বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) আয়োজিত ‘করপোরেট কানেকট : স্ট্রেনদেনিং মার্কেট এক্সেস ফর ওম্যান বিজনেস ওনার্স ২০২০ কনফারেন্স অ্যান্ড বিজনেস ফেয়ার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও নারীরা বুটিকস, পোশাক তৈরি কিংবা বিউটি পার্লারের ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছেন। এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাদের অবস্থান মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংেশর মধ্যে। আমরা যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতেই হবে। তাই সরকার নারী উদ্যোক্তা বিকাশে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ডিরেক্টর (জেন্ডার) কারেন গ্রোন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, নারী উদ্যোক্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউইসি কানেকট ইন্টারন্যাশনাল- এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলিজাবেদ এ. ভাজকিউএজ, আইএফসির বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস সুমি বক্তব্য রাখেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা এখন শিক্ষায় ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমরা নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে পিছিয়ে আছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের সেভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এই জায়গায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সরকার সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীরা ১০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটা নিরূপন করার জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগায়োগ করেছি। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগামীকাল এফবিসিসিআই প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে পিয়াজসহ অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে কোন ঘাটতি দেখা দিবে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার বলেন, বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের বড় সমস্যা হলো তারা ব্যবসা করার পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা পায় না। পাশাপাশি পণ্য বিপণনের জন্য সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না। এসব কারণে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা অত্যন্ত কম। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণে নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের দেশি ও বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা দিতে আগ্রহী।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নিরাপদ ও নারীবান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে দেশে নারী উদ্যোক্তা বাড়বে। দেশে ৫৫ হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে যেগুলো পরিচালনা করে আসছেন নারীরা। যা এ খাতের মোট বাণিজ্যের সাত দশমিক ২১ শতাংশ।
বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিপণনে সহায়তা করতে আইএফসি ও ডব্লিউইসি কানেকট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। আজ এর উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১২শ’ নারী উদ্যোক্তাকে দেশি ও বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) আয়োজিত ‘করপোরেট কানেকট : স্ট্রেনদেনিং মার্কেট এক্সেস ফর ওম্যান বিজনেস ওনার্স ২০২০ কনফারেন্স অ্যান্ড বিজনেস ফেয়ার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও নারীরা বুটিকস, পোশাক তৈরি কিংবা বিউটি পার্লারের ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছেন। এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাদের অবস্থান মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংেশর মধ্যে। আমরা যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতেই হবে। তাই সরকার নারী উদ্যোক্তা বিকাশে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ডিরেক্টর (জেন্ডার) কারেন গ্রোন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, নারী উদ্যোক্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউইসি কানেকট ইন্টারন্যাশনাল- এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলিজাবেদ এ. ভাজকিউএজ, আইএফসির বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস সুমি বক্তব্য রাখেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা এখন শিক্ষায় ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমরা নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে পিছিয়ে আছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের সেভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এই জায়গায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সরকার সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীরা ১০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটা নিরূপন করার জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগায়োগ করেছি। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগামীকাল এফবিসিসিআই প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে পিয়াজসহ অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে কোন ঘাটতি দেখা দিবে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার বলেন, বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের বড় সমস্যা হলো তারা ব্যবসা করার পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা পায় না। পাশাপাশি পণ্য বিপণনের জন্য সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না। এসব কারণে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা অত্যন্ত কম। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণে নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের দেশি ও বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা দিতে আগ্রহী।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নিরাপদ ও নারীবান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে দেশে নারী উদ্যোক্তা বাড়বে। দেশে ৫৫ হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে যেগুলো পরিচালনা করে আসছেন নারীরা। যা এ খাতের মোট বাণিজ্যের সাত দশমিক ২১ শতাংশ।
বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিপণনে সহায়তা করতে আইএফসি ও ডব্লিউইসি কানেকট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। আজ এর উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১২শ’ নারী উদ্যোক্তাকে দেশি ও বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।