শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট : ভোটার কম

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রায় ৩০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দু’একটি কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তা মারাত্মক ছিল না। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম। নারী ভোটারদের বলতে গেলে তেমন একটা চোখেই পড়েনি। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্ট ভোটাররা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি কেন্দ্র ফরিদাবাদ জামিয়া মাদ্রাসা। ৪৭নং ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে এখানে। সকাল ৯টায় কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি। এই কেন্দ্রে ৭৯০ জন নারী এবং ১৫৫০ জন পুরুষ ভোটার রয়েছেন। সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে শতাধিক ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট গণনা শেষে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তারিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সর্বমোট ৫০২ জন ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক ২৮৫, ধানের শীষ ১৯৭ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র জান-ই-আলম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ৫৭৩নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৯৩৫ জন। এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্র ৫৭২নং। যেখানে ভোটার ২০১৩ জন। এই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার এমদাদ হোসেন সংবাদকে বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫০ জন ভোট দিয়েছেন।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন হাসিনা আক্তার। ৮২০৪৩৯৩৩২৯নং ভোটার আইডিধারী হাসিনা বলেন, ভালোই ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিয়েছি। সমস্যা হয়নি।

উত্তরের ৫২নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র আনোয়ারা মান্নাফ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১২৯০নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২০৩৭। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সংবাদকে বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪২টি ভোট পড়েছে। ভোটার হার একটু কম। ৬টি বুথ রয়েছে আমাদের এখানে।

এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্রের নম্বর ১২৮৯। এখানে ভোটার ২২৩৫। এখানের সবাই পুরুষ ভোটার। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ২০০ ভোট পড়েছে। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। ভোট শেষ হওয়ার পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বমোট ৪৮৯ জন ভোট দিয়েছেন।

এই কেন্দ্রের ২নং বুথে সকাল সাড়ে ১০টর দিকে দেখা যায় ৩৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন। ৪নং বুথে ৩৪০ জনের মধ্যে ১০ জন, ৫নং বুথে ৩৪০ জনের মধ্যে ০২ জন ৬নং বুথে ৩৩৭ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন।

১৬, ০৬ দলিপাড়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। ২৬২১২২৯১৬৫৭৯নং আইডি কার্ডধারী এই ভোটার বলেন, ভোট সুষ্ঠুই হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিলাম প্রথমবারের মতো। ডিজিটাল ভোট দিয়ে ভালোই লাগছে।

১৭ ও ৫২নং ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, বিএনপির কোন এজেন্ট নেই। এমনকি ধানের শীষ প্রতীকের কেউ এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। তবে নৌকা ও অন্য কাউন্সিলর প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে এজেন্ট রয়েছে।

উত্তরের ৫১নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র উত্তরা ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। ১২৮৫নং কেন্দ্রের ৩২৪৬ জন ভোটারের সবাই পুরুষ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ১২০ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শরীফ হোসেন ভোট গণনা শেষে সংবাদকে বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কেন্দ্রে শান্তিপূর্র্ণ ভোট হয়েছে। সর্বমোট ৮৩৬ জন ভোট দিয়েছেন।

তবে সকাল সাড়ে ৯টা দিকে এই কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়। যাদের মধ্যে তিনজনকে লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড উত্তরা কার্ডিয়াক সেন্টারে এবং একজনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এই ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আফাজউদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের বহিরাগত ৩০০-৪০০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের এজেন্ট বের করে দিয়েছে।

এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্র নম্বর ২৯৮৯। ১২৮৬ জন ভোটারের জন্য এখানে রয়েছে ৮টি বুথ। বেলা ১১টা দিকে ১নং বুথে গিয়ে দেখা যায় ৩৭৫ জনের মধ্যে ৯ জন, ২নং বুথে ৩৭৫ জনের মধ্যে ১০ জন এবং ৪নং বুথে ৩৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন।

উত্তরের ১নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র টাচস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সকাল সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায় এখানের ১নং বুথে ৪৪৯ জনের মধ্যে ১৫ জন, ২নং বুথে ৪৪৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোর্সেদ আলম সংবাদকে বলেন, এটি ২৪নং কেন্দ্র। এখানে ২০১৪ জন ভোটার। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২০০ জনের মতো ভোট দিয়েছেন। নৌকার এজেন্ট আছে। তবে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই। কেউ কোন আবেদনও জমা দেননি।

