শ্রেণীকক্ষ সঙ্কটে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পাঠদান !

মুগ্ধর আনুষ্ঠানিক হাতে খড়ি হয়েছে গতবছর। কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে খেলার ছলে শেখা কাজটিও এখানে হয়েছে বেশ আনন্দের সঙ্গে। বিদ্যালয়ের সাইক্লোন সেল্টারের দ্বিতল ভবনে পরিপাটি পরিবেশে শুরু হয় তার শিক্ষা কার্যক্রম।

চলতি বছর এস এম ত্বাহা জাহিন মুগ্ধ প্রথম শ্রেণির ছাত্র। নতুন বছর নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ ম্লান করে তার মতো আরও ৯৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর ঠাঁই মিলেছে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় শুধু প্রথম শ্রেণি নয় তৃতীয় শ্রেণির ৯৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাদান করা হয় এই ভবনেই। বছর না ঘুরতে এই পরিবর্তন মুগ্ধর মতো অনেক শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠান হয়েও শ্রেণি সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। পাঁচ ফুট প্রস্থের সুড়ঙ্গ পথ। এক পাশে কাঁটা তারের বেড়া অন্য পাশে খোলা ড্রেন। মাথার ওপর ঝুলন্ত শৌচাগারের পাইপ দিয়ে গড়িয়ে পড়া নোংরা পানি শরীরে পড়ে।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে দেখা মেলে অরক্ষিত মজা পুকুর। এই কন্টকময় পথে নিত্যদিন ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করে ৬শ’ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুজ্জামানের সঙ্গে। আলাপচারিতায় জানা যায়, ১৯৪৭ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী ৬০৩ জন। ২০২০ সালে প্রাক-প্রাথমিকে ৮৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৯৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১১৩ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৯৯ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। শিক্ষক পদ রয়েছে ১২টি, কর্মরত ১০ জন, ১টি পদ শূন্য ও ১ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে রয়েছে। এসএমসির সভাপতি তাপস কুমার সাধু জানান, নানা সমস্যায় জর্জরিত এই প্রতিষ্ঠান। সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। জানা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনের দু’টি রুমে চলছে পাঠদান। মারাত্মক ঝুঁকি ও অনিরাপদের মধ্যে ক্লাস করছে কোমলমতি এ সকল ছেলে-মেয়েরা। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।

স্থানীয়রা বলেন, সন্ধ্যা হতেই সাপ, বিছা, তেলাপোকা, পিঁপড়া আর কেন্নোর (মিলিপেড) দখলে চলে যায় পরিত্যক্ত ভবনটি। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে কুকুর বিড়ালের অবাধ যাতায়াত রয়েছে শ্রেণিকক্ষে। প্রতিদিন সকালে ক্লাস শুরুতে নানা বিড়ম্বনা আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে শিশুরা। বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ। ক্লাস রুমে রয়েছে বেঞ্চের সঙ্কট। নেই অভিভাবকদের বসার কোন সেড।

ঠাসাঠাসি অবস্থানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ৮নং কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি (ইএমআইএস কোড-২০৯০৭০২০২) নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতাকে জয় করে পাইকগাছা উপজেলায় শীর্ষস্থান দখলে ডাবল হ্যাট্রিক করেছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বার উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা শতভাগ পাস, জিপিএ-৫ সহ রেকর্ডসংখ্যক বৃত্তি পায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রেখে চলেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অভিভাবক সাবরিনা শরমিন আজমী জানান, ধারাবাহিক সাফল্যের পর আজও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ পরিবেশে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার। স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দ্দার জানান, বিদ্যালয়ে প্রবেশের পথ প্রশস্থ, কাটাতার অপসারণ, ঝুলন্ত শৌচাগার অপসারণের বিষয়টি বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নজরে এনেছি। তিনি দ্রুত খোলা ড্রেনে স্লাব তৈরি করার আশ্বাস দেন। এদিকে আশ্বাস আর বিশ্বাসের দোলাচলে কেটেছে ১৯৪৭ থেকে ২০২০ সাল।

আজও তৈরি হয়নি পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন। দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদে চলার নিশ্চয়তা মেলেনি। মুজিববর্ষে কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর জিজ্ঞাসা, কবে হবে সুড়ঙ্গ পথ প্রসস্থ হবে, অপসারণ হবে কাটা তারের বেড়া, অপসারিত হবে ঝুলন্ত পায়খানা, খোলা ড্রেনে বসবে স্লাব? ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরিয়ে তৈরি হবে বহুতল ভবন?

