শিক্ষকের মামলায় গ্রেফতার অভিভাবক নেতা দুলু জামায়াত-শিবিরপন্থি শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়ী করে মামলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের পরেও ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্রীদের ‘ওড়না নিষিদ্ধ’র অপপ্রচার বন্ধ করেনি বিএনপি-জামায়াতপন্থি এক শ্রেণীর অভিভাবক। এই চক্রটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক কায়দায় অপপ্রচার চালাতে থাকে।
এদিকে ড্রেস কোড পরিবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের হুমকির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক শিক্ষকের মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও তিনজনকে।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় জিয়াউল কবির দুলু ছাড়াও মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ মানিক, সওগাতুল আলম শওকত ও শ্যামলী আক্তার শিমু নামের একজন অভিভাবককে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ওড়না নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে একটি বিশেষ মহল অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির জামায়াত-শিবিরপন্থি একটি চক্র ও অভিভাবকদের একটি পক্ষ ফেসবুকে চালায় মিথ্য ও বিকৃত তথ্য।
এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার (রংপুর-১) তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী যেকোন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তার সরকার সব সময় সতর্ক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদও মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরও অপপ্রচার বন্ধ করেনি জামায়াতপন্থি পক্ষটি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছর ৩ অক্টোবর গভর্নিং বডির সভায় ড্রেস কোডে আংশিক পরিবর্তন করা হয়, ছাত্রদের টুপি ও ছাত্রীদের স্কার্ফ ঐচ্ছিক করা হয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ অন্য ধর্মালম্বী ছাত্রছাত্রী রয়েছে। গভর্নিং বডির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরপন্থি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক নেতা জিয়াউল কবির, মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ মানিক, মো. সওগাতুল আলম শওকত ও শ্যামলী আক্তার শিমু কথিত অভিভাবকদের নিয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়।
গত ৮ ও ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূল ভবনের সামনে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৭০/৮০ জন নামধারী অভিভাবক নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ব্যানারসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভীতির সঞ্চার হয়, লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্ন ঘটে। বিক্ষোভকারীদের আচরণ ছিল মারমুখী, অশালীন ও উগ্র।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিক্ষোভের সময় প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোর্ড পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ফেসবুক ও মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তিসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানহানিকর তথ্য প্রচার করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেছেন, ‘ওড়না নিষিদ্ধ করা হয়নি। এটা অপপ্রচার। ড্রেস কোড পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত ড্রেস কোডে রয়েছে সালোয়ার, কামিজ ও ‘ক্রস বেল্ট ওড়না’। মেয়েরা আগে যে অতিরিক্ত বড় ওড়নাটি ব্যবহার করত তা ঐচ্ছিক করা হয়েছে। মূল ড্রেসের সঙ্গে যারা অতিরিক্ত বড় ওড়না ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, তারা ব্যবহার করতে পারবে। টুপিও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী চাইলে বড় ওড়না বা টুপি ব্যবহারে কোন নিষেধ নেই।
রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৬ মাঘ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল সানি ১৪৪১
শিক্ষকের মামলায় গ্রেফতার অভিভাবক নেতা দুলু জামায়াত-শিবিরপন্থি শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়ী করে মামলা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের পরেও ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্রীদের ‘ওড়না নিষিদ্ধ’র অপপ্রচার বন্ধ করেনি বিএনপি-জামায়াতপন্থি এক শ্রেণীর অভিভাবক। এই চক্রটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক কায়দায় অপপ্রচার চালাতে থাকে।
এদিকে ড্রেস কোড পরিবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের হুমকির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এক শিক্ষকের মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও তিনজনকে।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় জিয়াউল কবির দুলু ছাড়াও মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ মানিক, সওগাতুল আলম শওকত ও শ্যামলী আক্তার শিমু নামের একজন অভিভাবককে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ওড়না নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে একটি বিশেষ মহল অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির জামায়াত-শিবিরপন্থি একটি চক্র ও অভিভাবকদের একটি পক্ষ ফেসবুকে চালায় মিথ্য ও বিকৃত তথ্য।
এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার (রংপুর-১) তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী যেকোন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তার সরকার সব সময় সতর্ক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদও মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরও অপপ্রচার বন্ধ করেনি জামায়াতপন্থি পক্ষটি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছর ৩ অক্টোবর গভর্নিং বডির সভায় ড্রেস কোডে আংশিক পরিবর্তন করা হয়, ছাত্রদের টুপি ও ছাত্রীদের স্কার্ফ ঐচ্ছিক করা হয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ অন্য ধর্মালম্বী ছাত্রছাত্রী রয়েছে। গভর্নিং বডির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরপন্থি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক নেতা জিয়াউল কবির, মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ মানিক, মো. সওগাতুল আলম শওকত ও শ্যামলী আক্তার শিমু কথিত অভিভাবকদের নিয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়।
গত ৮ ও ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূল ভবনের সামনে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৭০/৮০ জন নামধারী অভিভাবক নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ব্যানারসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভীতির সঞ্চার হয়, লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্ন ঘটে। বিক্ষোভকারীদের আচরণ ছিল মারমুখী, অশালীন ও উগ্র।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিক্ষোভের সময় প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোর্ড পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ফেসবুক ও মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তিসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানহানিকর তথ্য প্রচার করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেছেন, ‘ওড়না নিষিদ্ধ করা হয়নি। এটা অপপ্রচার। ড্রেস কোড পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত ড্রেস কোডে রয়েছে সালোয়ার, কামিজ ও ‘ক্রস বেল্ট ওড়না’। মেয়েরা আগে যে অতিরিক্ত বড় ওড়নাটি ব্যবহার করত তা ঐচ্ছিক করা হয়েছে। মূল ড্রেসের সঙ্গে যারা অতিরিক্ত বড় ওড়না ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে, তারা ব্যবহার করতে পারবে। টুপিও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী চাইলে বড় ওড়না বা টুপি ব্যবহারে কোন নিষেধ নেই।