বাংলাদেশে আতঙ্ক বেশি সতর্কতা কম

মীর আব্দুল আলীম

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও তটস্থ করোনা আতঙ্কে। যতদিন গড়াচ্ছে, করোনাভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্ত হচ্ছে গোটা দুনিয়া। এরই মধ্যে চীন থেকে ‘করোনাভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সবখানে আতঙ্ক। বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি; সতর্কতা কম। রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। এখনও বাংলাদেশে চীনা নাগরিক এবং প্রবাসীরা প্রবেশ করছে। করছে বহু চীনা নাগরিক দেশে বসবাস। তাদের ব্যাপারে সতর্কতা কম, বাধা-নিষেধ কম। আমাদের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দরগুলো এখনও রক্ষিত বলা যাবে না। কারা আসছে? কোথা থেকে আসছে? ট্রানজিট হয়ে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসছে কিনা তা নিয়ে সতর্কতা নেই, কোন হিসাব নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে (১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের হুগলীতে সাহিত্যসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে দেশে ফিরছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরে আমরা বেশ সতর্কতা লক্ষ্য করলেও, ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে সতর্কতা তেমন একটা চোখে পড়েনি আমাদের। কলকাতা থেকে ট্রানজিট হয়ে চীন থেকে আসা প্রবাসীরা সহজেই বিনা বাধায়, বিনা স্ক্যানিংয়ে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। এমনটা হচ্ছে বিভিন্ন বন্দরে। বিষয়টা গা ছাড়াই মনে হলো। এমনটা হলে বাংলাদেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। করোনাভাইরাস এ দেশে ঢুকে পড়লে দ্রুত মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। কারণ আমরা সচেতন নই। এখনও আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের ১৫ কোটি মানুষই এ ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা রাখে না। অধিকাংশই শুনছে এ ভাইরাসে মানুষ মারা যায়। সতর্কতার বিষয়ে জানে কম। এদেশে এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক আছে বেশ, সতর্কতা নেই। এটা ভয়নক বিষয়।

আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের বিশেষ মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা যাতে সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমাদের মতো জনবহুল দেশে এ ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ ভাইরাস যেহেতু আক্রান্তের হাঁচি-কাশি-সর্দির মাধ্যমে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে, সে কারণে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন, সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, সর্দি-কাশি হলে মাস্ক পরিধান করা, হাঁচি-কাশি হলে মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দেয়া এবং সে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে পোলট্রিসহ, পশুপাখি হতে দূরে থাকতে হবে। কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ ডিম বা মাংস না খাওয়া এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলাচল করতে হবে। এমন সতর্কতা কমই অবলম্বন করছি আমরা। এ ভাইরাস এদেশে প্রবেশ করতে পারলে শুধু মানুষই মরবে না, দেশের অর্থনীতির চাকা একেবারে অচল হয়ে পড়বে।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। করোনাভাইরাসে চীনে এ পর্যাপ্ত কমপক্ষে সাড়ে ৩ শতাধিক লোক মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে ৯৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক দেশ যোগাযোগ ছিন্ন করেছে দেশটির সঙ্গে। চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ায়, করোনাভাইরাস নিয়ে চীন যুদ্ধকালীন তৎপরতা চালাচ্ছে। সর্বশেষ কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ ৪২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আরও অনেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু মানুষের জীবন নয়, এখন চীনের অর্থনীতির জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস।

এদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এভাইরাস আর মানুষের মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি আর কূটচাল চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চীনের অভিযোগ, ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই দেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনে ব্যবসা পরিচালনা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংকটে চীনের আর্থিক ক্ষতি ৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের অর্থনীতিতে আরও ২ হাজার ২শ’ কোটি ডলার যোগ করতে যাচ্ছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে বৈকি! সারা দুনিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চীনে। আতঙ্ক বিশ^জুড়ে। চীনে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে উহানসহ বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অনেকের বাসায় খাবার পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। কোন কোন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি স্বজনদের অবহিত করেছেন। বাংলাদেশেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে হাজার হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশের হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নিতে চীনে অবস্থান করছেন। এই দুই দেশের বাসিন্দাদের আশা-যাওয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত চীনা নাগরিক কিংবা প্রবাসীরা বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়াও চীনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক যারা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসছেন তাদের মাধ্যমেও এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটাতে পারে। আমাদের আরও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। সতর্ক আর সচেতন হলে আমারা এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারব। এছাড়া এ ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে। আমাদের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে সতর্কতা জারি করতে হবে। যাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজন নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার যাতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। বিমানবন্দর, নৌবন্দরে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দেশি প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে চীনা নাগরিকরা কর্মরত আছেন, তাদের দেশ ত্যাগ না করা এবং যারা ইতিমধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু প্রকল্প, দক্ষিণাঞ্চলের কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর চীনা প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বিশেষ সচেতনতা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পদ্মাসেতু প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের বাংলাদেশ ত্যাগ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই মুহূর্তে চীনে অবস্থানকারী চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকদেরও দেশে না আসার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করলেই ভালো। তা না হলে আমাদের কপালে দুর্গতি আছে এটা ভাবতে হবে সবাইকে।

করোনাভাইরাস নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা আছে। কোথা থেকে কিভাবে ছড়াল এ প্রাণঘাতী ভাইরাস। কোন কোন সংস্থ্যঅ বলছে চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। দেশটির গোপন জৈব অস্ত্র প্রল্পের কাজ চলছিল ওই গবেষণাগারে। ইসরায়েলের এক জৈব অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এ দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন টাইমস। আবার বলা হচ্ছে প্রাণী খ্যাদ্য থেকে করোনা ছড়িয়েছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সন্দেহ করেছে, রহস্যময় ‘নোভেল করোনাভাইরাসের’ চাষ করেছে চীনের গোপন সামরিক গবেষণাগার। মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এই দাবিকেই সমর্থন করেছে। ইসরায়েলের জীবাণু অস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এ ভাইরাসের জন্মদাতা ইউহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ ল্যাবরেটরি। কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এ গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আসলে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের উপর গবেষণা করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। ইসরায়েলের সেনা গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের দুটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ, ছাঁটাই প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করছে চীন। চলছে জীবাণু অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়েও গবেষণা। এরই অঙ্গ হিসেবে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষণাগার। কোনও কোনও থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নাশকতা বা অন্তর্ঘাত করেই চীনের কোনও বিজ্ঞানী বা গুপ্তচর এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়েছে, এ আরএনএ ভাইরাসকে চীন তৈরি করেছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই।

ইসরায়েলের দাবি, বিশ্বের সব দেশকে জব্দ করতে, চাপে রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী জীবাণু অস্ত্র বানাচ্ছে চীন। এজন্যই জিনগত অভিযোজন ঘটিয়ে করোনাভাইরাসের মতো অনেক ভাইরাস তৈরি করছেন চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষকরা। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ও ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি ভিত্তিহীন জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কোন টিকা, ওষুধ বা ইনজেকশন কাজ না করায় সন্দেহের তীর রয়েছে চীনা গবেষণাগারের উপরেই। এসব কথা সত্য হলে তা হবে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

যেভাবেই ছড়াক এ ভাইরাস এখন আমাদের সতর্ক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মনে রাখতে হবে, রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। চীন থেকে ‘করোনাভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাসে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটলে এ পর্যন্ত চীনে এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারশ’ জন মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাস যেন কোনভাবেই বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে আগাম ব্যবস্থা নেয়া সমীচীন। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। পরামর্শ পর্যন্তই যেন তা সীমাবদ্ধ না থাকে। করোনা ঝুঁকি এড়াতে অধিক সতর্কতা জরুরি এখন। কারণ বাংলাদেশ এখন বিশ্ব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই বাংলাদেশে পর্যটক বা ব্যবসায়ীদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। ফলে এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা প্রবল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব মহল করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে এটি আমাদের আশা এবং স্বস্তির বিষয়। তবে শুধু সরকারের পদক্ষেপের ওপর ভরসা করে থাকলেই চলবে না, জনগণকেও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যেমন- ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা, বেশি লোক সমাগম হয় অর্থাৎ সভা-সমাবেশস্থলে উপস্থিত না থাকা, হাত ও ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া- এগুলো মেনে চলতে হবে। ইতোমধ্যে আগাম সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রবেশপথে করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম যেন কার্যকরী থাকে সেদিকে নজরদারি দিতে হবে।

২০০২-০৩ সালে চীন হংকংসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০-র কাছাকাছি। করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস আগের সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্তের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ক্রমেই মহামারীর আকার নিচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হতে বাদ নেই ইউরোপ, আমেরিকাও। বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। বাংলাদেশের মানুষ আরও আতঙ্কে আছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যতটা সতর্ক রয়েছে তার থেকেও অধিক সতর্কতা প্রয়োজন। ভৌগোলিক অবস্থান এবং চীন থেকে আসা যাত্রীদের কারণে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আসার ঝুঁকি রয়েছে। করোনাভাইরাস যেভাবে দ্রুত গতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে তা বিবেচনায় রেখে আরও সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস যাতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এর সুফল না পাওয়া এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সেখানে আটকা পড়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্য প্রচার করছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বাংলাদেশে আতঙ্ক বেশি সতর্কতা কম

