মাদক জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

র‌্যাবের প্রচেষ্টায় এখন সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, সুন্দরবন একসময় জলদস্যু, বনদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। কোন পর্যটক, স্থানীয় জেলে সুন্দরবনে যেতে পারতেন না। কিন্তু র‌্যাবের প্রচেষ্টায় এখন সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের নিরাপত্তা বেড়েছে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ সদর দফতর সংলগ্ন এলিট হলে আয়োজিত মাদক ধ্বংস ও মাদকবিরোধী প্রচারণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশে মাদকের তৎপরতা বন্ধে তিনভাগে কাজ শুরুর কথাও তিনি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে মাদক নির্মূলে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে আমাদের র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনী। তিনি বলেন, মাদকের তৎপরতা বন্ধে তিনভাগে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলছে। মাদক একটি ভয়ঙ্কর নেশা। যিনি একবার এ নেশায় আসক্ত হবেন তিনি আর বের হতে পারেন না। মাদক সর্বনাশা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মাদক ও জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেটি নিয়ে কাজ করছি। মন্ত্রী বলেন, দেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট কক্সবাজার। সেখানেও র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা কমে এসেছে। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, মো. হাবিবুর রহমান এমপি, মো. ফরিদুল হক খান এমপি, পীর ফজলুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফ, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, বিভিন্ন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কমকর্মতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে দেশকে মাদকমুক্ত করতে হলে মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। ২০১৮ সালের পর থেকে ১০০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার করেছি, ১ হাজার কোটি টাকার অন্য মাদক উদ্ধার করেছি এবং ৪২ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানের পর মাদকের সহজলভ্যতা কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেটা করে তা হলো মাদকের সাপ্লাই কাট করে। কিন্তু দেশে এখন ৬০ লাখের মতো মাদকসেবী। মাদকের ডিমান্ড যদি থাকে তাহলে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না। মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেইন আটক হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী। কিন্তু তারা রক্ষা পায়নি। র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করেছে। এ মামলা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সরকারের আন্তরিকতার কারণে তা পারেনি।

ডিজি বলেন, ২০১৫ সালে আটক হওয়া এসব কোকেইন এসেছিল সাউথ আমেরিকার একটি দেশ থেকে। এসব কোকেইনের গন্তব্যস্থান বাংলাদেশ ছিল না, এটি বাংলাদেশ হয়ে সাউথ এশিয়ার আরেকটি দেশে যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা তা থামিয়ে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, তোমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। মাদকের বিরুদ্ধে তোমাদের লড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বই বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।

অনুষ্ঠান শেষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কয়েকটি অভিযানে জব্দ হওয়া ৩৭০ লিটার কোকেইন ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আটক হওয়া কোকেইনের চালান এটি। এসব মাদকের বাজারমূল্য আনুমানিক ৯ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছে র‌্যাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে এসব মাদক ধ্বংস করা হয়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পক্ষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান ও চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে সহকারী ব্যবস্থাপক (এস্টেট) রায়হান উদ্দিন মাদক ধ্বংস কার্যক্রম তদারকি করেন।

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

মাদক জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো

র‌্যাবের প্রচেষ্টায় এখন সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, সুন্দরবন একসময় জলদস্যু, বনদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। কোন পর্যটক, স্থানীয় জেলে সুন্দরবনে যেতে পারতেন না। কিন্তু র‌্যাবের প্রচেষ্টায় এখন সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের নিরাপত্তা বেড়েছে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ সদর দফতর সংলগ্ন এলিট হলে আয়োজিত মাদক ধ্বংস ও মাদকবিরোধী প্রচারণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশে মাদকের তৎপরতা বন্ধে তিনভাগে কাজ শুরুর কথাও তিনি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে মাদক নির্মূলে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে আমাদের র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনী। তিনি বলেন, মাদকের তৎপরতা বন্ধে তিনভাগে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলছে। মাদক একটি ভয়ঙ্কর নেশা। যিনি একবার এ নেশায় আসক্ত হবেন তিনি আর বের হতে পারেন না। মাদক সর্বনাশা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মাদক ও জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেটি নিয়ে কাজ করছি। মন্ত্রী বলেন, দেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট কক্সবাজার। সেখানেও র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা কমে এসেছে। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, মো. হাবিবুর রহমান এমপি, মো. ফরিদুল হক খান এমপি, পীর ফজলুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফ, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, বিভিন্ন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কমকর্মতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে দেশকে মাদকমুক্ত করতে হলে মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। ২০১৮ সালের পর থেকে ১০০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার করেছি, ১ হাজার কোটি টাকার অন্য মাদক উদ্ধার করেছি এবং ৪২ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানের পর মাদকের সহজলভ্যতা কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেটা করে তা হলো মাদকের সাপ্লাই কাট করে। কিন্তু দেশে এখন ৬০ লাখের মতো মাদকসেবী। মাদকের ডিমান্ড যদি থাকে তাহলে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না। মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেইন আটক হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী। কিন্তু তারা রক্ষা পায়নি। র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করেছে। এ মামলা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সরকারের আন্তরিকতার কারণে তা পারেনি।

ডিজি বলেন, ২০১৫ সালে আটক হওয়া এসব কোকেইন এসেছিল সাউথ আমেরিকার একটি দেশ থেকে। এসব কোকেইনের গন্তব্যস্থান বাংলাদেশ ছিল না, এটি বাংলাদেশ হয়ে সাউথ এশিয়ার আরেকটি দেশে যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা তা থামিয়ে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, তোমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বে। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। মাদকের বিরুদ্ধে তোমাদের লড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বই বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।

অনুষ্ঠান শেষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কয়েকটি অভিযানে জব্দ হওয়া ৩৭০ লিটার কোকেইন ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আটক হওয়া কোকেইনের চালান এটি। এসব মাদকের বাজারমূল্য আনুমানিক ৯ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছে র‌্যাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে এসব মাদক ধ্বংস করা হয়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পক্ষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান ও চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে সহকারী ব্যবস্থাপক (এস্টেট) রায়হান উদ্দিন মাদক ধ্বংস কার্যক্রম তদারকি করেন।