‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’ স্লোগানকে ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে দুই দিনব্যাপী ‘জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২০’ শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই উৎসবের উদ্বোধন হয়। এর আগে সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথমপর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সংগীত, একুশের গান, উৎসব সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এবারের উৎসবটি জাতীয় কবিতা উৎসবের ৩৪তম আসর। এই আয়োজনে বাংলাদেশের কবিদের সঙ্গে ভারত, সুইডেন, উজবেকিস্তান ও নেপালসহ পাঁচ দেশের তিন শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদ এই উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে এই উৎসব চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতসহ দেশ-বিদেশের অনেক বরেণ্য কবি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিগত বছরে সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদান রাখা পরলোকগত কবিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। এরপরে মুক্ত আলোচনা ও কবিতা পাঠ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এবারের কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার ও সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত হবে ‘মুজিববর্ষ’ এমনটি জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশের মাটিতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনজন ভাষাসংগ্রামী প্রবীণ কবিকে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা’ প্রদান করা হবে। সম্মাননা প্রদান করা হবে- কবি আহমদ রফিক, গীতি-কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরকে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে প্রধান পাথেয় ছিল গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আর আন্তরিক সাহিত্য প্রীতি। বিশেষ করে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি, কবিতা ও সংগীতের প্রতি ছিল তার অসামান্য অনুরাগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির মুক্তিদাতা ও জাতির পিতায় ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি। তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় কবিতা উৎসবের শুরু হয়। আমরা নিজের দেশ, বিশে্বর মানবিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকটের অবসান কামনায় সময়ের দাবিকে উচ্চকিত করে বিগত তেত্রিশটি উৎসবের কন্ঠে নতুন নতুন স্লোগান বা মর্মবাণী তুলে ধরেছি।
মহাদেব সাহা বলেন, তেত্রিশ বছর আগে ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের মূলধারার কবিরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চত্বরের খোলা মঞ্চে পথের উপর হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে ও সংগ্রামী কবিতার যে অনন্য ও অভূতপূর্ব সমাবেশের আয়োজন করেছিল, কালের ধারায় আজ এক মহা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। সেটা ছিল কবিতার উৎসব, কবিতার সংগ্রাম।
উল্লেখ্য যে, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে কবিতা উৎসবের শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। বাঙালির সব জয়ের শিল্পিত ও সুন্দর সহযোদ্ধা কবিতার উপর সরকারের বাধাদানের প্রতিবাদে কবিরা রাজপথে নেমে আসেন। কালের পরিক্রমায় সে উৎসব আজ এই আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে।
সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২০ মাঘ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১
প্রতিনিধি, ঢাবি
‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’ স্লোগানকে ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে দুই দিনব্যাপী ‘জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২০’ শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই উৎসবের উদ্বোধন হয়। এর আগে সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথমপর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সংগীত, একুশের গান, উৎসব সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এবারের উৎসবটি জাতীয় কবিতা উৎসবের ৩৪তম আসর। এই আয়োজনে বাংলাদেশের কবিদের সঙ্গে ভারত, সুইডেন, উজবেকিস্তান ও নেপালসহ পাঁচ দেশের তিন শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদ এই উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে এই উৎসব চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতসহ দেশ-বিদেশের অনেক বরেণ্য কবি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিগত বছরে সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদান রাখা পরলোকগত কবিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। এরপরে মুক্ত আলোচনা ও কবিতা পাঠ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এবারের কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার ও সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত হবে ‘মুজিববর্ষ’ এমনটি জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশের মাটিতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনজন ভাষাসংগ্রামী প্রবীণ কবিকে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা’ প্রদান করা হবে। সম্মাননা প্রদান করা হবে- কবি আহমদ রফিক, গীতি-কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরকে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে প্রধান পাথেয় ছিল গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আর আন্তরিক সাহিত্য প্রীতি। বিশেষ করে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি, কবিতা ও সংগীতের প্রতি ছিল তার অসামান্য অনুরাগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির মুক্তিদাতা ও জাতির পিতায় ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি। তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় কবিতা উৎসবের শুরু হয়। আমরা নিজের দেশ, বিশে্বর মানবিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকটের অবসান কামনায় সময়ের দাবিকে উচ্চকিত করে বিগত তেত্রিশটি উৎসবের কন্ঠে নতুন নতুন স্লোগান বা মর্মবাণী তুলে ধরেছি।
মহাদেব সাহা বলেন, তেত্রিশ বছর আগে ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের মূলধারার কবিরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চত্বরের খোলা মঞ্চে পথের উপর হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে ও সংগ্রামী কবিতার যে অনন্য ও অভূতপূর্ব সমাবেশের আয়োজন করেছিল, কালের ধারায় আজ এক মহা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। সেটা ছিল কবিতার উৎসব, কবিতার সংগ্রাম।
উল্লেখ্য যে, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে কবিতা উৎসবের শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। বাঙালির সব জয়ের শিল্পিত ও সুন্দর সহযোদ্ধা কবিতার উপর সরকারের বাধাদানের প্রতিবাদে কবিরা রাজপথে নেমে আসেন। কালের পরিক্রমায় সে উৎসব আজ এই আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে।