অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ইস্যু করতে চায় বিএনপি

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি এখন নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে একে আন্দোলনের ইস্যু করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারছে না। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও একদিকে সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে দলে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান কোন সাড়া পাচ্ছেনা। টানা প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে রাজনীতির মাঠে এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটি। সদ্য সমাপ্ত সিটি ভোটে ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন ছিল, তেমনি জনসমর্থনেরও অভাব ছিল। একই কারণে ভোটে অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা আন্দোলন কর্মসূচিও সফল হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় এই দুই শক্তির সঙ্গে ‘লড়াই’ করা বিএনপির জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন না হলেও, এসব অভিযোগ পরাজয়ের একমাত্র কারণ নয়। দল হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতা ভোটারদের উজ্জীবিত করতে না পারা; যা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে। সমর্থকদের একটি অংশও বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারেননি বলেই ভোটকেন্দ্রে যাননি। সুবিধাভোগী কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর আস্থার অভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভোটকেন্দ্রে সক্রিয় হননি।

জানুয়ারিজুড়ে দুই সিটিতে নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপি ব্যাপক ‘শো-ডাউন’ করলেও ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান সক্রিয়তা ছিল না। অধিকাংশ কেন্দ্রেই দেখা গেছে দলটির কোন এজেন্ট নেই। জেনতাও (ভোটার) বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখায়নি। দুই সিটিতে ৫৪ লাখ ভোটারের ৭০ শতাংশই ১ ফেব্রুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ভোটে বিএনপি দুই সিটিতেই মেয়র পদে হেরেছে। উত্তর ও দক্ষিণে মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৯টিতে বিএনপির কাউন্সিলররা জয়ী হয়েছেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হওয়া এবং এর পরের বছর ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা দাবির আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ার পর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পাওয়া ছাড়া সব নির্বাচনেই পরাজিত হয় দলটি। পরাজয়ের পর সরকারি দলের কারচুপি, হামলা-মামলা, কর্মীদের দাঁড়াতে না দেয়া, কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে বাধা দেয়া, ভোটারদের আসতে না দেয়াসহ নানা অভিযোগ তোলে বিএনপি।

ভোটে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভোটের পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। বিএনপির ডাকা হরতালে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। প্রায় চার বছর পর দেশের একটি হরতালের ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনে জনগণের সহযোগিতা চান। তবে জনগণ সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ওইদিন (রোববার) সকাল থেকেই রাজধানীতে দোকানপাট খুলে বসেন ব্যবসায়ীরা। অভিজাত মার্কেটগুলোও খোলা ছিল। রাজপথে যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম থাকলেও হরতালের মতো মনে হয়নি। বিএনপি হরতাল ঘোষণার পরপরই তা প্রতিরোধে রাজপথে থাকার পাল্টা ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে হরতালে ঢাকার রাস্তায় কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। হরতাল শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর থানায়-থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন, যা গতকাল পালিত হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা, সিটি নির্বাচনে কারচুপি ও সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, আজ বেলা ১১টায় গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এবং তাবিথ আওয়াল সংবাদ সম্মেলন করবেন। নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের চিত্র ও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে সংবাদ সম্মেলনে।

বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী। তার ছেলে দলের দ্বিতীয় নেতৃত্ব তারেক রহমান আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলের ভয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। ফলে দলটির নেতৃত্ব সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের হাল ধরলেও, দলের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা নেপথ্যে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। মির্জা ফখরুল বিরোধীরা প্রত্যেকেই দলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরের অবস্থানটি পেতে চান। এজন্য দলের অনেক সিনিয়র নেতা মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে দেয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখান না। অভিযোগ রয়েছে যে, দলের সিনিয়র নেতৃত্বে পাল্টাপাল্টি অবস্থান থাকায় আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি কাউন্সিলর মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার বদলে, শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ ‘কোটায়’ মনোনয়ন দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতাই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম কারণ। তার মতে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই দলীয় প্রার্থীরা বিশাল জয় পেয়েছে।

তবে এক-তৃতীয়াংশের কম ভোট পড়ায় সিটি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘পয়েন্ট অব অর্ডারে’ দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, দেশে যতগুলো নির্বাচন পরিচালনা ‘বডি’ রয়েছে সেখানে এক তৃতীয়াংশ সদস্য (কোরাম) উপস্থিত না হলে সেটা কার্যকর হয় না। এই যে (সিটি) নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ ভোটারও উপস্থিত হলো না, এই নির্বাচনের কি কোন বৈধতা, গ্রহণযোগ্যতা আছে? নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি।

সিটি ভোটে বিএনপির পরাজয় ও আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে রাজনীতি সচেতন মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন, শুধু সরকারি দলের কারণেই কী নির্বাচনে হারছে বিএনপি, নাকি নিজেদের ব্যর্থতাও রয়েছে। বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সাংগঠনিক কী ধরনের দুর্বলতা ছিল, কোথায় কোথায় ব্যর্থতা রয়েছে, সেসব সংশোধনের কাজ করবে দলটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়ররুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার (আজ) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর ২ বছর এবং মুক্তির দাবিতে করণীয়, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সিটি নির্বাচনে

অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ইস্যু করতে চায় বিএনপি

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি এখন নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে একে আন্দোলনের ইস্যু করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারছে না। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও একদিকে সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে দলে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান কোন সাড়া পাচ্ছেনা। টানা প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে রাজনীতির মাঠে এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটি। সদ্য সমাপ্ত সিটি ভোটে ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন ছিল, তেমনি জনসমর্থনেরও অভাব ছিল। একই কারণে ভোটে অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা আন্দোলন কর্মসূচিও সফল হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় এই দুই শক্তির সঙ্গে ‘লড়াই’ করা বিএনপির জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন না হলেও, এসব অভিযোগ পরাজয়ের একমাত্র কারণ নয়। দল হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতা ভোটারদের উজ্জীবিত করতে না পারা; যা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে। সমর্থকদের একটি অংশও বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারেননি বলেই ভোটকেন্দ্রে যাননি। সুবিধাভোগী কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর আস্থার অভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভোটকেন্দ্রে সক্রিয় হননি।

জানুয়ারিজুড়ে দুই সিটিতে নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপি ব্যাপক ‘শো-ডাউন’ করলেও ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে নেতাকর্মীদের দৃশ্যমান সক্রিয়তা ছিল না। অধিকাংশ কেন্দ্রেই দেখা গেছে দলটির কোন এজেন্ট নেই। জেনতাও (ভোটার) বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখায়নি। দুই সিটিতে ৫৪ লাখ ভোটারের ৭০ শতাংশই ১ ফেব্রুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ভোটে বিএনপি দুই সিটিতেই মেয়র পদে হেরেছে। উত্তর ও দক্ষিণে মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৯টিতে বিএনপির কাউন্সিলররা জয়ী হয়েছেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হওয়া এবং এর পরের বছর ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা দাবির আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ার পর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পাওয়া ছাড়া সব নির্বাচনেই পরাজিত হয় দলটি। পরাজয়ের পর সরকারি দলের কারচুপি, হামলা-মামলা, কর্মীদের দাঁড়াতে না দেয়া, কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে বাধা দেয়া, ভোটারদের আসতে না দেয়াসহ নানা অভিযোগ তোলে বিএনপি।

ভোটে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভোটের পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। বিএনপির ডাকা হরতালে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। প্রায় চার বছর পর দেশের একটি হরতালের ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনে জনগণের সহযোগিতা চান। তবে জনগণ সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ওইদিন (রোববার) সকাল থেকেই রাজধানীতে দোকানপাট খুলে বসেন ব্যবসায়ীরা। অভিজাত মার্কেটগুলোও খোলা ছিল। রাজপথে যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম থাকলেও হরতালের মতো মনে হয়নি। বিএনপি হরতাল ঘোষণার পরপরই তা প্রতিরোধে রাজপথে থাকার পাল্টা ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে হরতালে ঢাকার রাস্তায় কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। হরতাল শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর থানায়-থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন, যা গতকাল পালিত হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা, সিটি নির্বাচনে কারচুপি ও সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, আজ বেলা ১১টায় গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এবং তাবিথ আওয়াল সংবাদ সম্মেলন করবেন। নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের চিত্র ও তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে সংবাদ সম্মেলনে।

বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী। তার ছেলে দলের দ্বিতীয় নেতৃত্ব তারেক রহমান আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলের ভয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। ফলে দলটির নেতৃত্ব সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের হাল ধরলেও, দলের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা নেপথ্যে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। মির্জা ফখরুল বিরোধীরা প্রত্যেকেই দলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরের অবস্থানটি পেতে চান। এজন্য দলের অনেক সিনিয়র নেতা মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে দেয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখান না। অভিযোগ রয়েছে যে, দলের সিনিয়র নেতৃত্বে পাল্টাপাল্টি অবস্থান থাকায় আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি কাউন্সিলর মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার বদলে, শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ ‘কোটায়’ মনোনয়ন দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতাই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম কারণ। তার মতে দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই দলীয় প্রার্থীরা বিশাল জয় পেয়েছে।

তবে এক-তৃতীয়াংশের কম ভোট পড়ায় সিটি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘পয়েন্ট অব অর্ডারে’ দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, দেশে যতগুলো নির্বাচন পরিচালনা ‘বডি’ রয়েছে সেখানে এক তৃতীয়াংশ সদস্য (কোরাম) উপস্থিত না হলে সেটা কার্যকর হয় না। এই যে (সিটি) নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ ভোটারও উপস্থিত হলো না, এই নির্বাচনের কি কোন বৈধতা, গ্রহণযোগ্যতা আছে? নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি।

সিটি ভোটে বিএনপির পরাজয় ও আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে রাজনীতি সচেতন মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন, শুধু সরকারি দলের কারণেই কী নির্বাচনে হারছে বিএনপি, নাকি নিজেদের ব্যর্থতাও রয়েছে। বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সাংগঠনিক কী ধরনের দুর্বলতা ছিল, কোথায় কোথায় ব্যর্থতা রয়েছে, সেসব সংশোধনের কাজ করবে দলটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়ররুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার (আজ) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর ২ বছর এবং মুক্তির দাবিতে করণীয়, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।