সাক্ষ্য চলাকালে আদালতে ধর্ষিতা কান্নায় ভেঙে পড়ে

সাক্ষীকেও অপহরণের চেষ্টা করে আসামিপক্ষ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে দলবেধে ধর্ষণ মামলায় ১২নং সাক্ষী আদালতে যখন বিশদ বর্ণনা দিচ্ছিল তখন আদালত কক্ষে বসে থাকা ৪ সন্তানের জননী ঝরঝর করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) শামছু উদ্দিন খালেদের আদালতে গতকাল মামলার ও চার্জশিটের অন্যতম সাক্ষী আবুল কালাম সাক্ষ্য দেন। এ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহমদ সোহেল খান জানায়, সাক্ষীতে আবুল কালাম আদালতকে জানান, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে মামলার বাদী ও ভিকটিমের স্বামী সিরাজ মিয়া তাকে মোবাইল ফোনে জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের লোকজন তার বাড়িতে হামলা করে তাকে ও তার ছেলেকে রশি দিয়ে এবং তার মেয়ে শাবনুরকে ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে ঘরের বাহিরে কাঁঠাল বাগানে নিয়ে নির্যাতন করেছে। পরদিন সকাল ৭টার দিকে ভিকটিমের বাড়ি আসলে ভিকটিম তাকে জানায়, রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার স্বামী ও ছেলে মেয়েকে ঘরে বেঁধে রেখে তাকে ঘর থেকে বের করে ঘরের পশ্চিম পাশে পুকুরের পূর্ব পাড়ে কাঁঠাল বাগানে নিয়ে সবাই পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরমধ্যে রুহুল আমিন, সোহেল, সালাউদ্দিন, জসিম, ছোট সোহেল, আবু, হেঞ্জু মাঝি, হানিফও ছিল। তারপর সে তার পরিচিত একজনকে ফোন করে মাইজদী থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে ভিকটিমকে (৩৮) রক্তাক্ত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।

আসামি পক্ষের আইনজীবির জেরার জবাবে সাক্ষী আবুল কালাম আদালতকে জানান, সে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ভিকটিমকে (৩৮) ক্ষতবিক্ষত দেখেছে। আদালতকে আরও জানায়, আসামিদের পক্ষের লোকজন তাকে সাক্ষী না দেয়ার জন্য হুমকি ধমকি দেয় এবং গত ১৫ মে ২০১৯ ইং হারিছ চৌধুরীর বাজার থেকে তাকে অপহরণের চেষ্টা ও করেছিল। এ ব্যাপারে সে চরজব্বার থানায় জিডি করেছিল (জিডির কপি আদালতে উপস্থাপন করেন)। আসামি রুহুল আমিনের আত্মীয় নুর নবী মাস্টার, বাবলু ও আমির হোসেন সাক্ষী দিলে তাকে গুম, খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এ সাক্ষী যখন আদালতে ধর্ষণের কাহিনী বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকা ভিকটিম (৩৮) কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মামলার বাদী সিরাজ মিয়া ও ভিকটিম (৩৮) এ প্রতিনিধিকে জানান, আসামিদের আত্মীয়স্বজনরা সাক্ষীদের এমনভাবে ভয় দেখায় সাক্ষীরা প্রকৃত সাক্ষী দিতে আদালতে আসতে চায় না। উল্লেখ্য যে, ৩০ ডিসেম্বর ১৮ইং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আ’লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে ও নেতৃত্বে দলবেধে ভিকটিমের বাড়িতে হামলা করে তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রথমে চরজব্বর থানা এ মামলা গ্রহণ করতে গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এরপর তদন্তে গাফিলতির কারণে তৎকালীন ওসি নিজাম উদ্দিনকে ক্লোজড করা হয় এবং মামলা থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে হস্তান্তর করার পর ডিবি মামলার চার্জশিট দেন। আদালতে এ পর্যন্ত বাদী, ভিকটিমসহ ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নাসিনি আদালত-২ এর পিপি মর্তুজা আহমেদ, এপিপি সালেহ আহমদ সোহেল খাঁন, বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন এবং আসামি পক্ষে হারুনুর রসিদ হাওলাদার, আবুল হোসেন রাজু ও আবুল হোসেন সাক্ষীদের জেরা করেন।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সুবর্ণচরে ভোটের রাতে গণধর্ষণ

সাক্ষ্য চলাকালে আদালতে ধর্ষিতা কান্নায় ভেঙে পড়ে

সাক্ষীকেও অপহরণের চেষ্টা করে আসামিপক্ষ

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে দলবেধে ধর্ষণ মামলায় ১২নং সাক্ষী আদালতে যখন বিশদ বর্ণনা দিচ্ছিল তখন আদালত কক্ষে বসে থাকা ৪ সন্তানের জননী ঝরঝর করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) শামছু উদ্দিন খালেদের আদালতে গতকাল মামলার ও চার্জশিটের অন্যতম সাক্ষী আবুল কালাম সাক্ষ্য দেন। এ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহমদ সোহেল খান জানায়, সাক্ষীতে আবুল কালাম আদালতকে জানান, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে মামলার বাদী ও ভিকটিমের স্বামী সিরাজ মিয়া তাকে মোবাইল ফোনে জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের লোকজন তার বাড়িতে হামলা করে তাকে ও তার ছেলেকে রশি দিয়ে এবং তার মেয়ে শাবনুরকে ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে ঘরের বাহিরে কাঁঠাল বাগানে নিয়ে নির্যাতন করেছে। পরদিন সকাল ৭টার দিকে ভিকটিমের বাড়ি আসলে ভিকটিম তাকে জানায়, রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার স্বামী ও ছেলে মেয়েকে ঘরে বেঁধে রেখে তাকে ঘর থেকে বের করে ঘরের পশ্চিম পাশে পুকুরের পূর্ব পাড়ে কাঁঠাল বাগানে নিয়ে সবাই পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরমধ্যে রুহুল আমিন, সোহেল, সালাউদ্দিন, জসিম, ছোট সোহেল, আবু, হেঞ্জু মাঝি, হানিফও ছিল। তারপর সে তার পরিচিত একজনকে ফোন করে মাইজদী থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে ভিকটিমকে (৩৮) রক্তাক্ত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।

আসামি পক্ষের আইনজীবির জেরার জবাবে সাক্ষী আবুল কালাম আদালতকে জানান, সে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ভিকটিমকে (৩৮) ক্ষতবিক্ষত দেখেছে। আদালতকে আরও জানায়, আসামিদের পক্ষের লোকজন তাকে সাক্ষী না দেয়ার জন্য হুমকি ধমকি দেয় এবং গত ১৫ মে ২০১৯ ইং হারিছ চৌধুরীর বাজার থেকে তাকে অপহরণের চেষ্টা ও করেছিল। এ ব্যাপারে সে চরজব্বার থানায় জিডি করেছিল (জিডির কপি আদালতে উপস্থাপন করেন)। আসামি রুহুল আমিনের আত্মীয় নুর নবী মাস্টার, বাবলু ও আমির হোসেন সাক্ষী দিলে তাকে গুম, খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এ সাক্ষী যখন আদালতে ধর্ষণের কাহিনী বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকা ভিকটিম (৩৮) কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মামলার বাদী সিরাজ মিয়া ও ভিকটিম (৩৮) এ প্রতিনিধিকে জানান, আসামিদের আত্মীয়স্বজনরা সাক্ষীদের এমনভাবে ভয় দেখায় সাক্ষীরা প্রকৃত সাক্ষী দিতে আদালতে আসতে চায় না। উল্লেখ্য যে, ৩০ ডিসেম্বর ১৮ইং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আ’লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে ও নেতৃত্বে দলবেধে ভিকটিমের বাড়িতে হামলা করে তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রথমে চরজব্বর থানা এ মামলা গ্রহণ করতে গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এরপর তদন্তে গাফিলতির কারণে তৎকালীন ওসি নিজাম উদ্দিনকে ক্লোজড করা হয় এবং মামলা থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে হস্তান্তর করার পর ডিবি মামলার চার্জশিট দেন। আদালতে এ পর্যন্ত বাদী, ভিকটিমসহ ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নাসিনি আদালত-২ এর পিপি মর্তুজা আহমেদ, এপিপি সালেহ আহমদ সোহেল খাঁন, বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন এবং আসামি পক্ষে হারুনুর রসিদ হাওলাদার, আবুল হোসেন রাজু ও আবুল হোসেন সাক্ষীদের জেরা করেন।