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

কপিলমুনি সর. প্রাথ. বিদ্যালয়

শ্রেণীকক্ষ সঙ্কটে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পাঠদান !

বাবুল আক্তার, পাইকগাছা (খুলনা)

মুগ্ধর আনুষ্ঠানিক হাতে খড়ি হয়েছে গতবছর। কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে খেলার ছলে শেখা কাজটিও এখানে হয়েছে বেশ আনন্দের সঙ্গে। বিদ্যালয়ের সাইক্লোন সেল্টারের দ্বিতল ভবনে পরিপাটি পরিবেশে শুরু হয় তার শিক্ষা কার্যক্রম।

চলতি বছর এস এম ত্বাহা জাহিন মুগ্ধ প্রথম শ্রেণির ছাত্র। নতুন বছর নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ ম্লান করে তার মতো আরও ৯৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর ঠাঁই মিলেছে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় শুধু প্রথম শ্রেণি নয় তৃতীয় শ্রেণির ৯৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাদান করা হয় এই ভবনেই। বছর না ঘুরতে এই পরিবর্তন মুগ্ধর মতো অনেক শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠান হয়েও শ্রেণি সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। পাঁচ ফুট প্রস্থের সুড়ঙ্গ পথ। এক পাশে কাঁটা তারের বেড়া অন্য পাশে খোলা ড্রেন। মাথার ওপর ঝুলন্ত শৌচাগারের পাইপ দিয়ে গড়িয়ে পড়া নোংরা পানি শরীরে পড়ে।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে দেখা মেলে অরক্ষিত মজা পুকুর। এই কন্টকময় পথে নিত্যদিন ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করে ৬শ’ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুজ্জামানের সঙ্গে। আলাপচারিতায় জানা যায়, ১৯৪৭ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী ৬০৩ জন। ২০২০ সালে প্রাক-প্রাথমিকে ৮৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৯৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১১৩ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৯৯ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। শিক্ষক পদ রয়েছে ১২টি, কর্মরত ১০ জন, ১টি পদ শূন্য ও ১ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে রয়েছে। এসএমসির সভাপতি তাপস কুমার সাধু জানান, নানা সমস্যায় জর্জরিত এই প্রতিষ্ঠান। সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। জানা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনের দু’টি রুমে চলছে পাঠদান। মারাত্মক ঝুঁকি ও অনিরাপদের মধ্যে ক্লাস করছে কোমলমতি এ সকল ছেলে-মেয়েরা। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।

স্থানীয়রা বলেন, সন্ধ্যা হতেই সাপ, বিছা, তেলাপোকা, পিঁপড়া আর কেন্নোর (মিলিপেড) দখলে চলে যায় পরিত্যক্ত ভবনটি। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে কুকুর বিড়ালের অবাধ যাতায়াত রয়েছে শ্রেণিকক্ষে। প্রতিদিন সকালে ক্লাস শুরুতে নানা বিড়ম্বনা আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে শিশুরা। বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ। ক্লাস রুমে রয়েছে বেঞ্চের সঙ্কট। নেই অভিভাবকদের বসার কোন সেড।

ঠাসাঠাসি অবস্থানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ৮নং কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি (ইএমআইএস কোড-২০৯০৭০২০২) নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতাকে জয় করে পাইকগাছা উপজেলায় শীর্ষস্থান দখলে ডাবল হ্যাট্রিক করেছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বার উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা শতভাগ পাস, জিপিএ-৫ সহ রেকর্ডসংখ্যক বৃত্তি পায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রেখে চলেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অভিভাবক সাবরিনা শরমিন আজমী জানান, ধারাবাহিক সাফল্যের পর আজও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ পরিবেশে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার। স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দ্দার জানান, বিদ্যালয়ে প্রবেশের পথ প্রশস্থ, কাটাতার অপসারণ, ঝুলন্ত শৌচাগার অপসারণের বিষয়টি বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নজরে এনেছি। তিনি দ্রুত খোলা ড্রেনে স্লাব তৈরি করার আশ্বাস দেন। এদিকে আশ্বাস আর বিশ্বাসের দোলাচলে কেটেছে ১৯৪৭ থেকে ২০২০ সাল।

আজও তৈরি হয়নি পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন। দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদে চলার নিশ্চয়তা মেলেনি। মুজিববর্ষে কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর জিজ্ঞাসা, কবে হবে সুড়ঙ্গ পথ প্রসস্থ হবে, অপসারণ হবে কাটা তারের বেড়া, অপসারিত হবে ঝুলন্ত পায়খানা, খোলা ড্রেনে বসবে স্লাব? ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরিয়ে তৈরি হবে বহুতল ভবন?