মীর আব্দুল আলীম

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও তটস্থ করোনা আতঙ্কে। যতদিন গড়াচ্ছে, করোনাভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্ত হচ্ছে গোটা দুনিয়া। এরই মধ্যে চীন থেকে ‘করোনাভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সবখানে আতঙ্ক। বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি; সতর্কতা কম। রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। এখনও বাংলাদেশে চীনা নাগরিক এবং প্রবাসীরা প্রবেশ করছে। করছে বহু চীনা নাগরিক দেশে বসবাস। তাদের ব্যাপারে সতর্কতা কম, বাধা-নিষেধ কম। আমাদের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দরগুলো এখনও রক্ষিত বলা যাবে না। কারা আসছে? কোথা থেকে আসছে? ট্রানজিট হয়ে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসছে কিনা তা নিয়ে সতর্কতা নেই, কোন হিসাব নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে (১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের হুগলীতে সাহিত্যসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে দেশে ফিরছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরে আমরা বেশ সতর্কতা লক্ষ্য করলেও, ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে সতর্কতা তেমন একটা চোখে পড়েনি আমাদের। কলকাতা থেকে ট্রানজিট হয়ে চীন থেকে আসা প্রবাসীরা সহজেই বিনা বাধায়, বিনা স্ক্যানিংয়ে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। এমনটা হচ্ছে বিভিন্ন বন্দরে। বিষয়টা গা ছাড়াই মনে হলো। এমনটা হলে বাংলাদেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। করোনাভাইরাস এ দেশে ঢুকে পড়লে দ্রুত মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। কারণ আমরা সচেতন নই। এখনও আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের ১৫ কোটি মানুষই এ ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা রাখে না। অধিকাংশই শুনছে এ ভাইরাসে মানুষ মারা যায়। সতর্কতার বিষয়ে জানে কম। এদেশে এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক আছে বেশ, সতর্কতা নেই। এটা ভয়নক বিষয়।

আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের বিশেষ মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা যাতে সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমাদের মতো জনবহুল দেশে এ ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ ভাইরাস যেহেতু আক্রান্তের হাঁচি-কাশি-সর্দির মাধ্যমে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে, সে কারণে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন, সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, সর্দি-কাশি হলে মাস্ক পরিধান করা, হাঁচি-কাশি হলে মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দেয়া এবং সে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে পোলট্রিসহ, পশুপাখি হতে দূরে থাকতে হবে। কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ ডিম বা মাংস না খাওয়া এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলাচল করতে হবে। এমন সতর্কতা কমই অবলম্বন করছি আমরা। এ ভাইরাস এদেশে প্রবেশ করতে পারলে শুধু মানুষই মরবে না, দেশের অর্থনীতির চাকা একেবারে অচল হয়ে পড়বে।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। করোনাভাইরাসে চীনে এ পর্যাপ্ত কমপক্ষে সাড়ে ৩ শতাধিক লোক মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে ৯৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক দেশ যোগাযোগ ছিন্ন করেছে দেশটির সঙ্গে। চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ায়, করোনাভাইরাস নিয়ে চীন যুদ্ধকালীন তৎপরতা চালাচ্ছে। সর্বশেষ কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ ৪২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আরও অনেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু মানুষের জীবন নয়, এখন চীনের অর্থনীতির জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস।

এদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এভাইরাস আর মানুষের মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি আর কূটচাল চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চীনের অভিযোগ, ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই দেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনে ব্যবসা পরিচালনা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংকটে চীনের আর্থিক ক্ষতি ৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের অর্থনীতিতে আরও ২ হাজার ২শ’ কোটি ডলার যোগ করতে যাচ্ছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে বৈকি! সারা দুনিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চীনে। আতঙ্ক বিশ^জুড়ে। চীনে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে উহানসহ বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অনেকের বাসায় খাবার পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। কোন কোন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি স্বজনদের অবহিত করেছেন। বাংলাদেশেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে হাজার হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশের হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নিতে চীনে অবস্থান করছেন। এই দুই দেশের বাসিন্দাদের আশা-যাওয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত চীনা নাগরিক কিংবা প্রবাসীরা বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়াও চীনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক যারা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসছেন তাদের মাধ্যমেও এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটাতে পারে। আমাদের আরও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। সতর্ক আর সচেতন হলে আমারা এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারব। এছাড়া এ ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে। আমাদের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে সতর্কতা জারি করতে হবে। যাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজন নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার যাতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। বিমানবন্দর, নৌবন্দরে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দেশি প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে চীনা নাগরিকরা কর্মরত আছেন, তাদের দেশ ত্যাগ না করা এবং যারা ইতিমধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু প্রকল্প, দক্ষিণাঞ্চলের কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর চীনা প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বিশেষ সচেতনতা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পদ্মাসেতু প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের বাংলাদেশ ত্যাগ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই মুহূর্তে চীনে অবস্থানকারী চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকদেরও দেশে না আসার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করলেই ভালো। তা না হলে আমাদের কপালে দুর্গতি আছে এটা ভাবতে হবে সবাইকে।