২৫নং কেন্দ্রে ১৭৭৬ জন ভোটার। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার কামরুল হাসান সংবাদকে বলেন, আমাদের এখানে ২৬০টি ভোট পড়েছে। বাঘ ও নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ আবেদনই করেননি। ভোট শান্তিপূর্র্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

উত্তরের ৫৩নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র সানবিমস্ স্কুল। এখানে দুটি কেন্দ্র ছিল। দুপুর ১২টার পর প্রথম কেন্দ্রের ১নং বুথে দেখা যায় ৩৬২ জনের মধ্যে ১০৩, ২নং বুথে ৮৩, ৩নং বুথে ৬২, ৪নং বুথে ৩৭ এবং ৫নং বুথে ৫৫ জন ভোট দিয়েছেন। স্কুলে ২২৭১ জন ভোটার নিয়ে ১৩০৭নং কেন্দ্র ছিল। এই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার জোবায়ের আহমেদ বলেন, হাতপাখা, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট রয়েছে। দুপুরে তিনি নির্বাচন কমিশনে একটি রিপোর্ট পাঠান। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ১২টা পর্যন্ত ৪০৫ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট শেষে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বমোট ৭১৩ জন ভোট দিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৯নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ৬৬১নং কেন্দ্রের ভোটার ২৪৬৬ জন। ৪নং বুথে দুপুর ২টার দিকে ৩১ এবং ৫নং বুথে ২০ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নূরে আলমের কাছে ভোটর গণনার তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোন নির্দেশনা নেই। আগের কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসাররা তথ্য দিয়েছেন আপনি কেন দিবেন না, জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

এই স্কুলের ৬৫৭নং কেন্দ্রের ভোটার ২৪৩৯। দুপুর ১টা পর্যন্ত এখানে ১৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে প্রিসাইডিং অফিসার জানান।

উত্তরের ২০নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র সরকারি তিতুমির কলেজ। এখানে ৪টি কেন্দ্র ছিল। ৬৭৭নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৪৪০ জন। দুপুর ১.৩০ মিনিটের দিকে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রেজওয়ানুল হক সংবাদকে বলেন, চারটা বুথে ১৭০টি ভোট পড়েছে। ইভিএমে সমস্যা নেই। আমরা ভোটারদের সহায়তা করছি। ভোট গণনা শেষে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২৮৭টি ভোট পড়েছে। মেয়র পদে নৌকা প্রতীক ১৩১ এবং ধানের শীষ প্রতীক ৮৯টি ভোট পেয়েছে।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাকিয়া শেখ। মহাখালী স্কুল রোডের এই বাসিন্দা বলেন, ইভিএমে ভোট দিলাম। ভোট দিয়ে ভালোই লাগছে।

এই স্কুলের ৬৭৫নং কেন্দ্রের ভোটার ১৮১৮। ৫টি বুথে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১৮ জন ভোট দিয়েছিলেন। ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ৬৭৪নং কেন্দ্রের ১নং বুথে ১২২, ২নং বুথে ১১৫, ৩নং বুথে ১২৬ এবং ৪নং বুথে ৯২ জন ভোট দিয়েছিলেন। ভোট গণনা শেষে প্রিসাইডিং অফিসার মহিউদ্দিন আরিফ সংবাদকে বলেন, আমাদের এখানে ৫৪৮ জন ভোট দিয়েছেন।

উত্তরের ২৪নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র তেজগাঁও শিল্প এলকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৭৯৩নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফারসিদ রায়হান সংবাদকে বলেন, ৬টি বুথে ২২৬২ জন ভোটার রয়েছেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ২০০ জন ভোট দিয়েছেন। এখানে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই।

৭৯১নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হেদায়েতুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ৬টি বুথে ২২২৫ জন ভোটার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১০ জন ভোট দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, দক্ষিণের ৪৭নং ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত হয়ে এক কাউন্সিলর প্রার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সংঘর্ষের কারণে একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

কেন্দ্রগুলোর পরিদর্শন শেষে এটা বলা যায় যে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও বড় কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্টতই হয় যে, ভোটার উপস্থিতি অনেক কম ছিল। পর্যবেক্ষণ করা এই কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি সংবাদের আরও কয়েকজন রিপোর্টারও সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের পর্যবেক্ষণেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১৯ মাঘ ১৪২৬, ৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সরেজমিন পরিদর্শন

