যুব বিশ্বকাপ

ফাইনালে বাংলাদেশ

মাহমুদুল হক জয়ের সেঞ্চুরি এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয় (৪০) ও শাহাদাত হোসেনের (৪০) চমৎকার ব্যাটিংয়ের সাহায্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল প্রথমবারের বিশ^কাপের ফাইনালে ওঠার অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। আইসিসি আয়োজিত কোন বিশ^কাপের ফাইনালে এই প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তরুণ টাইগাররা। এর আগে বাংলাদেশ দল কোন পর্যায়ের বিশ^কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলার তরুণরা উইকেটে নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পরাজিত করে উঠে যায় ফাইনালে। ট্রফির লড়াইয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভারতের। প্রতিযোগিতার শুরু থেকে দুরন্ত খেলা বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালেও সে ধারা বজায় রাখে। প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলেই ফাইনালে ওঠেছে যুবারা।

যে কোন ম্যাচ জিততে হলে দরকার ব্যাটিং বোলিং এবং ফিল্ডিং সব বিভাগেই ভালো করা। বাংলাদেশি তরুণরা সে কাজটিই করেছে এদিন। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য বজায় রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় তরুণরা। জয়ের জন্য ২১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৩ রানের মাথায় তানজিদ হাসান (৩) ও ৩২ রানের মাথায় পারভেজ হাসান ইমন (১৪) রান করে আউট হলে মনে হয়েছিল ম্যাচটি জেতা অত সহজ হবে না। কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয় এবং তাওহিদ হৃদয় দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে পরিস্থিতি সামাল দেন। এ দুজন কিউই তরুণদের আক্রমণ ধীরে ধীরে দলের রান বাড়িয়ে নেন। প্রয়োজনীয় রান রেট চার এর কাছাকাছি হওয়ায় তারা দেখে শুনে বলের গুনাগুন যাচাই করে ব্যাটিং করতে পেরেছে। তারা ব্যাটিং করেছে পরিস্থিতি অনুযায়ী। দলের রান ঠিক ১০০ হওয়ার পর আউট হয়ে যান হৃদয়। তিনি ৪৭ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৪০ রান করে স্টাম্পড হন। তাওহিদ বিদায় নেয়ার পর দলের রান বাড়িয়ে নেয়ার দায়িত্ব বর্তায় জয় ও শাহাদাত হোসেনের উপর। এ দুজন যখন জুটি বাধেন তখনও দলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১২ রান। কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া জয় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। শাহাদাত অবশ্য বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং করেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন বেশিরভাগ স্ট্রাইক জয়কে দিতে। জয় যেহেতু সেট হয়ে গিয়েছিলেন সেহেতু তার টিকে থাকার ওপর অনেকটা নির্ভর করছিল দলের সাফল্য। জয় কেবল দলকেই ফাইনালে তুলেননি সঙ্গে সঙ্গে নিজের সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেছেন। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে জয় একটু সাবধানে ব্যাটিং করেন। তখন আবার রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন শাহাদাত। অর্থাৎ রানের গতি থমকে যায়নি ক্ষণিকের জন্যও। বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গতিতে রান তোলায় শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার পড়ে মাত্র ২৩ রানের। তখন বাংলাদেশের জেতার পাশাপাশি জয়ের সেঞ্চুরিটাও হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। জয় অবশ্য কোন ধরনের ঝুঁকি না দিয়ে সিঙ্গেলসের ওপর নির্ভর করে নিজের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন। ৯৬ রানে বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকার পর জেসে তাশকফের বলে বাউন্ডারি মেরে পৌঁছে যান সেই ম্যাজিক ফিগারে। জয় অবশ্য সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরের বলেই আউট হয়ে যান। ক্যাচ দেন বোলারের হাতেই। তিনি ১২৭ বলে ১৩টি বাউন্ডারি সাহায্যে শতরান করে আউট হন। জয় আউট হলেও এ সময় অবশ্য কিউই খেলোয়াড়রা বুঝে গিয়েছিলেন যে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই তাদের ছিল না কোন মনোবল। মনে হচ্ছিল ম্যাচটি শেষ হলে তারাও হাফ ছেড়ে বাচে। বোলিং ফিল্ডিং করতে হবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত তাই তারা সেটা করে গেছে। জয় যখন আউট হন তখন দলের দরকার ছিল মাত্র ১১ রানের। পরের ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মেরে শাহাদাত সেটা কমিয়ে আনেন আট এ। সেই ওভারেই দলের রান ২১১ হয়। আর শামিম হোসেন বাউন্ডারি মেরে দলকে এনে দেন বহু কাক্সিক্ষত জয়। তখনও খেলা বাকি ছিল ৩৫ বল এবং হাতে ছিল ৬ উইকেট। ৫১ বলে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকেন শাহাদাত। শামিমের রান ছিল ৫।