করোনাভাইরাস নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা আছে। কোথা থেকে কিভাবে ছড়াল এ প্রাণঘাতী ভাইরাস। কোন কোন সংস্থ্যঅ বলছে চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। দেশটির গোপন জৈব অস্ত্র প্রল্পের কাজ চলছিল ওই গবেষণাগারে। ইসরায়েলের এক জৈব অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এ দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন টাইমস। আবার বলা হচ্ছে প্রাণী খ্যাদ্য থেকে করোনা ছড়িয়েছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সন্দেহ করেছে, রহস্যময় ‘নোভেল করোনাভাইরাসের’ চাষ করেছে চীনের গোপন সামরিক গবেষণাগার। মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এই দাবিকেই সমর্থন করেছে। ইসরায়েলের জীবাণু অস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এ ভাইরাসের জন্মদাতা ইউহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ ল্যাবরেটরি। কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এ গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আসলে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের উপর গবেষণা করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। ইসরায়েলের সেনা গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের দুটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ, ছাঁটাই প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করছে চীন। চলছে জীবাণু অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়েও গবেষণা। এরই অঙ্গ হিসেবে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষণাগার। কোনও কোনও থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নাশকতা বা অন্তর্ঘাত করেই চীনের কোনও বিজ্ঞানী বা গুপ্তচর এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়েছে, এ আরএনএ ভাইরাসকে চীন তৈরি করেছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই।

ইসরায়েলের দাবি, বিশ্বের সব দেশকে জব্দ করতে, চাপে রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী জীবাণু অস্ত্র বানাচ্ছে চীন। এজন্যই জিনগত অভিযোজন ঘটিয়ে করোনাভাইরাসের মতো অনেক ভাইরাস তৈরি করছেন চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষকরা। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ও ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি ভিত্তিহীন জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কোন টিকা, ওষুধ বা ইনজেকশন কাজ না করায় সন্দেহের তীর রয়েছে চীনা গবেষণাগারের উপরেই। এসব কথা সত্য হলে তা হবে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

যেভাবেই ছড়াক এ ভাইরাস এখন আমাদের সতর্ক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মনে রাখতে হবে, রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। চীন থেকে ‘করোনাভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাসে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটলে এ পর্যন্ত চীনে এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারশ’ জন মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাস যেন কোনভাবেই বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে আগাম ব্যবস্থা নেয়া সমীচীন। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। পরামর্শ পর্যন্তই যেন তা সীমাবদ্ধ না থাকে। করোনা ঝুঁকি এড়াতে অধিক সতর্কতা জরুরি এখন। কারণ বাংলাদেশ এখন বিশ্ব আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই বাংলাদেশে পর্যটক বা ব্যবসায়ীদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। ফলে এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা প্রবল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব মহল করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে এটি আমাদের আশা এবং স্বস্তির বিষয়। তবে শুধু সরকারের পদক্ষেপের ওপর ভরসা করে থাকলেই চলবে না, জনগণকেও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যেমন- ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা, বেশি লোক সমাগম হয় অর্থাৎ সভা-সমাবেশস্থলে উপস্থিত না থাকা, হাত ও ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া- এগুলো মেনে চলতে হবে। ইতোমধ্যে আগাম সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রবেশপথে করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম যেন কার্যকরী থাকে সেদিকে নজরদারি দিতে হবে।

২০০২-০৩ সালে চীন হংকংসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০-র কাছাকাছি। করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস আগের সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্তের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ক্রমেই মহামারীর আকার নিচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হতে বাদ নেই ইউরোপ, আমেরিকাও। বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। বাংলাদেশের মানুষ আরও আতঙ্কে আছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যতটা সতর্ক রয়েছে তার থেকেও অধিক সতর্কতা প্রয়োজন। ভৌগোলিক অবস্থান এবং চীন থেকে আসা যাত্রীদের কারণে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আসার ঝুঁকি রয়েছে। করোনাভাইরাস যেভাবে দ্রুত গতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে তা বিবেচনায় রেখে আরও সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস যাতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এর সুফল না পাওয়া এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সেখানে আটকা পড়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্য প্রচার করছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।