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট : ভোটার কম

ইমদাদুল হাসান রাতুল |

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রায় ৩০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দু’একটি কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তা মারাত্মক ছিল না। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম। নারী ভোটারদের বলতে গেলে তেমন একটা চোখেই পড়েনি। প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্ট ভোটাররা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি কেন্দ্র ফরিদাবাদ জামিয়া মাদ্রাসা। ৪৭নং ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে এখানে। সকাল ৯টায় কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি। এই কেন্দ্রে ৭৯০ জন নারী এবং ১৫৫০ জন পুরুষ ভোটার রয়েছেন। সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে শতাধিক ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট গণনা শেষে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তারিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সর্বমোট ৫০২ জন ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক ২৮৫, ধানের শীষ ১৯৭ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র জান-ই-আলম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ৫৭৩নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৯৩৫ জন। এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্র ৫৭২নং। যেখানে ভোটার ২০১৩ জন। এই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার এমদাদ হোসেন সংবাদকে বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫০ জন ভোট দিয়েছেন।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন হাসিনা আক্তার। ৮২০৪৩৯৩৩২৯নং ভোটার আইডিধারী হাসিনা বলেন, ভালোই ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিয়েছি। সমস্যা হয়নি।

উত্তরের ৫২নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র আনোয়ারা মান্নাফ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১২৯০নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২০৩৭। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সংবাদকে বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪২টি ভোট পড়েছে। ভোটার হার একটু কম। ৬টি বুথ রয়েছে আমাদের এখানে।

এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্রের নম্বর ১২৮৯। এখানে ভোটার ২২৩৫। এখানের সবাই পুরুষ ভোটার। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ২০০ ভোট পড়েছে। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। ভোট শেষ হওয়ার পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বমোট ৪৮৯ জন ভোট দিয়েছেন।

এই কেন্দ্রের ২নং বুথে সকাল সাড়ে ১০টর দিকে দেখা যায় ৩৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন। ৪নং বুথে ৩৪০ জনের মধ্যে ১০ জন, ৫নং বুথে ৩৪০ জনের মধ্যে ০২ জন ৬নং বুথে ৩৩৭ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন।

১৬, ০৬ দলিপাড়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। ২৬২১২২৯১৬৫৭৯নং আইডি কার্ডধারী এই ভোটার বলেন, ভোট সুষ্ঠুই হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিলাম প্রথমবারের মতো। ডিজিটাল ভোট দিয়ে ভালোই লাগছে।

১৭ ও ৫২নং ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, বিএনপির কোন এজেন্ট নেই। এমনকি ধানের শীষ প্রতীকের কেউ এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। তবে নৌকা ও অন্য কাউন্সিলর প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে এজেন্ট রয়েছে।

উত্তরের ৫১নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র উত্তরা ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। ১২৮৫নং কেন্দ্রের ৩২৪৬ জন ভোটারের সবাই পুরুষ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ১২০ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শরীফ হোসেন ভোট গণনা শেষে সংবাদকে বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কেন্দ্রে শান্তিপূর্র্ণ ভোট হয়েছে। সর্বমোট ৮৩৬ জন ভোট দিয়েছেন।

তবে সকাল সাড়ে ৯টা দিকে এই কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়। যাদের মধ্যে তিনজনকে লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড উত্তরা কার্ডিয়াক সেন্টারে এবং একজনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এই ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আফাজউদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের বহিরাগত ৩০০-৪০০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের এজেন্ট বের করে দিয়েছে।

এই স্কুলের আরেকটি কেন্দ্র নম্বর ২৯৮৯। ১২৮৬ জন ভোটারের জন্য এখানে রয়েছে ৮টি বুথ। বেলা ১১টা দিকে ১নং বুথে গিয়ে দেখা যায় ৩৭৫ জনের মধ্যে ৯ জন, ২নং বুথে ৩৭৫ জনের মধ্যে ১০ জন এবং ৪নং বুথে ৩৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন ভোট দিয়েছেন।

উত্তরের ১নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র টাচস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সকাল সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায় এখানের ১নং বুথে ৪৪৯ জনের মধ্যে ১৫ জন, ২নং বুথে ৪৪৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোর্সেদ আলম সংবাদকে বলেন, এটি ২৪নং কেন্দ্র। এখানে ২০১৪ জন ভোটার। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২০০ জনের মতো ভোট দিয়েছেন। নৌকার এজেন্ট আছে। তবে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই। কেউ কোন আবেদনও জমা দেননি।

