সুগন্ধা-বিষখালীতে অকালে অঢেল মিলছে বড় বড় ইলিশ

ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে এই শীত মৌসুমেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। আকারে বেশ বড় এসব ইলিশ অন্য সময়েরে চেয়ে খেতেও সুস্বাদু। মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার ছাপিয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে শহরের অলি-গলি ও বাসা বাড়িতে। শীত মৌসুমে সাধারণত ইলিশ মাছের আমাদানি কম থাকে। এ বছর শীতে ব্যতিক্রম। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজনও বেড়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। সরকার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারছে। জাটকা ইলিশ মা ইলিশ ভালভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এ জন্যই এখন এত ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের দামও অপেক্ষাকৃত একটু কম।

মৎস্য বিভাগ আরও জানায়, ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠি গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখেলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধ্যার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ জেলেইে ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, কংসারদীঘি, কুমারখালী ও দপদপিয়া পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়। জেলার বিষখালী নদীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়াকুল, বাদুরতলা, ভবানীপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, পালট, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, চল্লিশকাহনিয়া, প্রভৃতি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়। জেলেদের বেশিরভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা। ক্রেতা ও পাইকাররা অনেক সময় তরতাজা ইলিশ কিনতে নদীর তীরে এসে বসে থাকেন। জেলেরা মাছ শিকার করে বাড়ি ফেরার পথে পথেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধেকেরও বেশি। বাকি ইলিশগুলো শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়। নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই কেজিরও ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এখন এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ঝালকাঠি শহরের বারোচলা সংলগ্ন বড় বাজার, চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, নলছিটি লঞ্চঘাট বাজার, পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজারে বছরের সবসময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ। নলছিটি জেলে পাড়ার বাসিন্দা প্রবীণ জেলে জুধিস্টি দাস বলেন, আমাদের নদীতে সারাবছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময়টুকো বাদ দিয়ে আমরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরি। মৌসুমে ঝাঁকেঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে মাছের আড়তদাররা এসে এখান থেকে ইলিশ কিনে নেয়। সেই ইলিশ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেক সময় ভারতেও পাঠানো হয় সুগন্ধার সুস্বাদু ইলিশ।

আরও খবর
গড়াইয়ের উজানে খনন, ভাটিতে ডুবুচর : দুর্ভোগে ১০ গ্রাম
ফরেনসিক ল্যাবের ফল প্রভাবিত করার সুযোগ নেই : আইজিপি
হবিগঞ্জে চাঁদা না পেলে হত্যার হুমকি
টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা ডাকাত হত
সাতক্ষীরার ভাটা শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু
গ্রাহক হয়রানি : রূপালী ব্যাংক ক্যাশিয়ারকে বদলি
ভাঙ্গায় জমি বিবাদে সংঘর্ষ আহত ১০
মোরেলগঞ্জে সেই স্কুল পেল চেক ঢেউটিন
হবিগঞ্জে উত্ত্যক্ত দুই বখাটের অর্থদণ্ড
বাগেরহাটে দারোগা হত : ধৃত চালক
স্কুলের মাঠে পুকুর খনন জরিমানা ১,০০,০০০ টাকা
দোহারে গৃহবধূর মরদেহ
জমি বিবাদে অর্ধ শতাধিক বৃক্ষ কর্তন প্রাচীর ভাঙচুর
পুকুর থেকে বালু উত্তোলনে নষ্ট ক্ষেত, ভাঙছে সড়ক-বাড়ি

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সুগন্ধা-বিষখালীতে অকালে অঢেল মিলছে বড় বড় ইলিশ

দিলীপ মণ্ডল, ঝালকাঠি

ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে এই শীত মৌসুমেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। আকারে বেশ বড় এসব ইলিশ অন্য সময়েরে চেয়ে খেতেও সুস্বাদু। মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার ছাপিয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে শহরের অলি-গলি ও বাসা বাড়িতে। শীত মৌসুমে সাধারণত ইলিশ মাছের আমাদানি কম থাকে। এ বছর শীতে ব্যতিক্রম। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজনও বেড়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। সরকার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারছে। জাটকা ইলিশ মা ইলিশ ভালভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এ জন্যই এখন এত ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের দামও অপেক্ষাকৃত একটু কম।

মৎস্য বিভাগ আরও জানায়, ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠি গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তণখেলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধ্যার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ জেলেইে ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, কংসারদীঘি, কুমারখালী ও দপদপিয়া পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়। জেলার বিষখালী নদীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়াকুল, বাদুরতলা, ভবানীপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, পালট, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, চল্লিশকাহনিয়া, প্রভৃতি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়। জেলেদের বেশিরভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা। ক্রেতা ও পাইকাররা অনেক সময় তরতাজা ইলিশ কিনতে নদীর তীরে এসে বসে থাকেন। জেলেরা মাছ শিকার করে বাড়ি ফেরার পথে পথেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধেকেরও বেশি। বাকি ইলিশগুলো শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়। নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই কেজিরও ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এখন এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ঝালকাঠি শহরের বারোচলা সংলগ্ন বড় বাজার, চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, নলছিটি লঞ্চঘাট বাজার, পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজারে বছরের সবসময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ। নলছিটি জেলে পাড়ার বাসিন্দা প্রবীণ জেলে জুধিস্টি দাস বলেন, আমাদের নদীতে সারাবছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময়টুকো বাদ দিয়ে আমরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরি। মৌসুমে ঝাঁকেঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে মাছের আড়তদাররা এসে এখান থেকে ইলিশ কিনে নেয়। সেই ইলিশ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেক সময় ভারতেও পাঠানো হয় সুগন্ধার সুস্বাদু ইলিশ।