বছরব্যাপী অপেক্ষার

বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা

তৃতীয় দিনও অনেক নতুন বই এসেছে

অমর একুশে বইমেলা বাঙ্গালির প্রাণের মেলা। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে মূলত এ মেলাকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে হাজারো মেলার মাঝে বইমেলার গুরুত্ব বিশ্বজুড়ে। বাঙালির ভাষা, সাংস্কৃতি বোধ ও ঐতিহ্য হলো অমর একুশে বইমেলার ভিত্তি। লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকদের কাছে অমর একুশে বইমেলা এক অন্যতম উৎসব। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় সবার মিলন মেলা হলো বাংলা একাডেমির বই মেলা। গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন। নিয়ম মেনে মেলার দ্বার উন্মোচিত হয় বিকেল ৩টায়। পাঠকের পদচারণা আর নতুন নতুন বই সব মিলিয়ে বইমেলা এখন জমে উঠেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হতেই ভিড় জমিয়েছে বই প্রেমিকরা। তাদের কেউ মেলা ফটকের বাইরে, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পাড়েও বসে থাকতে দেখা যায় অনেক বইপ্রেমীকে। তাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। প্রাণের মেলায় প্রিয় মানুষটির হাত ধরে কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দল বেঁধে তরুণ-তরুণীরা যেমন এসেছেন তেমনই বাবা-মার হাত ধরেও এসেছে অনেক শিশু-কিশোর। একাকী এসেছেন অনেক বইপ্রেমী বয়স্করাও।

মেলায় পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের মনমতো বই পাচ্ছেন। আবার অনেকে জানিয়েছেন, তারা বই কিনবেন পরে। আগে ভালো মানের বই বেছে রাখছেন। আর এজন্য প্রায় প্রতিদিনই তারা আসছেন মেলায়। এবারের তরুণ লেখকদের বই বের হচ্ছে বেশি। মালিবাগ থেকে সপরিবারে এসেছেন ব্যবসায়ী মহসীন। তিনি সংবাদকে বলেন, বই মেলায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরের বই মেলায় ভিন্নতা এসেছে এবং বেড়েছে অনেক পরিধি। বাচ্চাদের জন্য তাদের পছন্দমতো কিছু বই কিনেছি।

শাকিল নামে একজন পাঠক সংবাদকে বলেন, মেলা শুরুর পর প্রতিদিনই আসছি। ১০০’র মতো বই দেখেছি। বই কিনেছি পাঁচটি। ভিড় এখন কম। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। কয়েকদিন সময় নিয়ে আরও বই কিনব।

বিভিন্ন স্টল ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আশার বাণী। তাদের মতে লোক সমাগম কম হলেও বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। তাম্রলিপি থেকে আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, তাদের বিক্রি আশানুরুপ অনেক ভালো। সামনের দিনগুলোতে তারা আরও ভালো বিক্রির আশা করছেন।

এ বছর তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে চারটি নতুন বই বের হয়েছে। বইগুলো- জাফর ইকবালের স্যারের প্রজেক্ট আকাশকালীন, আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের কমিউনিকেসন্স হ্যাকস, মৌরি মরিয়মের সুখি ব্যাচেলর এবং শামীর মোন্তাজিদের উড়ছে হাইজেনবার্গ। তার মধ্যে জাফর ইকবালের স্যারের প্রজেক্ট আকাশকালীন বইটি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন তাম্রলিপির বিক্রেতা আবদুল কাদের। সিসিমপুর স্টল থেকে আজহার সংবাদকে বলেন, সবসময়ের মতো আমাদের বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুরা আসছে এবং সঙ্গে একটা না একটা বই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

এবারের অমর একুশে বইমেলায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ৪টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। ৪টি প্যাভিলিয়নের মধ্যে দুটি বাংলা একাডেমির মূল চত্বরে, বাকি দুটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।

