ক্যান্টিনের খাবারে বিষ

সিলগালা, তদন্ত চলছে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র মিলনায়তন (টিএসসি) ক্যান্টিনের খাবারের মধ্যে বিষ মেশানোর অভিযোগ উঠেছে। অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে একটি গ্রুপ গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর শুনে গতকাল সকালে পুলিশ ক্যান্টিনটি সিলগালা (বন্ধ) করে দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে পুলিশ, সিআইডি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনার তদন্তে নেমেছে। খবর শুনে ভার্সিটির ডাক্তার ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

ভিসি প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ক্যান্টিনটি বন্ধ আছে। পুলিশ তদন্ত করছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্তে সবধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত রাখতে সবধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, একটি মহল প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে ও ভার্সিটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। কে বা কারা ক্যান্টিনের খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করেছে খবর পেয়েই গতকাল ভোরে পুলিশ দ্রুততম সময়ে ক্যান্টিনটি সিলগালা করে দেয়। এ খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্র এবং প্রশাসনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন ক্যান্টিনে গিয়ে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনাকে বড় ধরনের নাশকতা হিসেবে দেখছে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে এ ক্যান্টিনে মরা মুরগি খাওয়ানো এবং পচা খাবার বিতরণের ঘটনায় ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, ক্যান্টিনের পরিচালকের সঙ্গে একজনের ঝামেলা হয়েছে। সেই ঝামেলার কারণে একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর ছিল ক্যান্টিনের খাবারে বিষ মিশানো হয়েছে। পুলিশ এমন খবর পেয়ে ক্যান্টিনে যায়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যান্টিনের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে ক্যান্টিন বন্ধ করে মূল গেটে আনসার সদস্য পাহাড়ায় বসানো হয়েছে। আনসার কমান্ডারসহ ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী ভেতরে অবস্থান করছেন। ইন্টার্নি ছাত্ররা ক্যান্টিনে খাবারের জন্য এসে ক্যান্টিন বন্ধ দেখে ফেরত যাচ্ছে। কথা হয় আনসার সদস্য জামাল উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি বলেন, ভোর ৬টায় ক্যান্টিন এলাকায় তার ডিউটি পড়ে। তিনি সকালে এসে ক্যান্টিনের নিরাপত্তায় ডিউটিতে যোগ দিতে এসে দেখেন ক্যান্টিন বন্ধ।

ক্যান্টিনের এক কর্মচারী জানান, ক্যান্টিনটি ৪ থেকে ৫ জন মিলে শেয়ারে পরিচালনা করেন। এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মচারী কাজ করে। এখানে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছাড়া বাইরের কেউ আসেন না।

ক্যান্টিনের স্টাফ জুনায়েদ জানান, ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন শেখর সাহেব। ক্যান্টিন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এ সমস্যা হয়েছে। তাই ক্যান্টিন বন্ধ রাখা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হয়, ক্যান্টিনের খাবারে কোন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা তারা জানেন না। ক্যান্টিনের ভালো-মন্দ দেখেন প্রক্টর সৈয়দ মুজাফফর। তিনি বিষয়টি বলতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আনসার কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে জাহিদ নামে একজন এ ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন। ওই সময় ক্যান্টিনে পচা ও মরা মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ানোর অভিযোগে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে লিজ বাতিল করা হয়। পরে এ ক্যান্টিন লিজ নেন শেখর নামের এক ব্যক্তি। শুক্রবার রাতে তিনি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় এক সাংবাদিকের সঙ্গে ঝামেলা করেন। পরে সেখান থেকে গুজব ছড়ায় ক্যান্টিনের খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই সাংবাদিক থানায় গিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশ এসে খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা যাচাই করতে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ভার্সিটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।

রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৬ মাঘ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বঙ্গবন্ধু ভার্সিটিতে

ক্যান্টিনের খাবারে বিষ

সিলগালা, তদন্ত চলছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র মিলনায়তন (টিএসসি) ক্যান্টিনের খাবারের মধ্যে বিষ মেশানোর অভিযোগ উঠেছে। অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে একটি গ্রুপ গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর শুনে গতকাল সকালে পুলিশ ক্যান্টিনটি সিলগালা (বন্ধ) করে দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে পুলিশ, সিআইডি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনার তদন্তে নেমেছে। খবর শুনে ভার্সিটির ডাক্তার ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

ভিসি প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ক্যান্টিনটি বন্ধ আছে। পুলিশ তদন্ত করছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্তে সবধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত রাখতে সবধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, একটি মহল প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে ও ভার্সিটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। কে বা কারা ক্যান্টিনের খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করেছে খবর পেয়েই গতকাল ভোরে পুলিশ দ্রুততম সময়ে ক্যান্টিনটি সিলগালা করে দেয়। এ খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্র এবং প্রশাসনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন ক্যান্টিনে গিয়ে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনাকে বড় ধরনের নাশকতা হিসেবে দেখছে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে এ ক্যান্টিনে মরা মুরগি খাওয়ানো এবং পচা খাবার বিতরণের ঘটনায় ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, ক্যান্টিনের পরিচালকের সঙ্গে একজনের ঝামেলা হয়েছে। সেই ঝামেলার কারণে একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর ছিল ক্যান্টিনের খাবারে বিষ মিশানো হয়েছে। পুলিশ এমন খবর পেয়ে ক্যান্টিনে যায়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যান্টিনের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে ক্যান্টিন বন্ধ করে মূল গেটে আনসার সদস্য পাহাড়ায় বসানো হয়েছে। আনসার কমান্ডারসহ ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী ভেতরে অবস্থান করছেন। ইন্টার্নি ছাত্ররা ক্যান্টিনে খাবারের জন্য এসে ক্যান্টিন বন্ধ দেখে ফেরত যাচ্ছে। কথা হয় আনসার সদস্য জামাল উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি বলেন, ভোর ৬টায় ক্যান্টিন এলাকায় তার ডিউটি পড়ে। তিনি সকালে এসে ক্যান্টিনের নিরাপত্তায় ডিউটিতে যোগ দিতে এসে দেখেন ক্যান্টিন বন্ধ।

ক্যান্টিনের এক কর্মচারী জানান, ক্যান্টিনটি ৪ থেকে ৫ জন মিলে শেয়ারে পরিচালনা করেন। এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মচারী কাজ করে। এখানে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছাড়া বাইরের কেউ আসেন না।

ক্যান্টিনের স্টাফ জুনায়েদ জানান, ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন শেখর সাহেব। ক্যান্টিন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এ সমস্যা হয়েছে। তাই ক্যান্টিন বন্ধ রাখা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হয়, ক্যান্টিনের খাবারে কোন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা তারা জানেন না। ক্যান্টিনের ভালো-মন্দ দেখেন প্রক্টর সৈয়দ মুজাফফর। তিনি বিষয়টি বলতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আনসার কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে জাহিদ নামে একজন এ ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন। ওই সময় ক্যান্টিনে পচা ও মরা মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়ানোর অভিযোগে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে লিজ বাতিল করা হয়। পরে এ ক্যান্টিন লিজ নেন শেখর নামের এক ব্যক্তি। শুক্রবার রাতে তিনি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় এক সাংবাদিকের সঙ্গে ঝামেলা করেন। পরে সেখান থেকে গুজব ছড়ায় ক্যান্টিনের খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই সাংবাদিক থানায় গিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশ এসে খাবারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা যাচাই করতে ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ভার্সিটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।