সাত মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ শতাংশ

করোনাভাইরাসের কারণে আরও কমার আশঙ্কা লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ১৩ শতাংশ

চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ শতাংশের ওপরে। আর এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে ১৩ শতাংশ। মারাত্মক ক্ষতিকর ভাইরাস করোনার প্রভাবে চলতি মাস শেষে এ আয় আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও বিশ্বব্যপী বাংলাদেশের পোশাক খাতের বাজার মন্দা হওয়ায় এতদিন রপ্তানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানির আয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।

আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় বাড়লেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। ডিসেম্বরে যেখানে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, সেখানে জানুয়ারিতে আয় বেড়ে হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর এ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৬৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। সে হিসাবে জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস দেশের তৈরি পোশাক খাত। জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি এ খাতটি। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে পণ্য জাহাজীকরণ, বুকিং এবং বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে। যেসব পণ্য দেশে আসছে সেগুলো এক মাস আগেই বুকিং করা। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতে চীনা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে চীন এসব পণ্য সরবরাহ শুরু করবে কি না। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও চীনের নাগরিকদের আগমনী ভিসা বন্ধ করেছে। আকাশপথেও যাতায়াত স্থগিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পণ্যের কাঁচামাল আমদানির সংকট দেখা দিলে রপ্তানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীনের ভাইরাস সংকট দীর্ঘায়িত হলে আমরা পোশাকসহ শিল্প খাতের যেসব কাঁচামাল আমদানি করি, তাতে সমস্যা দেখা দেবে। প্রয়োজনে বিকল্পও ভাবতে হবে। পরিস্থিতি জটিল হলে কিছু ক্রেতা চীনের বিকল্প খুঁজবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

চায়না-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই সম্ভাবনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন মৃধা বলেন, এই রকম বিপর্যয়ে সবার আগে মানুষের জীবন। এ ক্ষেত্রে চীন কোন ঝুঁকি নিতে রাজি না। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সেটার জন্য আমাদের আমদানিতেও একটা বড় প্রভাব পড়বে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সাত মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৬২ কোটি মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৯৪৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কম।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ২৪ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এদিকে গত সাত মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। গত সাত মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৪৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাস শেষে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা বাড়েনি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সাত মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ শতাংশ

করোনাভাইরাসের কারণে আরও কমার আশঙ্কা লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ১৩ শতাংশ

রোকন মাহমুদ |

চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ শতাংশের ওপরে। আর এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে ১৩ শতাংশ। মারাত্মক ক্ষতিকর ভাইরাস করোনার প্রভাবে চলতি মাস শেষে এ আয় আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও বিশ্বব্যপী বাংলাদেশের পোশাক খাতের বাজার মন্দা হওয়ায় এতদিন রপ্তানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানির আয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।

আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় বাড়লেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। ডিসেম্বরে যেখানে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, সেখানে জানুয়ারিতে আয় বেড়ে হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর এ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৬৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। সে হিসাবে জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস দেশের তৈরি পোশাক খাত। জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি এ খাতটি। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে পণ্য জাহাজীকরণ, বুকিং এবং বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে। যেসব পণ্য দেশে আসছে সেগুলো এক মাস আগেই বুকিং করা। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতে চীনা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে চীন এসব পণ্য সরবরাহ শুরু করবে কি না। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও চীনের নাগরিকদের আগমনী ভিসা বন্ধ করেছে। আকাশপথেও যাতায়াত স্থগিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পণ্যের কাঁচামাল আমদানির সংকট দেখা দিলে রপ্তানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীনের ভাইরাস সংকট দীর্ঘায়িত হলে আমরা পোশাকসহ শিল্প খাতের যেসব কাঁচামাল আমদানি করি, তাতে সমস্যা দেখা দেবে। প্রয়োজনে বিকল্পও ভাবতে হবে। পরিস্থিতি জটিল হলে কিছু ক্রেতা চীনের বিকল্প খুঁজবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

চায়না-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই সম্ভাবনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন মৃধা বলেন, এই রকম বিপর্যয়ে সবার আগে মানুষের জীবন। এ ক্ষেত্রে চীন কোন ঝুঁকি নিতে রাজি না। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সেটার জন্য আমাদের আমদানিতেও একটা বড় প্রভাব পড়বে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সাত মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৬২ কোটি মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৯৪৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কম।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ২৪ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এদিকে গত সাত মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। গত সাত মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৪৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাস শেষে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা বাড়েনি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।