ফিলিপাইনের আপত্তিতে ঝুলে আছে মামলার অগ্রগতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করে নিয়োগ করা ল’ ফার্ম কোজেন ও কনর। কিন্তু সেই মামলা অগ্রগতি ঝুলে আছে বিবাদী পক্ষ ফিলিপাইনের বৈধতা প্রশ্নে। ফলে মামলা চলবে কি না এখন সেই সিদ্ধান্ত হবে আগে। তবে কবে নাগাদ এমন সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে তা বলতে পারছে না কেউ।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে আট কোটি ১০ লাখ ডলার নেয়া হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। আর শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে নেয়া হয় দুই কোটি ডলার, যা দ্রুত ফেরত পাওয়া যায়। ফিলিপাইনে নেওয়া অর্থের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয় বাংলাদেশকে। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য প্রথমদিকে ফিলিপাইন সরকার ব্যাপক সহায়তা করে আসছিল। তবে একপর্যায়ে তৎপরতা কমে যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ।

নিউইয়র্কের আদালতে গত বছর করা মালায় মূল বিবাদী করা হয় ফিলিপাইনের বেসরকারি ব্যাংক আরসিবিসিকে। এছাড়া ৬টি প্রতিষ্ঠান ও ৪০ ব্যক্তিকে (২৫ জন অজ্ঞাতনামা) এতে আসামি করা হয়। মামলায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার সুদসহ ফেরত এবং মামলা পরিচালনাসহ সব ধরনের খরচ চাওয়া হয়। এর বাইরে ফিলিপাইনের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ১২টি মামলা চলমান আছে। এসব মামলা পরিচালনা করছে সে দেশের আইন বিভাগ।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মামলার বৈধতা নিয়ে ফিলিপাইন আইনগত প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের আইনজীবী এ বিষয়ে দুই দফায় জবাব দিয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্যের পর এখন মামলা চলবে কিনা, সে বিষয়ে শীঘ্রই রায় হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইনে চলমান মামলার গতি-প্রকৃতি দেখছে বাংলাদেশ। পুরো অর্থ উদ্ধার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদী। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিজার্ভ চুরির চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটলেও তা সামনে আসে এক মাস পর। ওই বছরের ১৫ মার্চ বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

রিজার্ভের অর্থ চুরির চার বছর

ফিলিপাইনের আপত্তিতে ঝুলে আছে মামলার অগ্রগতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করে নিয়োগ করা ল’ ফার্ম কোজেন ও কনর। কিন্তু সেই মামলা অগ্রগতি ঝুলে আছে বিবাদী পক্ষ ফিলিপাইনের বৈধতা প্রশ্নে। ফলে মামলা চলবে কি না এখন সেই সিদ্ধান্ত হবে আগে। তবে কবে নাগাদ এমন সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে তা বলতে পারছে না কেউ।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে আট কোটি ১০ লাখ ডলার নেয়া হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। আর শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে নেয়া হয় দুই কোটি ডলার, যা দ্রুত ফেরত পাওয়া যায়। ফিলিপাইনে নেওয়া অর্থের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয় বাংলাদেশকে। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য প্রথমদিকে ফিলিপাইন সরকার ব্যাপক সহায়তা করে আসছিল। তবে একপর্যায়ে তৎপরতা কমে যাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ।

নিউইয়র্কের আদালতে গত বছর করা মালায় মূল বিবাদী করা হয় ফিলিপাইনের বেসরকারি ব্যাংক আরসিবিসিকে। এছাড়া ৬টি প্রতিষ্ঠান ও ৪০ ব্যক্তিকে (২৫ জন অজ্ঞাতনামা) এতে আসামি করা হয়। মামলায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার সুদসহ ফেরত এবং মামলা পরিচালনাসহ সব ধরনের খরচ চাওয়া হয়। এর বাইরে ফিলিপাইনের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ১২টি মামলা চলমান আছে। এসব মামলা পরিচালনা করছে সে দেশের আইন বিভাগ।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মামলার বৈধতা নিয়ে ফিলিপাইন আইনগত প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের আইনজীবী এ বিষয়ে দুই দফায় জবাব দিয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্যের পর এখন মামলা চলবে কিনা, সে বিষয়ে শীঘ্রই রায় হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইনে চলমান মামলার গতি-প্রকৃতি দেখছে বাংলাদেশ। পুরো অর্থ উদ্ধার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদী। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিজার্ভ চুরির চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটলেও তা সামনে আসে এক মাস পর। ওই বছরের ১৫ মার্চ বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।