে। অনেকবার চেষ্টা করার পরও অনেকের আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আঙ্গুলের ছাপও মেলেনি।

দুই সিটিতে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। নতুন পদ্ধতি ইভিএমে ভোট দেয়ার বিষয়ে নগরবাসীর মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল কাজ করেছে। সকালের দিকে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।

ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর ৩৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। দক্ষিণে মোট ৪১৬ জন প্রার্থী ছিলেন। এরমধ্যে ৭ জন মেয়র পদে, ৭৫টি ওয়ার্ডে ৩২৭ জন কাউন্সিলর পদে ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ৮২ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। ভোটকক্ষ ৭৫৪টি। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৬টি। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। দক্ষিণের এক হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) এবং উত্তরে এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে বেশকিছু বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করলেও গতকাল তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেননি তারা।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে উত্তরে ছয়জন এবং দক্ষিণে সাতজন। উত্তরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া আরও ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফজলে বারী মাসউদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান।

দক্ষিণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও আরও ছিলেন- জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, গণফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সামাদ সুজন।

রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১৯ মাঘ ১৪২৬, ৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ঢাকা সিটি নির্বাচন : মেয়র পদে

তাপস-আতিক জয়ী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক | নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন সদ্য জয়ী দুই মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। এ সময় তারা ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান

http://print.thesangbad.net/images/2020/February/02Feb20/news/upload.jpg

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জয়লাভ করেছেন। এই প্রতিবেদন লেখাকালীন আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও সবগুলো কেন্দ্র থেকে পাঠানো ফলে দুই সিটি আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় সমস্যা হচ্ছে। তবে আতিক ও তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা কেবল আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।

দুই সিটির নগরবাসী গতকাল ভোটের মাধ্যমে ২ জন মেয়র, ১২৭ জন কাউন্সিলর এবং ৪১ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (এর আগে ৪ জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) নির্বাচিত করতে ভোট দেন। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া দুই সিটিতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণে মোট ১১৫০টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস নৌকা প্রতীকে ৪২৪৫৯৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ২৩৬৫১২ ভোট পেয়েছেন। উত্তরে ১৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রাপ্ত ৮১১টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ২৫৯৯৮৫ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে ১৫৯৩৬১ ভোট পেয়েছেন। অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলোর ফলাফলের (প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত) অনুলিপিও প্রার্থী ও তার এজেন্টদের হাতে আছে। ওই ফলাফল হিসাব করে আতিকুলের জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবি, দুই সিটিতেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বলছে, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে ভোটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আজ ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এদিকে বিএনপির এ হরতাল প্রতিহত করতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

http://print.thesangbad.net/images/2020/February/02Feb20/news/score.jpg

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ভোট শেষে গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ভালো হয়েছে। কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে এটা ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি; এমন অভিযোগ তুলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকার সন্ধ্যায় লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, আমি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ১২টি কেন্দ্র পরিদর্শন করি। এই ১২টি কেন্দ্রে আমি সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছাড়া আর কোন মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট দেখতে পাইনি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া কোন মারামারি বা রক্তক্ষয় হয়নি। ভোটের মাঠে এক পক্ষ ব্যতীত অন্য পক্ষগুলোকে দেখা যায়নি। ভোটের মাঠে অন্যপক্ষের অনুপস্থিতির কারণ আমার অজ্ঞাত।

সরেজমিন ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম; অভিযোগ ছিল বিস্তর। সব অভিযোগই বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের আশপাশে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতি থাকলেও বিএনপির কর্মীদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি।

কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের মারধর, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের কিছু ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাড়া আঙ্গুলের চাপ দেয়ার পর ভোটারকে নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বয়স্ক ও শ্রমজীবী মানুষের ইভিএমে ভোট দিতে বেশি অসুবিধা হয়েছে। অনেকবার চেষ্টা করার পরও অনেকের আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আঙ্গুলের ছাপও মেলেনি।

দুই সিটিতে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। নতুন পদ্ধতি ইভিএমে ভোট দেয়ার বিষয়ে নগরবাসীর মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল কাজ করেছে। সকালের দিকে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।

ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর ৩৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। দক্ষিণে মোট ৪১৬ জন প্রার্থী ছিলেন। এরমধ্যে ৭ জন মেয়র পদে, ৭৫টি ওয়ার্ডে ৩২৭ জন কাউন্সিলর পদে ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ৮২ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। ভোটকক্ষ ৭৫৪টি। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৬টি। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। দক্ষিণের এক হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) এবং উত্তরে এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে বেশকিছু বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করলেও গতকাল তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেননি তারা।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে উত্তরে ছয়জন এবং দক্ষিণে সাতজন। উত্তরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া আরও ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফজলে বারী মাসউদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান।

দক্ষিণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও আরও ছিলেন- জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, গণফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সামাদ সুজন।