প্যাভিলিয়নগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সব বই। বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলা একাডেমির সব প্রকাশনা পাঠকের হাতে ব্যাপকভাবে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই ৪টি প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের বাংলা একাডেমির দুটি বিক্রয় কেন্দ্র তো রয়েছেই।’

প্রথমবারের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নতুন বইয়ের আনন্দে মাতিয়ে তুলতে বই প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিকাশ। প্রতি সপ্তাহে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে মেলা প্রাঙ্গণে এসব বই তুলে দেয়া হবে। বিকাশের সঙ্গে মেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীরাও অংশ নিতে পারেন এই বই প্রদান কর্মসূচিতে। এজন্য মেলা প্রাঙ্গনেই থাকছে বই দেয়ার ব্যবস্থা। যে কেউ তার পছন্দ মতো নতুন বা পুরাতন বই বুথে এসে দিতে পারবেন।

এছাড়াও এবারের বইমেলায় দর্শনার্থী-লেখক-ক্রেতাদের বিনামূল্যে চা-কফি এবং পানি খাওয়াবে বিকাশ। এদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাও করেছে তারা। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বইমেলায় গ্রাহকদের জন্য বিকাশ পেমেন্টে থাকছে ১০ শতাংশ তাৎক্ষণিক ক্যাশব্যাক। মেলা চলাকালীন একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতে পারেন।

বিকাশ অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান করে, *২৪৭# ডায়াল করে অথবা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিকাশ পেমেন্ট করে ক্যাশব্যাক অফার নেয়া যাবে। এবারের বই মেলায় প্রায় ৯০ শতাংশ স্টলে বিকাশ পেমেন্ট করা যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে আছে বিকাশের বুথ, যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই, তারা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে এসে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে বইমেলা প্রাঙ্গণেই রয়েছে ক্যাশইন এবং ক্যাশআউটের ব্যবস্থা।

ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের অর্ন্তগত ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অ্যান্ট ফিনান্সিয়ালেরর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত পেমেন্ট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস দিয়ে আসছে।

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বছরব্যাপী অপেক্ষার

বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা

তৃতীয় দিনও অনেক নতুন বই এসেছে

তারেক আজিজ

image

অমর একুশে বইমেলা বাঙ্গালির প্রাণের মেলা। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে মূলত এ মেলাকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে হাজারো মেলার মাঝে বইমেলার গুরুত্ব বিশ্বজুড়ে। বাঙালির ভাষা, সাংস্কৃতি বোধ ও ঐতিহ্য হলো অমর একুশে বইমেলার ভিত্তি। লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকদের কাছে অমর একুশে বইমেলা এক অন্যতম উৎসব। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় সবার মিলন মেলা হলো বাংলা একাডেমির বই মেলা। গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন। নিয়ম মেনে মেলার দ্বার উন্মোচিত হয় বিকেল ৩টায়। পাঠকের পদচারণা আর নতুন নতুন বই সব মিলিয়ে বইমেলা এখন জমে উঠেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হতেই ভিড় জমিয়েছে বই প্রেমিকরা। তাদের কেউ মেলা ফটকের বাইরে, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পাড়েও বসে থাকতে দেখা যায় অনেক বইপ্রেমীকে। তাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। প্রাণের মেলায় প্রিয় মানুষটির হাত ধরে কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দল বেঁধে তরুণ-তরুণীরা যেমন এসেছেন তেমনই বাবা-মার হাত ধরেও এসেছে অনেক শিশু-কিশোর। একাকী এসেছেন অনেক বইপ্রেমী বয়স্করাও।

মেলায় পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের মনমতো বই পাচ্ছেন। আবার অনেকে জানিয়েছেন, তারা বই কিনবেন পরে। আগে ভালো মানের বই বেছে রাখছেন। আর এজন্য প্রায় প্রতিদিনই তারা আসছেন মেলায়। এবারের তরুণ লেখকদের বই বের হচ্ছে বেশি। মালিবাগ থেকে সপরিবারে এসেছেন ব্যবসায়ী মহসীন। তিনি সংবাদকে বলেন, বই মেলায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরের বই মেলায় ভিন্নতা এসেছে এবং বেড়েছে অনেক পরিধি। বাচ্চাদের জন্য তাদের পছন্দমতো কিছু বই কিনেছি।

