বাংলাদেশের বিশ্বজয়

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরবজনক কৃতিত্ব অর্জন করে যুব টাইগাররা। বাংলাদেশের তরুণরা এক পর্যায়ে চাপের মধ্যে পড়ে গিয়েও দৃঢ়তা দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় ভারতীয়দের কাছ থেকে। জেতার জন্য যে দৃঢ়প্রত্যয় এবং চেষ্টা করেছে তা ছিল অকল্পনীয়। তারা জেতার জন্য কতটা মরিয়া ছিল তা দেখিয়েছেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমন। পেশির আঘাতের কারণে একবার মাঠ ছেড়েও আবার দলের প্রয়োজনে মাঠে নামেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি দলের রান বাড়িয়ে নেন। এটা কেবল দেশপ্রেম এবং প্রত্যয় থাকলেই সম্ভব। আর অধিনায়ক আকবর আলী দেখিয়েছেন কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়। এ তরুণ যেভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা ছিল বিস্ময়কর। রকিবুল হাসানের ব্যাট থেকে জয়সূচক রান আসার সঙ্গে সঙ্গেই জয়োল্লাসে মাতে বাংলাদেশিরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা যোগ দেন এ আনন্দে। ক্রিকেটের মাঠে এমন আনন্দ করার উপলক্ষ খুব বেশি আসে না বাংলাদেশিদের সামনে। সে সুযোগ এনে দিয়েছেন যুবারা। তাই আনন্দে মাতোয়ারা পুরো বাংলাদেশ।

ভারতকে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট করে দেয়ার পর জয়ের যে স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশের তরুণরা সেটি ব্যর্থ হতে চলেছিল নিজেদের দোষেই। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান করার পর প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। রবি বিষ্ণুর বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তানজিদ হাসান। এরপরই খেই হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। বিষ্ণুর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে খেই হারায় আকবর আলীর সহখেলোয়াড়রা। লক্ষ্য যেখানে হাতের নাগালে, দেখেশুনে খেললেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেখানে তাড়াহুড়া করে একে একে আউট হয় ছয় ব্যাটসম্যান। বিনা উইকেটে ৫০ রানের বাংলাদেশ পরিণত হয় ৪ উইকেটে ৬৫ রানের দলে। এরপর শামিম ও অভিষেককে নিয়ে চেষ্টা করেন অধিনায়ক আকবর আলী। কিন্তু তাতেও ফল হয়নি। শামিম ও অভিষেক অপ্রয়োজনীয় শট খেলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন। ১০২ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর পেশির আঘাতের কারণে মাঠ ছাড়া ইমন আবার মাঠে নামেন। অধিনায়ক আকবর আলী এবং ইমনের সামনে আসে নিজেদের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়ার সুযোগ। এ দু’জন মাঝে মাঝে চার মেরে আশার সঞ্চার করেন। জয়ের জন্য ২২ ওভারে প্রয়োজন হয় ৫০ রানের। ওভারপ্রতি ২ রানের সামান্য একটু বেশি। এ দু’জন বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। পারভেজ হাসান ইমন পেশির টান নিয়েও দেশের জন্য ব্যাটিং করেছেন। ব্যথায় নাক মুখ কুঁচকে রেখেও রান নিয়েছেন দৌড়িয়ে। তাদের এমন ব্যাটিং আবার আশা জাগিয়ে তোলে টাইগার যুবাদের।

স্কোর : ভারত ১৭৭ (৪৭.২)

ডি/এল ম্যাথড : জয়ের টার্গেট ১৭০

বাংলাদেশ ১৭০/৭ (৪২.১)

ফল : বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জয়ী

এমন সময়ই সেই ভুলটি করে বসেন ইমন। জইসওয়ালের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমন। তিনি ৪৭ রান করেন ৭৯ বলে সাতটি চারের সাহায্যে। ইমন যখন আউট হন তখনও দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৫ রানের। শেষ তিন উইকেটে এ রান তোলা অসম্ভব না হলেও ছিল বেশ কঠিন। এ কঠিন কাজটি করা সম্ভব ছিল কেবল অধিনায়কের পক্ষেই। ইমন আউট হওয়ার পরের তিন ওভার টানা মেডেন পায় ভারত। দুই ব্যাটসম্যান সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করার কারণেই তা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় রান রেট অনেক কম থাকায় ব্যাটসম্যানদের সুযোগ ছিল দেখেশুনে খেলার। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন অধিনায়ক আকবর। ধীরে ধীরে তিনি ও রকিবুল বাংলাদেশের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন এবং কমতে থাকে প্রয়োজনীয় রান। ৪১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করার পর বৃষ্টি নামলে খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় পর্যন্ত ডার্কওয়ার্থ ও লুইস মেথডে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। আর খেলা না হলে চ্যাম্পিয়ন হতো টাইগাররাই। পুনরায় যখন খেলা শুরু হয় তখন বাংলাদেশের জয়ের জন্য টার্গেট ঠিক হয় ৪৬ ওভারে ১৭০ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য তখন দরকার ৩০ বলে মাত্র ৭ রানের। আকবর ও রকিব আর কোন বিপদ ঘটতে না দিয়ে ২৩ বল বাকি থাকতেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন এবং বাংলাদেশ পৌঁছে যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। উৎসবে মাতে যুবারা। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায় আকরব আলী এবং তার সহখেলোয়াড়রা।

এর আগে টসে জিতে বোলিং করতে নেমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকার পারফরমেন্স করে বাংলাদেশের তরুণরা। দলীয় ৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে ভারতের। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জইসওয়াল এবং তিলক ভার্মা মিলে দলের রান নিয়ে যান ১০৩ এ। তখন পর্যন্ত ভারতীয় যুবারা বেশ বড় স্কোরের স্বপ্নই দেখছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণরা তা হতে দেননি। ভার্মাকে ৩৮ রানে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেন তানজিব হাসান সাকিব। এরপরে আর ভারতীয়রা বড় কোন পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারেনি। যদিও তাদের ওপেনার জইসওয়াল ৮৮ রানের দুরন্ত এক ইনিংস উপহার দেন। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ায় ব্যস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত তারা ৪৭ ওভার ২ বল খেলে ১৭৭ অলআউট হয়। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে অভিষেক দাস ৪০ রান দিয়ে তিন উইকেট দখল করেন। এছাড়া সাকিব ও শরিফুল দুটি করে এবং রকিবুল একটি উইকেট লাভ করেন।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বাংলাদেশের বিশ্বজয়

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক |

image

অধিনায়ক আকবর আলীর অসাধারণ ইনিংসের একটি মুহূর্ত

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরবজনক কৃতিত্ব অর্জন করে যুব টাইগাররা। বাংলাদেশের তরুণরা এক পর্যায়ে চাপের মধ্যে পড়ে গিয়েও দৃঢ়তা দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় ভারতীয়দের কাছ থেকে। জেতার জন্য যে দৃঢ়প্রত্যয় এবং চেষ্টা করেছে তা ছিল অকল্পনীয়। তারা জেতার জন্য কতটা মরিয়া ছিল তা দেখিয়েছেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমন। পেশির আঘাতের কারণে একবার মাঠ ছেড়েও আবার দলের প্রয়োজনে মাঠে নামেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি দলের রান বাড়িয়ে নেন। এটা কেবল দেশপ্রেম এবং প্রত্যয় থাকলেই সম্ভব। আর অধিনায়ক আকবর আলী দেখিয়েছেন কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়। এ তরুণ যেভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা ছিল বিস্ময়কর। রকিবুল হাসানের ব্যাট থেকে জয়সূচক রান আসার সঙ্গে সঙ্গেই জয়োল্লাসে মাতে বাংলাদেশিরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা যোগ দেন এ আনন্দে। ক্রিকেটের মাঠে এমন আনন্দ করার উপলক্ষ খুব বেশি আসে না বাংলাদেশিদের সামনে। সে সুযোগ এনে দিয়েছেন যুবারা। তাই আনন্দে মাতোয়ারা পুরো বাংলাদেশ।

ভারতকে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট করে দেয়ার পর জয়ের যে স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশের তরুণরা সেটি ব্যর্থ হতে চলেছিল নিজেদের দোষেই। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান করার পর প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। রবি বিষ্ণুর বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তানজিদ হাসান। এরপরই খেই হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। বিষ্ণুর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে খেই হারায় আকবর আলীর সহখেলোয়াড়রা। লক্ষ্য যেখানে হাতের নাগালে, দেখেশুনে খেললেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেখানে তাড়াহুড়া করে একে একে আউট হয় ছয় ব্যাটসম্যান। বিনা উইকেটে ৫০ রানের বাংলাদেশ পরিণত হয় ৪ উইকেটে ৬৫ রানের দলে। এরপর শামিম ও অভিষেককে নিয়ে চেষ্টা করেন অধিনায়ক আকবর আলী। কিন্তু তাতেও ফল হয়নি। শামিম ও অভিষেক অপ্রয়োজনীয় শট খেলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন। ১০২ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর পেশির আঘাতের কারণে মাঠ ছাড়া ইমন আবার মাঠে নামেন। অধিনায়ক আকবর আলী এবং ইমনের সামনে আসে নিজেদের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়ার সুযোগ। এ দু’জন মাঝে মাঝে চার মেরে আশার সঞ্চার করেন। জয়ের জন্য ২২ ওভারে প্রয়োজন হয় ৫০ রানের। ওভারপ্রতি ২ রানের সামান্য একটু বেশি। এ দু’জন বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। পারভেজ হাসান ইমন পেশির টান নিয়েও দেশের জন্য ব্যাটিং করেছেন। ব্যথায় নাক মুখ কুঁচকে রেখেও রান নিয়েছেন দৌড়িয়ে। তাদের এমন ব্যাটিং আবার আশা জাগিয়ে তোলে টাইগার যুবাদের।

স্কোর : ভারত ১৭৭ (৪৭.২)

ডি/এল ম্যাথড : জয়ের টার্গেট ১৭০

বাংলাদেশ ১৭০/৭ (৪২.১)

ফল : বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জয়ী

এমন সময়ই সেই ভুলটি করে বসেন ইমন। জইসওয়ালের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমন। তিনি ৪৭ রান করেন ৭৯ বলে সাতটি চারের সাহায্যে। ইমন যখন আউট হন তখনও দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৫ রানের। শেষ তিন উইকেটে এ রান তোলা অসম্ভব না হলেও ছিল বেশ কঠিন। এ কঠিন কাজটি করা সম্ভব ছিল কেবল অধিনায়কের পক্ষেই। ইমন আউট হওয়ার পরের তিন ওভার টানা মেডেন পায় ভারত। দুই ব্যাটসম্যান সতর্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করার কারণেই তা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় রান রেট অনেক কম থাকায় ব্যাটসম্যানদের সুযোগ ছিল দেখেশুনে খেলার। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন অধিনায়ক আকবর। ধীরে ধীরে তিনি ও রকিবুল বাংলাদেশের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন এবং কমতে থাকে প্রয়োজনীয় রান। ৪১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করার পর বৃষ্টি নামলে খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় পর্যন্ত ডার্কওয়ার্থ ও লুইস মেথডে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। আর খেলা না হলে চ্যাম্পিয়ন হতো টাইগাররাই। পুনরায় যখন খেলা শুরু হয় তখন বাংলাদেশের জয়ের জন্য টার্গেট ঠিক হয় ৪৬ ওভারে ১৭০ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য তখন দরকার ৩০ বলে মাত্র ৭ রানের। আকবর ও রকিব আর কোন বিপদ ঘটতে না দিয়ে ২৩ বল বাকি থাকতেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন এবং বাংলাদেশ পৌঁছে যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। উৎসবে মাতে যুবারা। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায় আকরব আলী এবং তার সহখেলোয়াড়রা।

এর আগে টসে জিতে বোলিং করতে নেমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকার পারফরমেন্স করে বাংলাদেশের তরুণরা। দলীয় ৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে ভারতের। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জইসওয়াল এবং তিলক ভার্মা মিলে দলের রান নিয়ে যান ১০৩ এ। তখন পর্যন্ত ভারতীয় যুবারা বেশ বড় স্কোরের স্বপ্নই দেখছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণরা তা হতে দেননি। ভার্মাকে ৩৮ রানে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেন তানজিব হাসান সাকিব। এরপরে আর ভারতীয়রা বড় কোন পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারেনি। যদিও তাদের ওপেনার জইসওয়াল ৮৮ রানের দুরন্ত এক ইনিংস উপহার দেন। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ায় ব্যস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত তারা ৪৭ ওভার ২ বল খেলে ১৭৭ অলআউট হয়। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে অভিষেক দাস ৪০ রান দিয়ে তিন উইকেট দখল করেন। এছাড়া সাকিব ও শরিফুল দুটি করে এবং রকিবুল একটি উইকেট লাভ করেন।