বিক্রি নেমেছে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে

ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ হু হু করে বাড়লেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেমেছে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤েœ। বিগত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট সংগ্রহ মাত্র ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। সে হিসাবে প্রথম ছয় মাসে এ খাত থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের হার মাত্র ২০ শতাংশ। গত ১০ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সর্বনিম্ন অঙ্ক এটি। সঞ্চয়পত্র কেনায় সর্বোচ্চ সীমা বেধে দেয়া ও টিআইএন বাধ্যতামূলক করাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিক্রি কমেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার ২১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ২৮ হাজার ৭৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। সে হিসেবে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই ৬ মাসে সরকার আবার ১৫ হাজার ৬৯৫ কোটি ১০ লাখ টাকার মুনাফাও পরিশোধ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ভাষায় এ মুনাফা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতিবছর সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে। ১০ বছরে এ খাতে সরকারের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) চালু, ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে আবেদন চালু এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে বিবরণ দেয়া, একই দিন থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ হলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ কেটে রাখারও নিয়ম করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি কমানো হয়েছে বিনিয়োগ সীমা। সঞ্চয়পত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী এখন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। আর পেনশনারদের জন্য এ হার করা হয়েছে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আগে এসব সীমা নির্ধারণ ছিল না। এসব কারণে এর বিক্রি কমে গেছে।

সঞ্চয় অধিদফতরের আর্থিক পণ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় দেশের ৭৫টি সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর শাখা কার্যালয় এবং ডাকঘরের মাধ্যমে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের সুদের হারও ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যদিও সঞ্চয়পত্রের গড় সুদের হার ১১ শতাংশের মতো। সরকার অবশ্য সুদের হার কমানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।

এদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, ছয় মাসেই সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাজেটে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকেই ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা প্রতিবন্ধকতা

বিক্রি নেমেছে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে

রোকন মাহমুদ

ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ হু হু করে বাড়লেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেমেছে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤েœ। বিগত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট সংগ্রহ মাত্র ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। সে হিসাবে প্রথম ছয় মাসে এ খাত থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের হার মাত্র ২০ শতাংশ। গত ১০ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সর্বনিম্ন অঙ্ক এটি। সঞ্চয়পত্র কেনায় সর্বোচ্চ সীমা বেধে দেয়া ও টিআইএন বাধ্যতামূলক করাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিক্রি কমেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার ২১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ২৮ হাজার ৭৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। সে হিসেবে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। এই ৬ মাসে সরকার আবার ১৫ হাজার ৬৯৫ কোটি ১০ লাখ টাকার মুনাফাও পরিশোধ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ভাষায় এ মুনাফা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতিবছর সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে। ১০ বছরে এ খাতে সরকারের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) চালু, ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে আবেদন চালু এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে বিবরণ দেয়া, একই দিন থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ হলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ কেটে রাখারও নিয়ম করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি কমানো হয়েছে বিনিয়োগ সীমা। সঞ্চয়পত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী এখন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। আর পেনশনারদের জন্য এ হার করা হয়েছে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আগে এসব সীমা নির্ধারণ ছিল না। এসব কারণে এর বিক্রি কমে গেছে।

সঞ্চয় অধিদফতরের আর্থিক পণ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় দেশের ৭৫টি সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর শাখা কার্যালয় এবং ডাকঘরের মাধ্যমে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের সুদের হারও ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যদিও সঞ্চয়পত্রের গড় সুদের হার ১১ শতাংশের মতো। সরকার অবশ্য সুদের হার কমানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।

এদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, ছয় মাসেই সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাজেটে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকেই ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।