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

যুব বিশ্বকাপ

ফাইনালে বাংলাদেশ

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

ম্যাচ জয়ের নায়ক মাহমুদুল হাসানের সুইপ শট

মাহমুদুল হক জয়ের সেঞ্চুরি এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয় (৪০) ও শাহাদাত হোসেনের (৪০) চমৎকার ব্যাটিংয়ের সাহায্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল প্রথমবারের বিশ^কাপের ফাইনালে ওঠার অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। আইসিসি আয়োজিত কোন বিশ^কাপের ফাইনালে এই প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তরুণ টাইগাররা। এর আগে বাংলাদেশ দল কোন পর্যায়ের বিশ^কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলার তরুণরা উইকেটে নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পরাজিত করে উঠে যায় ফাইনালে। ট্রফির লড়াইয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভারতের। প্রতিযোগিতার শুরু থেকে দুরন্ত খেলা বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালেও সে ধারা বজায় রাখে। প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলেই ফাইনালে ওঠেছে যুবারা।

যে কোন ম্যাচ জিততে হলে দরকার ব্যাটিং বোলিং এবং ফিল্ডিং সব বিভাগেই ভালো করা। বাংলাদেশি তরুণরা সে কাজটিই করেছে এদিন। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য বজায় রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় তরুণরা। জয়ের জন্য ২১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৩ রানের মাথায় তানজিদ হাসান (৩) ও ৩২ রানের মাথায় পারভেজ হাসান ইমন (১৪) রান করে আউট হলে মনে হয়েছিল ম্যাচটি জেতা অত সহজ হবে না। কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয় এবং তাওহিদ হৃদয় দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে পরিস্থিতি সামাল দেন। এ দুজন কিউই তরুণদের আক্রমণ ধীরে ধীরে দলের রান বাড়িয়ে নেন। প্রয়োজনীয় রান রেট চার এর কাছাকাছি হওয়ায় তারা দেখে শুনে বলের গুনাগুন যাচাই করে ব্যাটিং করতে পেরেছে। তারা ব্যাটিং করেছে পরিস্থিতি অনুযায়ী। দলের রান ঠিক ১০০ হওয়ার পর আউট হয়ে যান হৃদয়। তিনি ৪৭ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৪০ রান করে স্টাম্পড হন। তাওহিদ বিদায় নেয়ার পর দলের রান বাড়িয়ে নেয়ার দায়িত্ব বর্তায় জয় ও শাহাদাত হোসেনের উপর। এ দুজন যখন জুটি বাধেন তখনও দলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১২ রান। কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া জয় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। শাহাদাত অবশ্য বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং করেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন বেশিরভাগ স্ট্রাইক জয়কে দিতে। জয় যেহেতু সেট হয়ে গিয়েছিলেন সেহেতু তার টিকে থাকার ওপর অনেকটা নির্ভর করছিল দলের সাফল্য। জয় কেবল দলকেই ফাইনালে তুলেননি সঙ্গে সঙ্গে নিজের সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেছেন। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে জয় একটু সাবধানে ব্যাটিং করেন। তখন আবার রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন শাহাদাত। অর্থাৎ রানের গতি থমকে যায়নি ক্ষণিকের জন্যও। বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গতিতে রান তোলায় শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার পড়ে মাত্র ২৩ রানের। তখন বাংলাদেশের জেতার পাশাপাশি জয়ের সেঞ্চুরিটাও হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। জয় অবশ্য কোন ধরনের ঝুঁকি না দিয়ে সিঙ্গেলসের ওপর নির্ভর করে নিজের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন। ৯৬ রানে বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকার পর জেসে তাশকফের বলে বাউন্ডারি মেরে পৌঁছে যান সেই ম্যাজিক ফিগারে। জয় অবশ্য সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরের বলেই আউট হয়ে যান। ক্যাচ দেন বোলারের হাতেই। তিনি ১২৭ বলে ১৩টি বাউন্ডারি সাহায্যে শতরান করে আউট হন। জয় আউট হলেও এ সময় অবশ্য কিউই খেলোয়াড়রা বুঝে গিয়েছিলেন যে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই তাদের ছিল না কোন মনোবল। মনে হচ্ছিল ম্যাচটি শেষ হলে তারাও হাফ ছেড়ে বাচে। বোলিং ফিল্ডিং করতে হবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত তাই তারা সেটা করে গেছে। জয় যখন আউট হন তখন দলের দরকার ছিল মাত্র ১১ রানের। পরের ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মেরে শাহাদাত সেটা কমিয়ে আনেন আট এ। সেই ওভারেই দলের রান ২১১ হয়। আর শামিম হোসেন বাউন্ডারি মেরে দলকে এনে দেন বহু কাক্সিক্ষত জয়। তখনও খেলা বাকি ছিল ৩৫ বল এবং হাতে ছিল ৬ উইকেট। ৫১ বলে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকেন শাহাদাত। শামিমের রান ছিল ৫।