আ-মরি বাংলা ভাষা

নানা আয়োজনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কখনই কাপর্ণ্য করেনি বাঙালি। এবারও এর কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিটি আয়োজনে বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে দৃপ্ত শপথের কথাই ব্যক্ত করছে বাঙালিরা। গতকাল থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলার প্রথম দিনে দিনভর মেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন বই প্রেমীরা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কবি ও কবিতাপ্রেমীদের চদচারণায় মুখর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্ব¡রে অনুষ্ঠিত কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণও। আজ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির তৃতীয় দিন।

১৯৪৭ সাল। ধর্মের ভিত্তিতে নতুন দেশ। একটি ভারত। অন্যটি পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে-কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই যুগল পথ চলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দুরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালি। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয় এ আঘাত বাঙালি সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে পাকিস্তানিরা। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে আবারও উর্দু নিয়ে খায়েশের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন। ১০ দিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান সফর করে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গভর্নমেন্ট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অখ-তার স্বার্থে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। শুধু তাই নয়, খাজা সাহেব এদিন বেশ কঠোর ছিলেন বলে মনে হয়। তার বক্তব্য ছিল এরকম- আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হতে চলেছে, অন্য কোন ভাষা নয়। তবে এটা যথাসময়ে হবে। তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নাকচ করে দেন। তবে হুঙ্কারে কোন কাজ হয় না। বরং সংগঠিত হওয়ার তাগিদ বোধ করে বাঙালি। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার নতুন শপথ নেয় তারা।

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২০ মাঘ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

আ-মরি বাংলা ভাষা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

নানা আয়োজনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কখনই কাপর্ণ্য করেনি বাঙালি। এবারও এর কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিটি আয়োজনে বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে দৃপ্ত শপথের কথাই ব্যক্ত করছে বাঙালিরা। গতকাল থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলার প্রথম দিনে দিনভর মেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন বই প্রেমীরা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কবি ও কবিতাপ্রেমীদের চদচারণায় মুখর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্ব¡রে অনুষ্ঠিত কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণও। আজ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির তৃতীয় দিন।

১৯৪৭ সাল। ধর্মের ভিত্তিতে নতুন দেশ। একটি ভারত। অন্যটি পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে-কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই যুগল পথ চলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দুরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালি। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয় এ আঘাত বাঙালি সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে পাকিস্তানিরা। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে আবারও উর্দু নিয়ে খায়েশের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন। ১০ দিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান সফর করে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গভর্নমেন্ট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অখ-তার স্বার্থে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। শুধু তাই নয়, খাজা সাহেব এদিন বেশ কঠোর ছিলেন বলে মনে হয়। তার বক্তব্য ছিল এরকম- আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হতে চলেছে, অন্য কোন ভাষা নয়। তবে এটা যথাসময়ে হবে। তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নাকচ করে দেন। তবে হুঙ্কারে কোন কাজ হয় না। বরং সংগঠিত হওয়ার তাগিদ বোধ করে বাঙালি। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার নতুন শপথ নেয় তারা।