২৫নং কেন্দ্রে ১৭৭৬ জন ভোটার। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার কামরুল হাসান সংবাদকে বলেন, আমাদের এখানে ২৬০টি ভোট পড়েছে। বাঘ ও নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ আবেদনই করেননি। ভোট শান্তিপূর্র্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

উত্তরের ৫৩নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র সানবিমস্ স্কুল। এখানে দুটি কেন্দ্র ছিল। দুপুর ১২টার পর প্রথম কেন্দ্রের ১নং বুথে দেখা যায় ৩৬২ জনের মধ্যে ১০৩, ২নং বুথে ৮৩, ৩নং বুথে ৬২, ৪নং বুথে ৩৭ এবং ৫নং বুথে ৫৫ জন ভোট দিয়েছেন। স্কুলে ২২৭১ জন ভোটার নিয়ে ১৩০৭নং কেন্দ্র ছিল। এই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার জোবায়ের আহমেদ বলেন, হাতপাখা, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট রয়েছে। দুপুরে তিনি নির্বাচন কমিশনে একটি রিপোর্ট পাঠান। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ১২টা পর্যন্ত ৪০৫ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট শেষে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সর্বমোট ৭১৩ জন ভোট দিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৯নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ৬৬১নং কেন্দ্রের ভোটার ২৪৬৬ জন। ৪নং বুথে দুপুর ২টার দিকে ৩১ এবং ৫নং বুথে ২০ জন ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নূরে আলমের কাছে ভোটর গণনার তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোন নির্দেশনা নেই। আগের কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসাররা তথ্য দিয়েছেন আপনি কেন দিবেন না, জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

এই স্কুলের ৬৫৭নং কেন্দ্রের ভোটার ২৪৩৯। দুপুর ১টা পর্যন্ত এখানে ১৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে প্রিসাইডিং অফিসার জানান।

উত্তরের ২০নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র সরকারি তিতুমির কলেজ। এখানে ৪টি কেন্দ্র ছিল। ৬৭৭নং কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১৪৪০ জন। দুপুর ১.৩০ মিনিটের দিকে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রেজওয়ানুল হক সংবাদকে বলেন, চারটা বুথে ১৭০টি ভোট পড়েছে। ইভিএমে সমস্যা নেই। আমরা ভোটারদের সহায়তা করছি। ভোট গণনা শেষে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২৮৭টি ভোট পড়েছে। মেয়র পদে নৌকা প্রতীক ১৩১ এবং ধানের শীষ প্রতীক ৮৯টি ভোট পেয়েছে।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাকিয়া শেখ। মহাখালী স্কুল রোডের এই বাসিন্দা বলেন, ইভিএমে ভোট দিলাম। ভোট দিয়ে ভালোই লাগছে।

এই স্কুলের ৬৭৫নং কেন্দ্রের ভোটার ১৮১৮। ৫টি বুথে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১৮ জন ভোট দিয়েছিলেন। ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ৬৭৪নং কেন্দ্রের ১নং বুথে ১২২, ২নং বুথে ১১৫, ৩নং বুথে ১২৬ এবং ৪নং বুথে ৯২ জন ভোট দিয়েছিলেন। ভোট গণনা শেষে প্রিসাইডিং অফিসার মহিউদ্দিন আরিফ সংবাদকে বলেন, আমাদের এখানে ৫৪৮ জন ভোট দিয়েছেন।

উত্তরের ২৪নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র তেজগাঁও শিল্প এলকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৭৯৩নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফারসিদ রায়হান সংবাদকে বলেন, ৬টি বুথে ২২৬২ জন ভোটার রয়েছেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ২০০ জন ভোট দিয়েছেন। এখানে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই।

৭৯১নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হেদায়েতুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ৬টি বুথে ২২২৫ জন ভোটার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১০ জন ভোট দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, দক্ষিণের ৪৭নং ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত হয়ে এক কাউন্সিলর প্রার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সংঘর্ষের কারণে একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।

কেন্দ্রগুলোর পরিদর্শন শেষে এটা বলা যায় যে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও বড় কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্টতই হয় যে, ভোটার উপস্থিতি অনেক কম ছিল। পর্যবেক্ষণ করা এই কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি সংবাদের আরও কয়েকজন রিপোর্টারও সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের পর্যবেক্ষণেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে।