চীনে করোনাভাইরাস : বিকল্প বাজারে নজর সরকারের

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, চীনে করোনাভাইরাস সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প বাজারে নজর রেখেছে সরকার। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ-কানাডা বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। বাংলাদেশে সফররত কানাডার সাচকাচোয়ান প্রদেশের কৃষিমন্ত্রী এইচ ই ডাভিড মারিটের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ পিয়াজ আমদানি হয়, এতে চায়না থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ হলেও সমস্যা হবে না। আদা-রসুনসহ অন্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়নার বিকল্প বাজারে নজর রাখছে সরকার।’

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাণিজ্যে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনই বলার সময় হয়নি কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। আমাদের অনেক আইটেম আছে যেগুলো চায়নার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে রেডিমেট গার্মেন্টসের অধিকাংশ ফেব্রিকস চায়না থেকে আসে, এটার ওপর প্রভাব পড়ছে কী না দেখতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। কারণ এখন চীনে শুধু একটি প্রদেশেই সমস্যা হচ্ছে। তারপর এখন ওদের বার্ষিক ছুটিও চলছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষতির বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছে জানতে চেয়েছি। তারা এ বিষয়ে জানাতে দু-তিন দিন সময় চেয়েছে। আশা করছি আজকের মধ্যে তারা হয়তো একটা আইডিয়া দিতে পারবেন, সত্যিকারার্থে কোন ক্ষতি হবে কী না।’ চায়না থেকে পিয়াজ আমদানি করতে না পারলে সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পিয়াজ আসছে মায়ানমার, টার্কি, মিসর ও পাকিস্তান থেকে। চায়নার জন্য পিয়াজের বাজারে প্রভাব পড়বে না। তবে রসুন-আদাসহ অন্য মসলার সমস্যা হবে কী না সেটি দেখছি। সমস্যা হলে আমাদের বিকল্প মার্কেটে যেতে হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি যে, কী ধরনের সমস্যা আসতে পারে।

এফবিসিসিআইকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল তারা কোন প্রতিবেদন দিয়েছে কি না? জবাবে টিপু মুনশি বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করে সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর শুক্র, শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় তারা হয়তো দেরি করছে। গার্মেন্টস সেক্টরের যারা ব্যবসায়ী তারা জানেন যে, এ সময়টায় তাদের কোন আমদানি হবে না। কারণ এ সময় চায়নায় ছুটি থাকে। তাদের কোন ইমপোর্ট হবে না। ১৩ তারিখ সেখানকার ছুটি শেষ হলে বোঝা যাবে প্রভাব পড়বে কি না।

রসুনের দাম ১২০ থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সিরিয়াসলি নজর রাখছি। পিয়াজেও সুযোগ নিয়েছিল, এখনও ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। সমস্যা একটু হলেই তারা সুযোগ নেয়। আজও আমরা এ বিষয়টি নিয়ে নিজেরা বসে করণীয় ঠিক করতে চাই। আদা-রসুন নিয়ে কী করা যায়, সেটা আজ আলোচনা করব।

চায়না কয়েক দফা ছুটি বৃদ্ধি করেছে, তারা ছুটি বাড়ানোর কারণে গার্মেন্টস প্রোডাক্টসে গ্যাপ হতে পারে কী না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা আবার ছুটি বাড়ালে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টস সেক্টরের ব্যবসায়ীরা কী রিপোর্ট দেয় সেটি দেখতে হবে। রাতারাতি এ সেক্টরে বিকল্প মার্কেট পাওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সে দেশেই মৃত্যু হয়েছে ৯০৮ জনের। এছাড়া ফিলিপাইন ও হংকংয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও দু’জনের। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সোমবার পর্যন্ত এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ৯১০ জনের প্রাণ। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

চীনের বাইরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ আরও ২৭টি অঞ্চল বা দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এক্ষেত্রে চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এ ভাইরাসের প্রভাবে চীনা নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশটি থেকে মালামাল আমদানি-রপ্তানিতেও অনেক দেশ আগ্রহ হারাবে।

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

চীনে করোনাভাইরাস : বিকল্প বাজারে নজর সরকারের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, চীনে করোনাভাইরাস সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প বাজারে নজর রেখেছে সরকার। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ-কানাডা বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। বাংলাদেশে সফররত কানাডার সাচকাচোয়ান প্রদেশের কৃষিমন্ত্রী এইচ ই ডাভিড মারিটের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ পিয়াজ আমদানি হয়, এতে চায়না থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ হলেও সমস্যা হবে না। আদা-রসুনসহ অন্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়নার বিকল্প বাজারে নজর রাখছে সরকার।’

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাণিজ্যে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনই বলার সময় হয়নি কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। আমাদের অনেক আইটেম আছে যেগুলো চায়নার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে রেডিমেট গার্মেন্টসের অধিকাংশ ফেব্রিকস চায়না থেকে আসে, এটার ওপর প্রভাব পড়ছে কী না দেখতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। কারণ এখন চীনে শুধু একটি প্রদেশেই সমস্যা হচ্ছে। তারপর এখন ওদের বার্ষিক ছুটিও চলছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষতির বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছে জানতে চেয়েছি। তারা এ বিষয়ে জানাতে দু-তিন দিন সময় চেয়েছে। আশা করছি আজকের মধ্যে তারা হয়তো একটা আইডিয়া দিতে পারবেন, সত্যিকারার্থে কোন ক্ষতি হবে কী না।’ চায়না থেকে পিয়াজ আমদানি করতে না পারলে সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পিয়াজ আসছে মায়ানমার, টার্কি, মিসর ও পাকিস্তান থেকে। চায়নার জন্য পিয়াজের বাজারে প্রভাব পড়বে না। তবে রসুন-আদাসহ অন্য মসলার সমস্যা হবে কী না সেটি দেখছি। সমস্যা হলে আমাদের বিকল্প মার্কেটে যেতে হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি যে, কী ধরনের সমস্যা আসতে পারে।

এফবিসিসিআইকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল তারা কোন প্রতিবেদন দিয়েছে কি না? জবাবে টিপু মুনশি বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করে সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর শুক্র, শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় তারা হয়তো দেরি করছে। গার্মেন্টস সেক্টরের যারা ব্যবসায়ী তারা জানেন যে, এ সময়টায় তাদের কোন আমদানি হবে না। কারণ এ সময় চায়নায় ছুটি থাকে। তাদের কোন ইমপোর্ট হবে না। ১৩ তারিখ সেখানকার ছুটি শেষ হলে বোঝা যাবে প্রভাব পড়বে কি না।

রসুনের দাম ১২০ থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সিরিয়াসলি নজর রাখছি। পিয়াজেও সুযোগ নিয়েছিল, এখনও ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। সমস্যা একটু হলেই তারা সুযোগ নেয়। আজও আমরা এ বিষয়টি নিয়ে নিজেরা বসে করণীয় ঠিক করতে চাই। আদা-রসুন নিয়ে কী করা যায়, সেটা আজ আলোচনা করব।

চায়না কয়েক দফা ছুটি বৃদ্ধি করেছে, তারা ছুটি বাড়ানোর কারণে গার্মেন্টস প্রোডাক্টসে গ্যাপ হতে পারে কী না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা আবার ছুটি বাড়ালে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টস সেক্টরের ব্যবসায়ীরা কী রিপোর্ট দেয় সেটি দেখতে হবে। রাতারাতি এ সেক্টরে বিকল্প মার্কেট পাওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সে দেশেই মৃত্যু হয়েছে ৯০৮ জনের। এছাড়া ফিলিপাইন ও হংকংয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও দু’জনের। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সোমবার পর্যন্ত এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ৯১০ জনের প্রাণ। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

চীনের বাইরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ আরও ২৭টি অঞ্চল বা দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এক্ষেত্রে চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এ ভাইরাসের প্রভাবে চীনা নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশটি থেকে মালামাল আমদানি-রপ্তানিতেও অনেক দেশ আগ্রহ হারাবে।