অবৈধভাবে পাচার অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বাইরে অবৈধভাবে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে বিদেশে অবস্থান করা, দুর্নীতির মামলায় আত্মগোপনে থাক ব্যক্তি অথবা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের মধ্যে যারা বিদেশে আছেন তাদেরও দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিবে দুদক। এ বিষয়ে আন্তজার্তিক তদন্ত সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিবে দুদক। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা কিংবা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনবে দুদক। এছাড়া বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় আসামি হয়ে যেসব ব্যক্তি দুবাই, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন রয়েছেন তাদেরও ফেরত আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার সহযোগিতা চেয়ে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হবে। একই সঙ্গে তালিকা এবং মামলার নথিও দেয়া হবে। গতকাল কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অর্থ পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যেই অনেক মামলা হয়েছে। আদালতের আদেশ নিয়ে ওই অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে পাচার করা অর্থও ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হবে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, যিনি বা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন, তাদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সব আইনি প্রক্রিয়া ও কৌশল প্রয়োগ করে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কোন সফলতা আসছে না। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে বেশ কিছু অর্থ পাচারের ঘটনা ধরা পড়লেও ফেরত আনার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে পেরেছিল দুদক। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি কাজ করছে। কিন্তু এ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যে কারণে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। তবে এবার এককভাবে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে দুদক। এক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় দূতাবাসগুলোকে দুদককে সহযোগিতা করতে জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

অবৈধভাবে পাচার অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বাইরে অবৈধভাবে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে বিদেশে অবস্থান করা, দুর্নীতির মামলায় আত্মগোপনে থাক ব্যক্তি অথবা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের মধ্যে যারা বিদেশে আছেন তাদেরও দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিবে দুদক। এ বিষয়ে আন্তজার্তিক তদন্ত সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিবে দুদক। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা কিংবা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনবে দুদক। এছাড়া বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় আসামি হয়ে যেসব ব্যক্তি দুবাই, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন রয়েছেন তাদেরও ফেরত আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার সহযোগিতা চেয়ে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হবে। একই সঙ্গে তালিকা এবং মামলার নথিও দেয়া হবে। গতকাল কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অর্থ পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যেই অনেক মামলা হয়েছে। আদালতের আদেশ নিয়ে ওই অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে পাচার করা অর্থও ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হবে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, যিনি বা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন, তাদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সব আইনি প্রক্রিয়া ও কৌশল প্রয়োগ করে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কোন সফলতা আসছে না। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে বেশ কিছু অর্থ পাচারের ঘটনা ধরা পড়লেও ফেরত আনার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে পেরেছিল দুদক। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি কাজ করছে। কিন্তু এ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যে কারণে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। তবে এবার এককভাবে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে দুদক। এক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় দূতাবাসগুলোকে দুদককে সহযোগিতা করতে জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।