ছিনতাইকারী হৃদয়ের হাতে খুন হন গোলাপ

আদালতে স্বীকারোক্তি

ছিনতাইকারীর হাতে খুন হয় রাজধানীর উত্তরার বাস কাউন্টারের ম্যানেজার কাজী গোলাপ হোসেন। গত বুধবার হৃদয় নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে উত্তরা পুলিশ। ছিনতাইকারী হৃদয় গোলাপকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ক্লু না থাকলেও প্রযুক্তির সহযোগিতায় অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ১ সপ্তাহের মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতার করে।

গত ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাট বাড়ি থেকে জবাই করা অবস্থায় কাজী গোলাপ হোসেনের লাশ উদ্ধার করে উত্তরা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গোলাপের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। খুুনির ফেলে যাওয়া জ্যাকেট ও চাদর এবং বাসা থেকে চুরি হওয়া টেলিভিশনের সূত্র ধরে ছিনতাইকারী হৃদয়কে শনাক্ত করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতারের পর খুনের আসল কারণ বেরিয়ে আসে। পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান সর্দার টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ২৭ জানুয়ারি রাতে ভাড়া ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন কাজী গোলাপ হোসেন। পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হত্যাকা-ের আগের রাতে এক যুবককে নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকছেন কাজী গোলাপ হোসেন। পরে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে হৃদয়ের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

এডিসি কামরুজ্জামান জানান, হৃদয় শ্যামপুর এলাকায় অটোরিকশা চালাত। সে বিভিন্ন রকম নেশা করে এবং চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। দিনের বেলায় সে অটোরিকশা চালালেও রাতের বেলায় সে ছিনতাই ও চুরি করে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আলামত পর্যালোচনা করে হৃদয়কে শনাক্ত করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর পালবাড়ি এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা বর্ণনা দেয়। গ্রেফতারের সময় গোলাপের বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া টেলিভিশনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। টেলিভিশনটি হৃদয় একটি চায়ের দোকানে বিক্রি করেছিল।

গ্রেফতারের পর হৃদয় জানিয়েছে, সে শ্যামপুর থাকে। ঘটনার দিন স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে সে লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে আসে। বাবলু পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ছিলেন কাজী গোলাপ হোসেন। কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় সে আর লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য কোন বাস পায়নি। পরে গোলাপকে লালমনিরহাটে যাওয়ার বাসের একটি টিকিট ম্যানেজ করে দিতে বলে সে। কিন্তু গোপাল তাকে জানায়, এত রাতে আর বাস পাওয়া যাবে না। তুমি আমার সঙ্গে আমার বাসায় চলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল সকালে আমি তোমাকে বাসের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিব। গোলাপের কথায় রাজি হয়ে হৃদয় গোলাপের সঙ্গে তার উত্তরার বাসায় যায়। ওই রাতে গোলাপের বাসায় গোলাপ ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে গোলাপের সঙ্গে সে ঘুমিয়ে পড়ে। হৃদয় জানায়, হঠাৎ করেই গোলাপ তার শরীরে হাত দেয়া শুরু করে। বিষয়টি তার পছন্দ হয়নি। এক পর্যায়ে সে গোলাপকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে রান্নাঘরে থাকা সিলপাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে বটি দিয়ে প্রথমে গোলাপকে জবাই করে এবং পরে পেট কেটে দেয়। এরপর সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে হৃদয় নিজের জ্যাকেট ও চাদর ঘটনাস্থলে ফেলে যায়। গোলাপের বাসা থেকে টেলিভিশন এবং গোলাপের পকেট থেকে ৩শ’ টাকা নিয়ে শ্যামপুর এলাকায় আত্মগোপন করে।

পুলিশ জানায়, গোলাপ উত্তরা এলাকার খবরাখবর দৈনিক নবচেতনায় পাঠাতো। পাশাপাশি সে বাবলু পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করত। তার বাড়ি ফরিদপুর ।

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৪ মাঘ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