শাকিল নামে একজন পাঠক সংবাদকে বলেন, মেলা শুরুর পর প্রতিদিনই আসছি। ১০০’র মতো বই দেখেছি। বই কিনেছি পাঁচটি। ভিড় এখন কম। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। কয়েকদিন সময় নিয়ে আরও বই কিনব।

বিভিন্ন স্টল ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আশার বাণী। তাদের মতে লোক সমাগম কম হলেও বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। তাম্রলিপি থেকে আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, তাদের বিক্রি আশানুরুপ অনেক ভালো। সামনের দিনগুলোতে তারা আরও ভালো বিক্রির আশা করছেন।

এ বছর তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে চারটি নতুন বই বের হয়েছে। বইগুলো- জাফর ইকবালের স্যারের প্রজেক্ট আকাশকালীন, আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের কমিউনিকেসন্স হ্যাকস, মৌরি মরিয়মের সুখি ব্যাচেলর এবং শামীর মোন্তাজিদের উড়ছে হাইজেনবার্গ। তার মধ্যে জাফর ইকবালের স্যারের প্রজেক্ট আকাশকালীন বইটি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন তাম্রলিপির বিক্রেতা আবদুল কাদের। সিসিমপুর স্টল থেকে আজহার সংবাদকে বলেন, সবসময়ের মতো আমাদের বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুরা আসছে এবং সঙ্গে একটা না একটা বই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

এবারের অমর একুশে বইমেলায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ৪টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। ৪টি প্যাভিলিয়নের মধ্যে দুটি বাংলা একাডেমির মূল চত্বরে, বাকি দুটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।

প্যাভিলিয়নগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সব বই। বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলা একাডেমির সব প্রকাশনা পাঠকের হাতে ব্যাপকভাবে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই ৪টি প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের বাংলা একাডেমির দুটি বিক্রয় কেন্দ্র তো রয়েছেই।’

প্রথমবারের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নতুন বইয়ের আনন্দে মাতিয়ে তুলতে বই প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিকাশ। প্রতি সপ্তাহে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে মেলা প্রাঙ্গণে এসব বই তুলে দেয়া হবে। বিকাশের সঙ্গে মেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীরাও অংশ নিতে পারেন এই বই প্রদান কর্মসূচিতে। এজন্য মেলা প্রাঙ্গনেই থাকছে বই দেয়ার ব্যবস্থা। যে কেউ তার পছন্দ মতো নতুন বা পুরাতন বই বুথে এসে দিতে পারবেন।

এছাড়াও এবারের বইমেলায় দর্শনার্থী-লেখক-ক্রেতাদের বিনামূল্যে চা-কফি এবং পানি খাওয়াবে বিকাশ। এদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাও করেছে তারা। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বইমেলায় গ্রাহকদের জন্য বিকাশ পেমেন্টে থাকছে ১০ শতাংশ তাৎক্ষণিক ক্যাশব্যাক। মেলা চলাকালীন একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতে পারেন।

বিকাশ অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান করে, *২৪৭# ডায়াল করে অথবা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিকাশ পেমেন্ট করে ক্যাশব্যাক অফার নেয়া যাবে। এবারের বই মেলায় প্রায় ৯০ শতাংশ স্টলে বিকাশ পেমেন্ট করা যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে আছে বিকাশের বুথ, যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই, তারা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে এসে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে বইমেলা প্রাঙ্গণেই রয়েছে ক্যাশইন এবং ক্যাশআউটের ব্যবস্থা।

ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের অর্ন্তগত ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অ্যান্ট ফিনান্সিয়ালেরর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিকাশ ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত পেমেন্ট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস দিয়ে আসছে।