ধীরে ধীরে জমছে প্রাণের মেলা

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। ধীরে ধীরে জমে ওঠছে মেলা এখনও বই প্রবেশ করছে মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে নতুন বই এসেছে ৩৭টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ এসেছে ৫টি, উপন্যাস ৯টি, কবিতা ৬টি, গবেষণা বিষয়ক গ্রন্থ ৩টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ৩টি, ইতিহাস ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্য গ্রন্থ এসেছে ৫টি।

বইমেলার মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান :

গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. ফকরুল আলম এবং কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বঙ্গবন্ধু রয়েছেন আমাদের চেতনার অংশ জুড়ে। তার নতুন বই আমার দেখা নয়াচীন-এর পাতায় পাতায় আন্তর্জাতিকতাবাদী এক মহান ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি যেমন টের পাওয়া যায় তেমনি বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তার সংকল্প পরিস্ফুট হয়। প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পূর্বের দুটো বইয়ের ধারাবাহিকতায় আমার দেখা নয়াচীন বইটিও অসাধারণ লেখক-নৈপুণ্যের পরিচয়বহ। কারাগারে বসে লেখা এ বইয়ে আছে দেশ এবং বিশ্ব মানুষের মুক্তির কথা। তিনি একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে সমাজতান্ত্রিক নতুন চীন পরিদর্শন করেছেন এবং শিল্পীর তুলির ন্যায় অপরিসীম মমতায় সে-কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। আর্থসামাজিক অবস্থার পাশাপাশি চীন দেশের সাংস্কৃতিক নতুনত্ব তার নজর এড়িয়ে যায়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিনয় করে বলেছেন তিনি লেখক নন, কেবল তার দেখা চীনের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন মাত্র। কিন্তু বইটি নীবিড় পাঠে আমরা দেখব একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী নেতা ও লেখক যেন গভীর অনুসন্ধানে এবং বিশ্লেষণে নয়াচীনকে পাঠকের সামনে তুলে ধরছেন। অপার সৌন্দর্যপ্রিয়তা, জীবন-সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধদৃষ্টি এবং সঞ্জীবন-তৃষ্ণা এ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য।

আলোচকরা বলেন, ১৯৫২ সালের ২-১২ অক্টোবর চীনের পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে এ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে নয়াচীন সফর করেন। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ স্মৃতিনির্ভর ও ভ্রমণকাহিনী তিনি রচনা করেন ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে। শিল্পিত মন ও সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সদ্য বিপ্লবোত্তর গণচীনের শাসন ব্যবস্থা ও জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়। তারা বলেন, এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব, অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার গভীর পরিচয় মেলে। একজন তরুণ রাজনীতিকের মনন-পরিচয়, গভীর দেশপ্রেম এবং নিজ দেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামী প্রত্যয় ফুটে উঠেছে রচনার পরতে পরতে।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের এক অনুপম আলেখ্য ধরা রইল আমার দেখা নয়াচীন বইয়ে। তরুণ শেখ মুজিব চীন দেশ ভ্রমণে তার যে অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন যেন তারই আলোকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করেছেন এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন স্বদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

এদিকে, লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রাজু আহমেদ মামুন, গিরীশ গৈরিক, কৌস্তুভ শ্রী, হামিম কামাল।

কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক, খালেদ হোসাইন ও নাসির আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, আসাদুজ্জামান নূর এবং লায়লা আফরোজ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, শ্যামা সরকার এবং কেএম আবদুল্লাহ আল মূর্তজা মুহিন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), স্মরণ (গিটার), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।

আজকের অনুষ্ঠানসূচি :

আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২১ মাঘ ১৪২৬, ৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বইমেলার দ্বিতীয় দিন

ধীরে ধীরে জমছে প্রাণের মেলা

প্রতিনিধি, ঢাবি

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। ধীরে ধীরে জমে ওঠছে মেলা এখনও বই প্রবেশ করছে মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে নতুন বই এসেছে ৩৭টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ এসেছে ৫টি, উপন্যাস ৯টি, কবিতা ৬টি, গবেষণা বিষয়ক গ্রন্থ ৩টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ৩টি, ইতিহাস ৩টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্য গ্রন্থ এসেছে ৫টি।

বইমেলার মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান :

গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. ফকরুল আলম এবং কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বঙ্গবন্ধু রয়েছেন আমাদের চেতনার অংশ জুড়ে। তার নতুন বই আমার দেখা নয়াচীন-এর পাতায় পাতায় আন্তর্জাতিকতাবাদী এক মহান ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি যেমন টের পাওয়া যায় তেমনি বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তার সংকল্প পরিস্ফুট হয়। প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর পূর্বের দুটো বইয়ের ধারাবাহিকতায় আমার দেখা নয়াচীন বইটিও অসাধারণ লেখক-নৈপুণ্যের পরিচয়বহ। কারাগারে বসে লেখা এ বইয়ে আছে দেশ এবং বিশ্ব মানুষের মুক্তির কথা। তিনি একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে সমাজতান্ত্রিক নতুন চীন পরিদর্শন করেছেন এবং শিল্পীর তুলির ন্যায় অপরিসীম মমতায় সে-কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। আর্থসামাজিক অবস্থার পাশাপাশি চীন দেশের সাংস্কৃতিক নতুনত্ব তার নজর এড়িয়ে যায়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিনয় করে বলেছেন তিনি লেখক নন, কেবল তার দেখা চীনের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন মাত্র। কিন্তু বইটি নীবিড় পাঠে আমরা দেখব একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী নেতা ও লেখক যেন গভীর অনুসন্ধানে এবং বিশ্লেষণে নয়াচীনকে পাঠকের সামনে তুলে ধরছেন। অপার সৌন্দর্যপ্রিয়তা, জীবন-সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধদৃষ্টি এবং সঞ্জীবন-তৃষ্ণা এ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য।

আলোচকরা বলেন, ১৯৫২ সালের ২-১২ অক্টোবর চীনের পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে এ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে নয়াচীন সফর করেন। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ স্মৃতিনির্ভর ও ভ্রমণকাহিনী তিনি রচনা করেন ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে। শিল্পিত মন ও সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সদ্য বিপ্লবোত্তর গণচীনের শাসন ব্যবস্থা ও জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়। তারা বলেন, এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব, অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার গভীর পরিচয় মেলে। একজন তরুণ রাজনীতিকের মনন-পরিচয়, গভীর দেশপ্রেম এবং নিজ দেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামী প্রত্যয় ফুটে উঠেছে রচনার পরতে পরতে।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের এক অনুপম আলেখ্য ধরা রইল আমার দেখা নয়াচীন বইয়ে। তরুণ শেখ মুজিব চীন দেশ ভ্রমণে তার যে অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন যেন তারই আলোকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করেছেন এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন স্বদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

এদিকে, লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রাজু আহমেদ মামুন, গিরীশ গৈরিক, কৌস্তুভ শ্রী, হামিম কামাল।

কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক, খালেদ হোসাইন ও নাসির আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, আসাদুজ্জামান নূর এবং লায়লা আফরোজ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, শ্যামা সরকার এবং কেএম আবদুল্লাহ আল মূর্তজা মুহিন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), স্মরণ (গিটার), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।

আজকের অনুষ্ঠানসূচি :

আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।