উত্তরায় কাউন্টার ম্যানেজার হত্যা

ছিনতাইকারী হৃদয়ের হাতে খুন হন গোলাপ

আদালতে স্বীকারোক্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ছিনতাইকারীর হাতে খুন হয় রাজধানীর উত্তরার বাস কাউন্টারের ম্যানেজার কাজী গোলাপ হোসেন। গত বুধবার হৃদয় নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে উত্তরা পুলিশ। ছিনতাইকারী হৃদয় গোলাপকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ক্লু না থাকলেও প্রযুক্তির সহযোগিতায় অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ১ সপ্তাহের মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতার করে।

গত ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাট বাড়ি থেকে জবাই করা অবস্থায় কাজী গোলাপ হোসেনের লাশ উদ্ধার করে উত্তরা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গোলাপের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। খুুনির ফেলে যাওয়া জ্যাকেট ও চাদর এবং বাসা থেকে চুরি হওয়া টেলিভিশনের সূত্র ধরে ছিনতাইকারী হৃদয়কে শনাক্ত করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতারের পর খুনের আসল কারণ বেরিয়ে আসে। পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান সর্দার টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ২৭ জানুয়ারি রাতে ভাড়া ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন কাজী গোলাপ হোসেন। পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হত্যাকা-ের আগের রাতে এক যুবককে নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকছেন কাজী গোলাপ হোসেন। পরে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে হৃদয়ের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।

এডিসি কামরুজ্জামান জানান, হৃদয় শ্যামপুর এলাকায় অটোরিকশা চালাত। সে বিভিন্ন রকম নেশা করে এবং চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। দিনের বেলায় সে অটোরিকশা চালালেও রাতের বেলায় সে ছিনতাই ও চুরি করে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আলামত পর্যালোচনা করে হৃদয়কে শনাক্ত করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর পালবাড়ি এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা বর্ণনা দেয়। গ্রেফতারের সময় গোলাপের বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া টেলিভিশনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। টেলিভিশনটি হৃদয় একটি চায়ের দোকানে বিক্রি করেছিল।

গ্রেফতারের পর হৃদয় জানিয়েছে, সে শ্যামপুর থাকে। ঘটনার দিন স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে সে লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে আসে। বাবলু পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ছিলেন কাজী গোলাপ হোসেন। কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় সে আর লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য কোন বাস পায়নি। পরে গোলাপকে লালমনিরহাটে যাওয়ার বাসের একটি টিকিট ম্যানেজ করে দিতে বলে সে। কিন্তু গোপাল তাকে জানায়, এত রাতে আর বাস পাওয়া যাবে না। তুমি আমার সঙ্গে আমার বাসায় চলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল সকালে আমি তোমাকে বাসের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিব। গোলাপের কথায় রাজি হয়ে হৃদয় গোলাপের সঙ্গে তার উত্তরার বাসায় যায়। ওই রাতে গোলাপের বাসায় গোলাপ ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে গোলাপের সঙ্গে সে ঘুমিয়ে পড়ে। হৃদয় জানায়, হঠাৎ করেই গোলাপ তার শরীরে হাত দেয়া শুরু করে। বিষয়টি তার পছন্দ হয়নি। এক পর্যায়ে সে গোলাপকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে রান্নাঘরে থাকা সিলপাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে বটি দিয়ে প্রথমে গোলাপকে জবাই করে এবং পরে পেট কেটে দেয়। এরপর সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে হৃদয় নিজের জ্যাকেট ও চাদর ঘটনাস্থলে ফেলে যায়। গোলাপের বাসা থেকে টেলিভিশন এবং গোলাপের পকেট থেকে ৩শ’ টাকা নিয়ে শ্যামপুর এলাকায় আত্মগোপন করে।

পুলিশ জানায়, গোলাপ উত্তরা এলাকার খবরাখবর দৈনিক নবচেতনায় পাঠাতো। পাশাপাশি সে বাবলু পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করত। তার বাড়ি ফরিদপুর ।