দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে গতকাল পালিত হয়েছে দৈনিক সংবাদ-এর প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ৯৮তম জন্মদিন। আহমদুল কবিরের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তারা আহমদুল কবিরকে বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির এক আদর্শ পুরুষ বলে অভিমত দেন। তারা বলেন, প্রয়াত আহমদুল কবির তার জীবদ্দশায় দেশসেবার মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। আজীবন তিনি তা পালন করে গেছেন। এখন রাজনীতিতে আহমদুল কবিরের মতো মানুষের পদচারণা খুবই কম।
গতকাল তার জন্মদিন উপলক্ষে আহমদুল কবির মনু মিয়া স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে মরহুমের গ্রামের বাড়ি ঘোড়াশালে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কবর জিয়ারত, শিক্ষার্থীদের বৃত্তিপ্রদান, কেককাটা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি। সকাল সাড়ে ১০টায় স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জী ও ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক কমিশনার নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্মৃতি সংসদের কর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়। এর আগে ঘোড়াশালের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় স্মৃতি সংসদের স্থানীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়। এছাড়াও স্থানীয় তিনটি মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আহমদুল কবির ছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। গতকাল ছিল তার ৯৮তম জন্মদিন। ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোড়াশালের ঐতিহ্যবাহী মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই একই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন। আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’। দৈনিক সংবাদ-এ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এই আদর্শ লালন করে গেছেন।
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২১ মাঘ ১৪২৬, ৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে গতকাল পালিত হয়েছে দৈনিক সংবাদ-এর প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ৯৮তম জন্মদিন। আহমদুল কবিরের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তারা আহমদুল কবিরকে বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির এক আদর্শ পুরুষ বলে অভিমত দেন। তারা বলেন, প্রয়াত আহমদুল কবির তার জীবদ্দশায় দেশসেবার মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। আজীবন তিনি তা পালন করে গেছেন। এখন রাজনীতিতে আহমদুল কবিরের মতো মানুষের পদচারণা খুবই কম।
গতকাল তার জন্মদিন উপলক্ষে আহমদুল কবির মনু মিয়া স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে মরহুমের গ্রামের বাড়ি ঘোড়াশালে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কবর জিয়ারত, শিক্ষার্থীদের বৃত্তিপ্রদান, কেককাটা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি। সকাল সাড়ে ১০টায় স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জী ও ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক কমিশনার নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্মৃতি সংসদের কর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়। এর আগে ঘোড়াশালের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় স্মৃতি সংসদের স্থানীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়। এছাড়াও স্থানীয় তিনটি মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আহমদুল কবির ছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক ও দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। গতকাল ছিল তার ৯৮তম জন্মদিন। ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঘোড়াশালের ঐতিহ্যবাহী মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই একই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন। আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’। দৈনিক সংবাদ-এ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এই আদর্শ লালন করে গেছেন।