কুবি শিক্ষকের প্রতি সহকর্মীদের অনাস্থা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ও বিভাগের দুই শিক্ষককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের প্রতি তার সহকর্মী শিক্ষকরা অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। এছাড়া সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য এবং তাদের সঙ্গে অসদাচারণসহ একাডেমিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারই বিভাগের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগের শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ একটি লিখিত আবেদন করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সান্ধ্য কোর্সের একজন ছাত্রীর ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগ’ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার গত ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের শিক্ষক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ আকবর হোসেন এবং অজ্ঞাত একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু ‘মিথ্যা, বানোয়াট এবং মানসম্মান হানিকর’ অভিযোগ করেন। যা খুবই দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। এতে তিনি এ বিভাগের মান-সম্মান ও ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করেছেন। তিনজন সহকর্মীকে জড়িয়ে তিনি যে মিথ্যা বিষোদগার করেছেন তাতে অন্য শিক্ষকরা মর্মাহত, ক্ষুব্ধ হয়ে এর তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন তারা।

বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের এহেন কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে শিক্ষকরা বলেন, এমন জঘন্য অপবাদ দিয়ে তিনি শুধু ওই তিনজন সহকর্মীকে নয় বরং পুরো বিভাগকেই কলঙ্কিত করেছেন। এমতাবস্থায়, প্রত্যেক সহকর্মী আতঙ্কিত, বিব্রত এবং চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে তাদের স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া গত ২১ জানুয়ারি বিভাগের একটি জরুরি একাডেমিক কমিটির নেয়া দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকেও বাস্তবায়ন করেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগটি গুরুতর এবং স্পর্শকাতর মনে করে শিক্ষকরা লিখিত আবেদনে বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করার জন্য কুমিল্লা ও এর বাইরে বিভিন্ন অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় নিয়মিত। বিভাগীয় প্রধানের চেয়ারটি পবিত্র, দায়িত্বপূর্ণ এবং তা একটি প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতার প্রতীকবাহী। এরকম অভিযোগ আসায় তা শুধু ইংরেজি বিভাগ নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে একটি গভীর সংকটের মধ্যে ফেলেছে।’ এই জটিল পরিস্থিতিতে ইংরেজি বিভাগের একাডেমিক কাজের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর উপযুক্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ তুলে বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টিকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিভাগের দুই শিক্ষককে এর মদদদাতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন, পরকীয়ায় আসক্ত, সে (ছাত্রী) টাকার বিনিময়ে বড়লোকের শয্যাসঙ্গী হয়।’ এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এবং এসবের নেপথ্যে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তার শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ভিন্ন ভিন্ন আবেদন করে দুই শিক্ষক এবং ওই শিক্ষার্থী। এছাড়াও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ^বিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের সব শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিভাগীয় প্রধানের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন ও বিভিন্ন অভিযোগ সংক্রান্ত একটি আবেদন আমি হাতে পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

যৌন নিপীড়ন

কুবি শিক্ষকের প্রতি সহকর্মীদের অনাস্থা

প্রতিনিধি, কুবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ও বিভাগের দুই শিক্ষককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের প্রতি তার সহকর্মী শিক্ষকরা অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। এছাড়া সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য এবং তাদের সঙ্গে অসদাচারণসহ একাডেমিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারই বিভাগের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগের শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ একটি লিখিত আবেদন করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সান্ধ্য কোর্সের একজন ছাত্রীর ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগ’ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদার গত ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের শিক্ষক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ আকবর হোসেন এবং অজ্ঞাত একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু ‘মিথ্যা, বানোয়াট এবং মানসম্মান হানিকর’ অভিযোগ করেন। যা খুবই দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। এতে তিনি এ বিভাগের মান-সম্মান ও ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করেছেন। তিনজন সহকর্মীকে জড়িয়ে তিনি যে মিথ্যা বিষোদগার করেছেন তাতে অন্য শিক্ষকরা মর্মাহত, ক্ষুব্ধ হয়ে এর তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন তারা।

বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের এহেন কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে শিক্ষকরা বলেন, এমন জঘন্য অপবাদ দিয়ে তিনি শুধু ওই তিনজন সহকর্মীকে নয় বরং পুরো বিভাগকেই কলঙ্কিত করেছেন। এমতাবস্থায়, প্রত্যেক সহকর্মী আতঙ্কিত, বিব্রত এবং চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে তাদের স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া গত ২১ জানুয়ারি বিভাগের একটি জরুরি একাডেমিক কমিটির নেয়া দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকেও বাস্তবায়ন করেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগটি গুরুতর এবং স্পর্শকাতর মনে করে শিক্ষকরা লিখিত আবেদনে বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করার জন্য কুমিল্লা ও এর বাইরে বিভিন্ন অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় নিয়মিত। বিভাগীয় প্রধানের চেয়ারটি পবিত্র, দায়িত্বপূর্ণ এবং তা একটি প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতার প্রতীকবাহী। এরকম অভিযোগ আসায় তা শুধু ইংরেজি বিভাগ নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে একটি গভীর সংকটের মধ্যে ফেলেছে।’ এই জটিল পরিস্থিতিতে ইংরেজি বিভাগের একাডেমিক কাজের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর উপযুক্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মোবাইল ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ তুলে বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের এক শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টিকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিভাগের দুই শিক্ষককে এর মদদদাতার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘ওই ছাত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন, পরকীয়ায় আসক্ত, সে (ছাত্রী) টাকার বিনিময়ে বড়লোকের শয্যাসঙ্গী হয়।’ এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এবং এসবের নেপথ্যে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তার শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ভিন্ন ভিন্ন আবেদন করে দুই শিক্ষক এবং ওই শিক্ষার্থী। এছাড়াও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ^বিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগের সব শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিভাগীয় প্রধানের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন ও বিভিন্ন অভিযোগ সংক্রান্ত একটি আবেদন আমি হাতে পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’