ছয় দিন পর মিলল আশামনির লাশ

রাজধানীর কদমতলীর ডিএনডি প্রজেক্টের খালে পড়ে যাওয়া আশা মনির (৫) মরদেহ ৬ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পাড়ে যাওয়া স্থানের প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। গত ১ ফেব্রুয়ারি খেলতে গিয়ে ওই খালে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিল আশামনি। আশামনির পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের ঢিলে কার্যক্রমের কারণে আশামনিকে খুঁজে পেতে ৬দিন লেগেছে। ময়লা ও নোংরা পানি থাকায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম খালে নামতেই চাচ্ছিল না। তারা ময়লা পরিষ্কার করার জন্য সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে দায় এরিয়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, খালটিতে ময়লা ও প্রচ- নোংরা পানিতে জমে থাকা আবর্জনার কারণে কাজে সমস্যা হয়।

উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, খালে পড়ার খবরে সেদিন থেকেই তাদের দুটি ইউনিট শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রচ- নোংরা পানি ও জমে থাকা আবর্জনার কারণে কাজে সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে ময়লার স্তর এমন হয়ে রয়েছে যে, মনে হবে নিচে পানি নেই। কিন্তু কেউ পা দিলে তলিয়ে যাবে। শিশুটিও ওইভাবে তলিয়ে যায়। ময়লার কারণেই তাকে খুঁজে পেতে এত সময় লাগল। আপ্রাণ চেষ্টার পর শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হলো। তবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলে ভালো লাগত।

উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য বলেন, গত চার দিনে খালে জমা আবর্জনা অনেকটা পরিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল আমাদের ডুবুরিরা সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছিল। দুপুরে তাদের একজনের পায়ে মৃতদেহটি আটকায়। এটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, ওখানে পানির নিচে জমা আবর্জনার স্তূপ থেকে আশা মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ওই খালের পাড় থেকে এক মুহূর্তের জন্য ঘরে ফেরেননি আশামনির বাবা-মা। লাশ উদ্ধারের খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার বাবা-মা, প্রতিবেশী, উৎসুক জনতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আশামনির বাবা এরশাদ মাতব্বর জানান, কদমতলীর মোহাম্মদবাগ এলাকায় স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে থাকেন তিনি। দুই সন্তানের মধ্যে আশামনি বড়। তাকে স্থানীয় মেরাজনগর ফারহা মডেল স্কুলে শিশু শ্রেণীতে এবার ভর্তি করানো হয়েছিল। কদমতলীতে তার মুদি দোকানের ব্যবসা রয়েছে। এরশাদ বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে মেয়ে বড় কর্মকর্তা হবে। স্কুলে ভর্তি করানোর পর মেয়েও নিয়মিত স্কুলেও যেত। দেখে খুব ভালো লাগত, কিন্তু এখন ঘরই খালি হয়ে গেল। এশরাদ জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর পরই মেরাজনগরে রায়েরবাগ-কদমতলী সড়কের পাশে ডিএনডির পয়ঃনিষ্কাশন খালের কালভার্টের ওপর কয়েকজন শিশুর সঙ্গে খেলছিল আশামনি। একপর্যায়ে তাদের বল খালে পড়ে ভাসমান আবর্জনায় আটকে যায়। আশামনি সেটা তুলতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়।

আশামনিকে খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি আরও জোরদার করার দাবিতে গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেনা সদস্যরাও সেদিন তল্লাশি অভিযানে যোগ দেন। স্থানীয় কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক শ্রমিক দিয়ে ময়লা সরানোর ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই এলাকাটি বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। আগে ছিল শ্যামপুর ইউনিয়ন, তাই অবহেলিত ছিল। বর্তমানে ডিএনডি খাল সংস্কারের কাজ চলছে। কদমতলী থানার এসআই কবির হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস আশা মনির লাশ উদ্ধারের পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আশামনির পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ছয় দিন পর মিলল আশামনির লাশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর কদমতলীর ডিএনডি প্রজেক্টের খালে পড়ে যাওয়া আশা মনির (৫) মরদেহ ৬ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পাড়ে যাওয়া স্থানের প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। গত ১ ফেব্রুয়ারি খেলতে গিয়ে ওই খালে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিল আশামনি। আশামনির পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের ঢিলে কার্যক্রমের কারণে আশামনিকে খুঁজে পেতে ৬দিন লেগেছে। ময়লা ও নোংরা পানি থাকায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম খালে নামতেই চাচ্ছিল না। তারা ময়লা পরিষ্কার করার জন্য সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে দায় এরিয়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, খালটিতে ময়লা ও প্রচ- নোংরা পানিতে জমে থাকা আবর্জনার কারণে কাজে সমস্যা হয়।

উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, খালে পড়ার খবরে সেদিন থেকেই তাদের দুটি ইউনিট শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রচ- নোংরা পানি ও জমে থাকা আবর্জনার কারণে কাজে সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে ময়লার স্তর এমন হয়ে রয়েছে যে, মনে হবে নিচে পানি নেই। কিন্তু কেউ পা দিলে তলিয়ে যাবে। শিশুটিও ওইভাবে তলিয়ে যায়। ময়লার কারণেই তাকে খুঁজে পেতে এত সময় লাগল। আপ্রাণ চেষ্টার পর শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হলো। তবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলে ভালো লাগত।

উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য বলেন, গত চার দিনে খালে জমা আবর্জনা অনেকটা পরিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল আমাদের ডুবুরিরা সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছিল। দুপুরে তাদের একজনের পায়ে মৃতদেহটি আটকায়। এটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, ওখানে পানির নিচে জমা আবর্জনার স্তূপ থেকে আশা মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ওই খালের পাড় থেকে এক মুহূর্তের জন্য ঘরে ফেরেননি আশামনির বাবা-মা। লাশ উদ্ধারের খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার বাবা-মা, প্রতিবেশী, উৎসুক জনতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আশামনির বাবা এরশাদ মাতব্বর জানান, কদমতলীর মোহাম্মদবাগ এলাকায় স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে থাকেন তিনি। দুই সন্তানের মধ্যে আশামনি বড়। তাকে স্থানীয় মেরাজনগর ফারহা মডেল স্কুলে শিশু শ্রেণীতে এবার ভর্তি করানো হয়েছিল। কদমতলীতে তার মুদি দোকানের ব্যবসা রয়েছে। এরশাদ বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে মেয়ে বড় কর্মকর্তা হবে। স্কুলে ভর্তি করানোর পর মেয়েও নিয়মিত স্কুলেও যেত। দেখে খুব ভালো লাগত, কিন্তু এখন ঘরই খালি হয়ে গেল। এশরাদ জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর পরই মেরাজনগরে রায়েরবাগ-কদমতলী সড়কের পাশে ডিএনডির পয়ঃনিষ্কাশন খালের কালভার্টের ওপর কয়েকজন শিশুর সঙ্গে খেলছিল আশামনি। একপর্যায়ে তাদের বল খালে পড়ে ভাসমান আবর্জনায় আটকে যায়। আশামনি সেটা তুলতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায়।

আশামনিকে খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি আরও জোরদার করার দাবিতে গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেনা সদস্যরাও সেদিন তল্লাশি অভিযানে যোগ দেন। স্থানীয় কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক শ্রমিক দিয়ে ময়লা সরানোর ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই এলাকাটি বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। আগে ছিল শ্যামপুর ইউনিয়ন, তাই অবহেলিত ছিল। বর্তমানে ডিএনডি খাল সংস্কারের কাজ চলছে। কদমতলী থানার এসআই কবির হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস আশা মনির লাশ উদ্ধারের পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আশামনির পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।