গৃহহীনদের ৪৪ ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ৪৪টি ঘর নির্মাণে নীলফামারীর জলঢাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর এসব ঘর নির্মাণে নিম্ন-মানের সামগ্রী, নকশা পরিবর্তন ও বিত্তশালীদের মাঝে ঘর বরাদ্দের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জলঢাকা উপজেলায় ৪৪ হতদরিদ্র পরিবারকে গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ঘর নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি নির্দিষ্ট সময়ে। দুইকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি ঘর হবে ২০ ফুট লম্বা ও প্রস্থ ৮ ফুট। চারপাশে হবে ইটের দেয়াল, ওপরে টিনের ছাউনি। ছাউনিতে মেহগনি অথবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করতে হবে। গৃহের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ঢালাই হবে। রান্নাঘর ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। ইট হবে এক নম্বর, ছাউনির টিন হবে পয়েন্ট ৪৬ মিলিমিটার পুরত্বের রঙিন ঢেউটিন। ঘর ও রান্নাঘরের মাঝখানে সাত ফুট করিডোর থাকবে। যার ওপরে থাকবে টিনের ছাউনি। ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫শ’ ৩১ টাকা করে ৪৪টি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩শ’৬৪ টাকা। এই গৃহনির্মাণ প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। আর প্রতিটি ঘরই একটি প্রকল্প। প্রতিটি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি থাকবে। ওই কমিটি ঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নানা অনিয়মের চিত্র। ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সামসুল হকের ছেলে হিলু হোসেনের নামে বরাদ্দকৃত ঘর দেখতে গিয়ে জানা যায়, বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক হিলু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় কিভাবে হিলু ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, তার বড় ভাই ব্যবস্থা করেছে। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানায়, ৪০ হাজার টাকা ইউপি সদস্যকে দিয়ে আমি ঘর পেয়েছি। টাকা দেয়ার পরেও আমার ঘরের কাজে নিম্ন-মানের কাঠ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও নকশায় ৬টি জানালা থাকলেও অধিকাংশই ঘরেই দেয়া হয়েছে ৪টি জানালা। কোথাও কোথাও টিন কেটে জোড়া দিয়ে লাগানো হয়েছে বারান্দায়।

শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত্যু কালু মামুদের ছেলে তহিদুল ইসলাম জানান, আমার ঘরে নিম্নœমানের ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং আমি ঘরের কাজের জন্য ৬ ট্রলি কাজের বালু ৬ হজার টাকা কিনেছি। ১০ হাজার টাকা দিয়ে সংরক্ষিত ইউ’পি সদস্যের মাধ্যমে আমি ঘর পেয়েছি। ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিতেন্দ্র নাথ রায়ের আপন ভাই নিরঞ্জন রায়ের নামে দেয়া হয়েছে ঘর বরাদ্দ। ওই ওয়ার্ডে অনেক হতদরিদ্র থাকলেও ইউপি সদস্যের আপন ভাই ঘর পাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু শিমুলবাড়ী ইউনিয়নেই নয় একই চিত্র উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। নিম্ন-মানের সামগ্রী, বিত্তশালীদের মাঝে ঘর বরাদ্দ ও নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ময়নুল হক বলেন, ঘরের কাজে নিম্ন-মানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক নয়, তবে নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, সুবিধাভোগীদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী ঘরের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা’র সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

গৃহহীনদের ৪৪ ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

প্রতিনিধি, জলঢাকা (নীলফামারী)

image

জলঢাকা (নীলফামারী) : ৬টির পরিবর্তে ৪ জানালায় নির্মাণ করা ঘর -সংবাদ

২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ৪৪টি ঘর নির্মাণে নীলফামারীর জলঢাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর এসব ঘর নির্মাণে নিম্ন-মানের সামগ্রী, নকশা পরিবর্তন ও বিত্তশালীদের মাঝে ঘর বরাদ্দের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জলঢাকা উপজেলায় ৪৪ হতদরিদ্র পরিবারকে গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ঘর নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি নির্দিষ্ট সময়ে। দুইকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি ঘর হবে ২০ ফুট লম্বা ও প্রস্থ ৮ ফুট। চারপাশে হবে ইটের দেয়াল, ওপরে টিনের ছাউনি। ছাউনিতে মেহগনি অথবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করতে হবে। গৃহের মেঝেতে তিন ইঞ্চি ঢালাই হবে। রান্নাঘর ও টয়লেট হবে ১৩ ফুট। ইট হবে এক নম্বর, ছাউনির টিন হবে পয়েন্ট ৪৬ মিলিমিটার পুরত্বের রঙিন ঢেউটিন। ঘর ও রান্নাঘরের মাঝখানে সাত ফুট করিডোর থাকবে। যার ওপরে থাকবে টিনের ছাউনি। ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫শ’ ৩১ টাকা করে ৪৪টি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩শ’৬৪ টাকা। এই গৃহনির্মাণ প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। আর প্রতিটি ঘরই একটি প্রকল্প। প্রতিটি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি থাকবে। ওই কমিটি ঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নানা অনিয়মের চিত্র। ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সামসুল হকের ছেলে হিলু হোসেনের নামে বরাদ্দকৃত ঘর দেখতে গিয়ে জানা যায়, বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক হিলু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় কিভাবে হিলু ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, তার বড় ভাই ব্যবস্থা করেছে। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানায়, ৪০ হাজার টাকা ইউপি সদস্যকে দিয়ে আমি ঘর পেয়েছি। টাকা দেয়ার পরেও আমার ঘরের কাজে নিম্ন-মানের কাঠ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও নকশায় ৬টি জানালা থাকলেও অধিকাংশই ঘরেই দেয়া হয়েছে ৪টি জানালা। কোথাও কোথাও টিন কেটে জোড়া দিয়ে লাগানো হয়েছে বারান্দায়।

শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত্যু কালু মামুদের ছেলে তহিদুল ইসলাম জানান, আমার ঘরে নিম্নœমানের ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং আমি ঘরের কাজের জন্য ৬ ট্রলি কাজের বালু ৬ হজার টাকা কিনেছি। ১০ হাজার টাকা দিয়ে সংরক্ষিত ইউ’পি সদস্যের মাধ্যমে আমি ঘর পেয়েছি। ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিতেন্দ্র নাথ রায়ের আপন ভাই নিরঞ্জন রায়ের নামে দেয়া হয়েছে ঘর বরাদ্দ। ওই ওয়ার্ডে অনেক হতদরিদ্র থাকলেও ইউপি সদস্যের আপন ভাই ঘর পাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু শিমুলবাড়ী ইউনিয়নেই নয় একই চিত্র উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। নিম্ন-মানের সামগ্রী, বিত্তশালীদের মাঝে ঘর বরাদ্দ ও নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ময়নুল হক বলেন, ঘরের কাজে নিম্ন-মানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক নয়, তবে নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, সুবিধাভোগীদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী ঘরের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা’র সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।